কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গির প্রতি গুরুত্ব দিন

সুন্দর করে কথা বলা বা বাচনিক দক্ষতা একজন মানুষের আচরণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দক্ষতাকে পুঁজি করে আপনি কাজের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে জীবনের প্রায় সব পর্যায়েই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারেন। সুললিত কণ্ঠ, সঠিক ও দৃপ্ত উচ্চারণ, গলার আওয়াজের নিয়ন্ত্রিত ওঠানামা এবং প্রাণখোলা হাসিমাখা ভাব বিনিময় করতে পারলে চাকরির প্রতিযোগিতায় সাফল্য আসবেই।
জন্মগতভাবে কেউ কেউ সুন্দর কণ্ঠস্বরের অধিকারী হয়ে থাকেন। তবে বাচনিক দক্ষতা অর্জনের ব্যাপারটি অনেকটাই শিক্ষা ও অনুশীলন বা চর্চার ওপর নির্ভর করে। চাকরির ইন্টারভিউতে আপনি নিজের সুন্দর বাচনভঙ্গি ও উচ্চারণ দিয়ে নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষকে মুগ্ধ করতে পারেন। জোরে জোরে উচ্চারণ করে নিয়মিত পড়া এবং আবৃত্তিচর্চায় যুক্ত হয়ে আপনি নিজের কথা বলার ভঙ্গি উন্নত করতে পারেন। তবে রাতারাতি ব্যাপারটা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অধ্যবসায় ও নিষ্ঠার বিকল্প নেই।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের এই যুগে লিখিত জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর প্রচলন হয়তো শিগগিরই হারিয়ে যাবে। এমন দিন সম্ভবত দূরে নয়, যখন নিজের জীবনবৃত্তান্ত ভিডিওতে ধারণ করে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়ে আপনাকে চাকরি খুঁজতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাচনভঙ্গি এবং নিজের পেশাগত দক্ষতার বিবরণ উপস্থাপনের ব্যাপারে স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে আপনি নির্ঘাত পিছিয়ে পড়বেন। তাই আগে থেকে তৈরি হয়ে নেওয়াটাই নিঃসন্দেহে ভালো। পশ্চিমা বিশ্বের কোনো কোনো দেশে চাকরির প্রতিযোগিতায় ভিডিওচিত্র পাঠানোর প্রচলন ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুল অব বিজনেসের এক গবেষণায় বলা হয়, ভিডিওচিত্রে নিজের সম্পর্কে সুন্দরভাবে বলতে পারলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কর্তৃপক্ষ একজন চাকরিপ্রার্থীর বক্তব্য দেখে তাঁর চিন্তা করার সামর্থ্য, যুক্তিবোধ এবং বুদ্ধিমত্তা যাচাই করে। এ ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে।
জার্নাল অব সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স সাময়িকীতে মার্কিন ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। চাকরি পাওয়ার পরও নিজের সুন্দর বাচনভঙ্গি ও ইতিবাচক আচরণ আপনার সহায়ক হবে সব সময়। অফিসের কর্মিসভা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈঠকে আপনি সেই গুণের প্রকাশ ঘটাতে পারবেন। নেতৃত্ব দেওয়া এবং অন্যের সঙ্গে উপযুক্ত যোগাযোগ স্থাপন করার জন্যও সুন্দর কণ্ঠস্বর আপনাকে এগিয়ে রাখবে। তাই জিবের জড়তা দূর করুন। সামগ্রিক আচরণে যথেষ্ট আন্তরিকতার প্রতিফলন নিশ্চিত করুন। যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলুন। এতে আপনার চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রকাশ ঘটবে। সহজেই অন্যের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।
পেশাগত সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে যেকোনো কথা বলার সময় নিজেকে উজাড় করে দিন। যদি অন্যের সঙ্গে অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারেন, তাঁদের মনের কথা জানতে পারবেন না। তাই কাজটাও সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব হবে না। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে নিয়ে যা বলার স্পষ্ট করে বলুন। অযথা দীর্ঘক্ষণ ধরে কথা বলবেন না, মূল বিষয়ের ওপর জোর দিন। মনটাকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। শুধু যে নিজে বলবেন, তা হবে না। অন্যের কথা ধৈর্য ও মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। আপনার আচরণ বা কথাবার্তায় যেন কোনো অহংকার প্রকাশ না পায়। অন্যের প্রতি সহমর্মিতার বোধ জাগিয়ে তুলুন। সবার সঙ্গে কম-বেশি কথা বলতে হবে এবং যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। তবে দায়সারা বা লোকদেখানো আচরণ নয়, এ ধরনের যোগাযোগে পর্যাপ্ত গুরুত্ব ও মনোযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র: আইএএনএস ও ফোর্বস