রাঁধেন চুলও বাঁধেন

পরিবার আর বন্ধুদের মধ্যে ভালো রান্নার জন্য সুনাম আছে রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খানের। ছবি: কবির হোসেন
পরিবার আর বন্ধুদের মধ্যে ভালো রান্নার জন্য সুনাম আছে রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খানের। ছবি: কবির হোসেন

তাঁর হাতের রান্না অসাধারণ। একবার খেলেই মুখে স্বাদ লেগে থাকে। এমন কথা শোনা গেল পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই। তিনি খাবার রান্না করলে বাড়িতে সেদিন উৎসবের আমেজ। হাতে হয়তো তাঁর সত্যিই জাদু আছে। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় মেয়েরা হয়ে ওঠেন অপূর্ব। রান্নাও যেন তেমনি। রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান নিজের এমন প্রশংসা শুনে মুচকি হাসেন। বলেন, ‘আমি যখন যেটা করি, মনোযোগ দিয়ে করি। বিয়ের আগে মা কখনো রান্না করতে দিতেন না। বলতেন, হাত নষ্ট হয়ে যাবে। বিয়ের সময় রান্না ও পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবীরের রান্না খাদ্য পুষ্টি বইটি সঙ্গে নিয়ে আসি। সব রান্নাই তাঁর রেসিপি বই দেখে করতাম। আর মা তো ছিলেনই। কিছু জানার দরকার হলে টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করে নিতাম।’ ঈদের দিন ঐতিহ্যবাহী খাবার পছন্দ করেন কানিজ আলমাস খান। একই সঙ্গে নিত্যনতুন নানা ধরনের পদও রাঁধেন। পোলাও, আচার দিয়ে গরুর মাংস, মুরগির ঝাল মাংস, খিচুড়ি এবং সেমাই ও জর্দা ঈদের দিন রান্না করেনই।

ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে এই রান্না হতো। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে তিনি নিজে এসব রান্না করেন। তাঁর মতে, নিত্য নতুন খাবারের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের সঙ্গেও পরিচিত করে তুলতে হবে। তাই ঈদের খাবারেও নতুন-পুরোনোর মিশেল থাকে।

তিনি নিজে অবশ্য ঈদের দিন জর্দা ও দইবড়া খেতে ভালোবাসেন। একমাত্র মেয়ে দিশার জন্য রাঁধেন মুরগির কোরমা।

ঈদের আগের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁর রূপচর্চাকেন্দ্রগুলোতে ভিড় থাকে। তাই বাড়ি ফিরেই রাত তিনটা-চারটা পর্যন্ত রান্না করেন। ঈদের দিন সকালে উঠেও আরও কিছু নতুন পদ রাঁধেন। এভাবেই শুরু হয় তাঁর প্রতিটি ঈদ।

নকশার পাঠকদের জন্য ঈদের রেসিপি দিয়েছেন কানিজ আলমাস খান

মুরগির মাখা রোস্ট
মুরগির মাখা রোস্ট

মুরগির মাখা রোস্ট

উপকরণ: মুরগি ২টা, আদা বাটা দেড় চা-চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা-চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, জিরা বাটা দেড় চা-চামচ, জরিত্রী-জায়ফল বাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই ৩ টেবিল চামচ, লাল মরিচ বাটা ১ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, চিনি সামান্য পরিমাণ, কাঠবাদাম বাটা ১ চা-চামচ, কিশমিশ বাটা ১ চা-চামচ ও ঘি দেড় কাপ।

প্রণালি: মুরগি টুকরা করে আদা বাটা, কাঁচা মরিচ বাটা ও লেবুর রস দিয়ে মেখে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর মুরগির টুকরাগুলো ঘিয়ে হালকা ভেজে তুলে রাখতে হবে। আলাদা পাত্রে লাল মরিচ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা, জয়ফল-জয়ত্রী বাটা, টক দই ও পেঁয়াজ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে মসলা তৈরি করতে হবে। আলাদা পাত্রে ঘিয়ে বেশি করে পেঁয়াজ ভাজতে হবে। পেঁয়াজের রং বাদামি হয়ে এলে আগের তৈরি করা মসলা দিয়ে দিন। এবার ভালো করে কষান। এখন মুরগির টুকরা এই কষানো মসলায় মেখে ১৫-২০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। আরেকটি পাত্রে কাঠবাদাম বাটা, কিশমিশ বাটা ও দুধ মিশিয়ে মুরগির পাত্রে ঢেলে দিন। মাংসের ওপর তেল উঠে এলে চিনি সামান্য পরিমাণে দিন। নামানোর পরে বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন করুন।

গরুর আচার মাংস
গরুর আচার মাংস

গরুর আচার মাংস

উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, টক দই ১ কাপ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ধনে বাটা ১ চা-চামচ, জিরা বাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, গরম মসলা পরিমাণমতো, তেজপাতা তিন-চারটি, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ বাটা দেড় কাপ, কাঁচা আমের টক আচার ৩ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, পাঁচফোড়ন সামান্য পরিমাণ।

প্রণালি: টক দই, আদা বাটা, রসুন বাটা, ধনে, জিরা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, পেঁয়াজ বাটা ও লবণ মাংসের সঙ্গে মাখিয়ে নিন। এবার পেঁয়াজ তেলের মধ্যে ভেজে তাতে পাঁচফোড়ন, গরম মসলা ও তেজপাতা দিতে হবে। মাংস ঢেলে দিয়ে কষিয়ে নিন। মাংস সেদ্ধ হলে আচারের তেল ও আচার, সরিষার তেল ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে দিন মাংসের পাত্র। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রেখে নামিয়ে ফেলুন।

পোলাও
পোলাও

পোলাও

উপকরণ: পোলাও চাল ১ কেজি, পানি দেড় লিটার, লবণ পরিমাণমতো, গরম মসলা পরিমাণমতো, দুধ আধা লিটার, আদা বাটা দেড় টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ৫-৬টা ও ঘি এক কাপ। প্রণালি: ঘিতে পেঁয়াজ ভেজে নিয়ে বেরেস্তা করতে হবে। এরপর আলাদা পাত্রে ঘিয়ের মধ্যে চাল, আদা বাটা, গরম মসলা ও লবণ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। এবার দেড় লিটার পানিতে দুধ দিয়ে জাল দিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ চালের মধ্যে দিতে হবে। এবার ঢাকনা দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে দিন। পোলাও সেদ্ধ হলে আগুনের আঁচ কমিয়ে দিন। কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দমে দিতে হবে। অল্প কিছুক্ষণ পর নামিয়ে নিন। পরিবেশনের সময় পেঁয়াজের বেরেস্তা ওপরে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

লাচ্ছা সেমাই

উপকরণ: লাচ্ছা সেমাই ১ প্যাকেট, দুধ ২ লিটার, গরম মসলা পরিমাণমতো, ঘি ১ কাপ, চিনি ১ কাপ, জাফরান, বাদাম ও কিশমিশ পরিমাণমতো।

প্রণালি: দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। এরপর এতে গরম মসলা, চিনি, ঘি ও ভেজানো জাফরান দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। একটু নেড়েচেড়ে হালকা ঠান্ডা করে নামিয়ে নিন। আলাদা পাত্রে লাচ্ছা সেমাই দিয়ে তাতে এই দুধের মিশ্রণ ঢেলে দিন। পরিবেশনের পর বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে দিন।

জর্দা
জর্দা

জর্দা

উপকরণ: পোলাও চাল আধা কেজি, পানি ২ লিটার, খাবারের রং পরিমাণমতো, ঘি ১ কাপ, তেল আধা কাপ, গরম মসলা পরিমাণমতো, কিশমিশ ও মোরব্বা টুকরা আধা কাপ। প্রণালি: প্রথমে পানি গরম করে নিয়ে চাল ঢেলে দিন। এবার খাবারের রং দিতে হবে। চাল সেদ্ধ হয়ে এলে পানি ঝরিয়ে ফেলতে হবে। ননস্টিক প্যানে ঘি, চিনি, চাল ও গরম মসলা নিয়ে এতে চাল দিন। এবার ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। কিশমিশ ও মোরব্বা কেটে দিতে পারেন পরিবেশনের সময়।