প্রয়োজন দক্ষ পেশাজীবী

প্রথম আলো জবসের সেমিনারে আসা শিক্ষার্থীদের কয়েকজন
প্রথম আলো জবসের সেমিনারে আসা শিক্ষার্থীদের কয়েকজন

পড়াশোনা শেষে একটি ভালো চাকরি সবারই লক্ষ্য। কিন্তু, এই চাকরির ক্ষেত্রে নিজেদের একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখার অর্থ হচ্ছে নিজের ভবিষ্যৎকে সংকীর্ণ করে ফেলা। সাধারণ প্রথাগত ক্ষেত্রের বাইরে এমন অনেক চাকরি আছে, যেগুলো ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য দারুণ উপযোগী বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প যেমন দেশ ও জাতির জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করছে, ঠিক তেমনি এই খাত চাকরিপ্রার্থীদের জন্য দারুণ সম্ভাবনার অনুষঙ্গ হিসেবে ইতিমধ্যেই দাঁড়িয়ে গেছে। প্রথম আলো জবস সম্প্রতি বাংলাদেশে চাকরির বাজার হিসেবে তৈরি পোশাক খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করেছিল।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রথম আলো জবস যৌথভাবে আয়োজন করতে যাচ্ছে একটি ক্যারিয়ার মেলা। তারই পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আয়োজন করা হয়েছিল এই সেমিনার। নতুন চাকরিপ্রার্থীদের সামনে নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করাই ছিল এই সেমিনারের উদ্দেশ্য। প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মধুমতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক এবং প্রথম আলোর অন্যতম বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মকর্তা পর্যায়ের বেশির ভাগ স্থান বিদেশিরা দখল করে আছে বলে জানালেন মধুমতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক। এ ক্ষেত্রে দেশের তরুণ মেধাবীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ যথেষ্টই বলে অভিমত তাঁর, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মকর্তা

পর্যায়ের বিভিন্ন উচ্চপদে বাংলাদেশের তরুণ-মেধাবীদের কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’ রুবানার মতে, ‘এটি চাকরির একটি লোভনীয় ক্ষেত্র, ব্যাপারটি সম্পর্কে জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে বলেই তরুণেরা এতে আগ্রহী হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সচেতনতা জরুরি।’

তৈরি পোশাক খাতে দক্ষ পেশাজীবী তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়-পর্যায়ে এ সংক্রান্ত পাঠ্যক্রম চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন রুবানা। এই খাত নিয়ে যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি হলে দক্ষ পেশাজীবীর অভাব খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

শওকত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ একটি বাণিজ্যনির্ভর দেশ। আর এই দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এই খাতকে পেশা হিসেবে নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাতে এখন কারখানার নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশ নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ হয়েছে। তাই তরুণসমাজ সচেতনভাবেই এই খাতে পেশাগত জীবন গড়ে তুলতে আগ্রহী হচ্ছে।

সেমিনারে এসেছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাকিল চৌধুরী। তৈরি পোশাক খাত নিয়ে তাঁর আগ্রহই তাঁকে টেনে এনেছিল এই সেমিনারে। এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক বিরূপ ধারণা আছে বলে মনে করেন তিনি। শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের যে সুযোগ তৈরি পোশাক খাতে রয়েছে, এই সেমিনারের মাধ্যমে সে ব্যাপারটি সবার সামনে চলে আসবে বলেই ধারণা তাঁর।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রাজিয়ার প্রশ্ন ছিল যে শিল্প খাতে কর্মীর ৮০ শতাংশই নারী, সেখানে উচ্চপদে কোনো নারী কাজ করেন না কেন।

উত্তরে বেরিয়ে এসেছে, এই খাতে পেশাগত জীবন তৈরির ব্যাপারে তরুণদের জ্ঞানের অভাবই। রাজিয়ার প্রশ্নের জবাবে রুবানা হক বলেন, শিক্ষিত নারীরা এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন না বলেই এ মুহূর্তে উচ্চপর্যায়ে কোনো নারী নেই।

খাতটি সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাবেই এমনটি হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়িই ব্যাপারটিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদ উঠে এসেছে সেমিনারে।