ছুটির দিনে জম্পেশ কেনাকাটা

ঈদের কেনাকাটা করতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের ছিল উপচে পড়া  ভিড়। ছবিটি গাউছিয়া মার্কেট থেকে তোলা ষ প্রথম আলো
ঈদের কেনাকাটা করতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছবিটি গাউছিয়া মার্কেট থেকে তোলা ষ প্রথম আলো

দৃশ্যটা অতি পরিচিত। দোকানিদের ডাকাডাকি, ফুটপাতের হকারদের এক দামে বিক্রির হাঁকডাক, মানবজটে আটকে পড়া গাড়ির হর্ন।গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন দুপুরে মালিবাগের মৌচাক মার্কেটের সামনে এমন শোরগোল আবারও মনে করিয়ে দিল, আনন্দের ঈদ অতি নিকটে। পবিত্র রমজানের অন্য তিনটি শুক্রবারের চেয়ে ঢাকায় গতকালের শুক্রবার ছিল বেশ আলাদা।চাঁদের হিসাবে হাতে আছে আর কয়েকটা দিন। যদি রোজা ৩০টি হয়, তাহলে আরও একটি শুক্রবার পাওয়া যাবে। নয়তো গতকালই ছিল রমজান মাসের শেষ জুমা। জুমায় মসজিদে উপস্থিতি ছিল বিপুল।শহরজুড়ে ভিড়টা কেমন ছিল, তা গতকাল দুপুরে মতিঝিল অফিসপাড়ার উদাহরণ দিলে সহজেই বোঝা যাবে। মাসের অন্য শুক্রবারগুলোতে দুপুর ১২টার দিকে এই এলাকায় থাকে সুনসান নীরবতা। কিন্তু গতকাল দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। শেয়ার মার্কেটের সামনে থেকে শাপলা চত্বর, এমনকি দিলকুশা এলাকায়ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে ছিল লক্ষণীয় ভিড়। এ ছাড়া কেনাকাটার এলাকা, বিশেষ করে নিউমার্কেট, গাউছিয়া, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল, ধানমন্ডির মিরপুর রোড ও সাতমসজিদ রোড, গুলিস্তান, মৌচাক, নয়াপল্টন, শান্তিনগর এলাকায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। এসব এলাকায় যথারীতি যানজটও সৃষ্টি হয়েছিল প্রচণ্ড। বিপণিবিতানগুলো খোলা ছিল গভীর রাত পর্যন্ত। বাস্তবিক অর্থে রাজধানীবাসীর গতকাল দিনের বেশির ভাগ সময় গেছে বিপণিকেন্দ্রগুলোতে এবং এর সামনের রাস্তায়। কেনাকাটার পর্ব সারতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলেন বেশির ভাগ মানুষ।হাতে সময় আর বেশি নেই। এখন দরদাম করে পছন্দের পোশাকটি কিনে ফেলাই লক্ষ্য। বাজারে বিচিত্র পোশাকের সমাহারে পছন্দের সমস্যা নেই। সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। গতকাল ছিল গায়ে জ্বালা দেওয়ার মতো গরম। মাথার ওপরে খররোদ। আর পথে দুর্বিষহ যানজট। এর ভেতরেই চলছে কেনাকাটা। বিকেলে নিউ এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি জুতার দোকানে গিয়ে দেখা গেল, বিক্রেতাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। রাজধানী বাসাবো এলাকা থেকে এসেছেন তিন সহোদর—আশিক, আতিক ও আরমান। বড় ভাই আশিক জানালেন, তিনি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি করেন। শুক্রবার ছাড়া কেনাকাটা করতে বের হওয়াও মুশকিল। গত বৃহস্পতিবার বেতন ও বোনাস হয়েছে। এ কারণে গতকাল ছোট দুই ভাইকে নিয়ে এসেছেন জুতা কিনতে। লিমা সুজের রুহুল আমিন বললেন, ‘দুপুরে জুমার পর থেকে দোকানে ক্রেতার চাপ হঠাৎ  করে বেড়ে যায়। এসি থাকা সত্ত্বেও দোকানে প্রচণ্ড গরম। এখন বেশি দাম না চেয়ে কম লাভে এক দামে বিক্রি করছি আমরা।’

মিরপুর রোডে ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাতে সারা বছরই থাকে সস্তা পোশাকের পসরা। ঈদের হাওয়া সেখানেও। শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবির বিশাল পসরা। ১৬০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পছন্দের পোশাক কেনা যাবে এখানে। নিম্নমধ্যবিত্তের কেনাকাটার এই এলাকায় গতকাল লোকসমাগমও ছিল বিপুল। এই রাস্তায় গতকাল প্রায় সারা দিনই যানবাহন আর মানুষের ভিড় ছিল। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

বেচাকেনার এই মহাযজ্ঞ চলবে চাঁদরাত পর্যন্তই। সময়-সুযোগ, সামর্থ্য আর পছন্দের নানা সমীকরণ মেলাতে কেনাকাটা চলে শেষ মুহূর্ত অবধি।