মনের জানালা

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

মেহতাব খানম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।—বি. .

সমস্যা: আমি সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। ওর পরিবারের আর্থিক অবস্থা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা জানতাম, আমাদের বিয়ে করতে হলে অনেক লেখাপড়া করতে হবে এবং অনেক বাধাও পার হতে হবে। গেল বছর পর্যন্তও আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। কিন্তু সাত-আট মাস আগে বাড়িতে জানাজানি হওয়ার পর ও হঠাৎ আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সে বলেছে, আমাদের মধ্যে এমন কিছু হয়নি যে ভুলে যাওয়া যাবে না। আমি এখনো বিশ্বাস করি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আবার আমার এক বন্ধু আমাকে অনেক ভালোবাসে, কথাটা আমি এক বছর আগে জানতে পারি। আমার বন্ধু আমার জন্য অনেক পাগলামি করে। সে যদিও আমাকে আগে কখনো বলেনি। আমি এখন আমার এই বন্ধুটির ভালোবাসা বুঝতে পারছি। আমি যোগাযোগ না করলে সে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। আমি তাকে বলেছি, সে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাড়িতে প্রস্তাব দিলে আমি না করব না। সে ঠিক আছে। কিন্তু আমি কি ঠিক করছি? আমি তো আমার প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে পারছি না।

পরী

পরামর্শ: আমার মনে হচ্ছে, তুমি এখনো ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারনি। খুব ছোট বয়সে সম্পর্ক তৈরি হলেও সেটি একটি স্থায়ী রূপ নিয়েছিল। হতে পারে, ছেলেটির পরিবার খুব শক্ত একটি অবস্থান নিয়েছে। পরিবারকে মোকাবিলা করার মতো মানসিক শক্তি বা সাহস কোনোটিই হয়তো ছেলেটির নেই। জানি, এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া কঠিন। তুমি নিজেকে এই বলে বোঝাতে পারো যে অনেকেই পরিবারের ইচ্ছার কাছে তাদের ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দেয়, দেয় না? তোমার যে বন্ধুটির কথা লিখেছ, সে কি জানত না যে তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসো? তাকে কিন্তু নিজেরই চেষ্টা করতে হবে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলে সে যদি পড়াশোনা ছেড়ে দেয়, সেই দায়িত্ব তোমার নয়। মনে রাখবে, আমাদের সবার প্রথম দায়িত্ব আমাদের নিজের প্রতি। তুমি বন্ধুটিকে সরাসরি বলো যে, শর্ত দিয়ে এবং পাগলামি করে ভালোবাসার সম্পর্ক বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। তুমি নিজেকে বারবার প্রশ্ন করে বোঝার চেষ্টা করো, আগের সম্পর্কটি থেকে তুমি আদৌ বেরিয়ে আসতে পেরেছ কি না। তা যদি না হয়, তাহলে নতুন করে এই বন্ধুটির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ো না। এতে নিজেকে এবং সেই সঙ্গে বন্ধুটিকেও ঠকানো হবে।

সমস্যা: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। আমরা একে অপরকে জীবনসাথী হিসেবে গ্রহণ করি। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন সে আমাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল। বলল, ‘আমাকে বাঁচাও। তুমি আমাকে আজই বিয়ে করো।’ পরে জানতে পারলাম, সে অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি আমি আমার পরিবারকে সহজভাবে বোঝাতে চেয়েছি। কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে চাইল না। তারা বলছে, গর্ভের সন্তান আমার না হয়ে অন্য কারও তো হতে পারে। এ ছাড়া এ কথাও বলেছে, তাকে বিয়ে করলে আমার বাবা আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবে।

শুভ

পরামর্শ: যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। এটি আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধেরও পরিপন্থী বলে তোমার পরিবার এত বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তবে তাদের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলব যে এতে মেয়েটির প্রতি খুব অবিচার করা হচ্ছে। যেহেতু তাদের ছেলের ভুলের কারণেও এটি ঘটেছে, তাই মেয়েটির প্রতি সংবেদনশীলতা দেখানো তাদের কর্তব্য। আর তোমার তো এই সংকটের সময় মেয়েটির পাশে অবশ্যই থাকা উচিত। কীভাবে তুমি এই অসহায় মুহূর্তে তাকে সহায়তা দেবে, সেটি তোমাকেই বুঝে নিতে হবে। তোমাকে হতে হবে আরও সাহসী। পরিবার তোমাকে ত্যাগ করলেও তুমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে দৃঢ়ভাবে বলো যে তুমিও ওর এই অবস্থার জন্য শতকরা ৫০ ভাগ দায়ী। যেকোনো অবস্থাতেই ওকে তুমি সব ধরনের সহায়তা দিতে পিছপা হবে না। পরিবারের লোকজন যদি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে, তাহলে নিশ্চয়ই একদিন তোমার প্রতি তারা সদয় হবে, এই আশা রাখছি।