একটু ব্যায়াম একটু নিয়ম

প্রতিদিনের জীবনযাপনে একটু নিয়ম মানা, পরিমিত, আহার আর একটু ব্যায়াম দেবে ফুরফুরে নির্ভার জীবন। মডেল: জুডি, ছবি: সৈকত ভদ্র
প্রতিদিনের জীবনযাপনে একটু নিয়ম মানা, পরিমিত, আহার আর একটু ব্যায়াম দেবে ফুরফুরে নির্ভার জীবন। মডেল: জুডি, ছবি: সৈকত ভদ্র

বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেন। আর গাড়ি থেকে নেমে অফিস। বাড়ির গৃহিণী দিনের একটা বড় সময় কাটান টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখে। বাইরে থেকে কেনা পেস্ট্রি, পিৎজা, পনির, পরোটা খান আর টিভি দেখেন। রাতটা কাটে কম্পিউটারে, সারা রাত চলে চ্যাটিং আর ফেসবুকিং। কেউ কেউ লেখাপড়া শুরু করেন রাত ১২টার পর। সকালবেলা দেরি হয়ে যায় উঠতে, কোনোমতে জামাকাপড় পরে নাশতা না করেই ছুট। ক্যানটিনে তেলে ভাজা খাবার খাওয়া তো আছেই। 
এই হলো অনেক পরিবারের দৈনন্দিন চিত্র। ফলাফলে ওজন যন্ত্রের পাল্লা বেড়ে যায়। দুই দিন পর পর ছুটতে হয় চিকিৎসকের কাছে। এখানেও দেখা যায় অযত্ন। চিকিৎসকের পরামর্শ ঠিকমতো মেনে না চলা। ওষুধটা সময়মতো না খাওয়া। কিছুদিন পর আবার এক চিকিৎসক থেকে আরেক চিকিৎসকের পেছনে ছোটা। শহুরে পরিবারগুলোতে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমহীনতা, ওজন বাড়া আরও নানা অস্বাস্থ্যকর বদভ্যাস প্রত্যেককে ঠেলে দিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চর্বির আধিক্য ও হূদেরাগের মতো নানা মারাত্মক রোগবালাইয়ের দিকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এসব অসংক্রামক ব্যাধি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৬০ শতাংশ অকালমৃত্যুর কারণ।যে হারে এই রোগগুলো বাড়ছে তাতে ২০২০ সাল নাগাদ ৭৩ শতাংশ মৃত্যুরই কারণ হবে এসব। অথচ সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল জীবনধারা পাল্টে দিতে পারে এই চিত্র।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, রোগ হয়ে যাওয়ার পরে সচেতনতার চেয়ে আগে সচেতন হওয়াটা বেশি জরুরি। সুস্থ থাকতে এবং অল্প বয়স থেকেই এসব রোগ প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে। আর এ জন্য চাই স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণের পক্ষে ব্যাপক জনসচেতনতা। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত পরিশ্রম, ধূমপান বর্জন, পরিমিত ও সময়মতো আহার ও ঘুম ইত্যাদি অভ্যাস রপ্ত করে নিশ্চিত করা যায় নিজের ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্য।
খাবার হবে স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত: গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে ব্যাপক। বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগেরই পছন্দ উচ্চ ক্যালরিযুক্ত ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিমজাতীয় খাবার। বড়রাও কম যান না। তৈলাক্ত ভাজা-পোড়া ও দোকানের কেনা খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। রেস্তোরাঁগুলো জমজমাট। বেশির ভাগ বাড়িতে ছোটদের মাংস ছাড়া কিছু মুখে রোচে না। আর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যে। হচ্ছে ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরল, হূদেরাগ। এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও স্থূলতা বাড়ছে।
ব্যায়ামটা না করা: গাড়ি, লিফট, ওয়াশিং মেশিন ও আরও নানা যন্ত্রের ব্যবহার আরাম এনে দিয়েছে বটে, কিন্তু কমিয়ে দিয়েছে কায়িক শ্রম। ন্যূনতম পরিশ্রমের অভাবে মেদ জমছে শরীরে, বাসা বাঁধছে নানা রোগ। অফিসে সারাটা দিন বসে থেকে বাড়ি ফিরেও অনেকে গা এলিয়ে দিচ্ছেন টিভি বা কম্পিউটারের সামনে। ১০ কদম হেঁটে কাঁচাবাজার করার চেয়ে গাড়ি নিয়ে সুপারশপে যেতেই আরাম। করি করি করেও করা হচ্ছে না ব্যায়াম। ফলে কালকের জন্য বসে না থেকে আজ থেকেই শুরু করুন ১৫ মিনিট করে হাঁটা। দিনে দিনে বাড়িয়ে নিন এই সময়।
অনিয়ম আর অনিদ্রা: সময়মতো না খাওয়া, যখন-তখন খাওয়া, রুটিনের নিত্য ব্যত্যয় আর রাতের পর রাত জাগা। ফলাফলে শরীরে জমে মেদ। দেখা দেয় অনিদ্রাসহ নানা সমস্যা। তাই শরীর ঠিক রাখতে পরিমিত ও সময়ানুবর্তী আহার, পর্যাপ্ত ও সময়মতো ঘুম এবং একই ধরনের রুটিন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এও বলছে যে উন্নয়নশীল বিশ্বের বিশাল সংখ্যক পরিবার অসুস্থতাজনিত এই অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে গিয়ে আরও দরিদ্র হবে। তাই হার্ট অ্যাটাক বা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা কেন? বরং আজ থেকেই না হয় সচেতন হই নিজের সম্পর্কে। নিজেকে ভালো রাখার জন্য চিকিৎসকের পেছনে না ছোটার জন্য মনকে প্রফুল্ল রাখুন। কর্মক্ষেত্র বা বাড়িতে বাড়তি চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। আর সময় পেলেই পরিবার ও নিজেকে সময় দিন।