৩ কিলোমিটার সড়ক যেন অনন্তপুরের চাষিদের গলার ফাঁস

বাবুগঞ্জ বাজার টু সিদ্দিকালি বাজার পর্যন্ত মাটির তিন কিলোমিটার রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। ছবি: লেখক
বাবুগঞ্জ বাজার টু সিদ্দিকালি বাজার পর্যন্ত মাটির তিন কিলোমিটার রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। ছবি: লেখক

অনন্তপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম একজন মহিষের গাড়িচালক। বিল থেকে এক কৃষকের ধান কেটে তাঁর মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন পাহাড় অনন্তপুর গেরস্তের বাড়িতে। বাবুগঞ্জ সেতুটি পার হলেই পড়েন চরম বিপাকে।

কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় মহিষের গাড়িটি যথারীতি কাদায় আটকে গেল। এমন সময় যা হয়, গাড়িয়াল তার হাতের পাজুন (লাঠি) দিয়ে কষে পিঠে কয়েকটা আঘাত করলেন মহিষ দুটিকে। মহিষ দুটি কোনোমতে কাদা থেকে উঠতে পারলেও সামনে থাকা গর্তে পড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল পাশের আরেকটি মহিষ, আহত অবস্থায় মহিষটিকে দৌড়ে এসে সাধারণ মানুষ উদ্ধার করলেন। এমন ঘটনা নিত্যদিনের ঘটে এই সড়কটিতে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙামাটি ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ বাজার টু সিদ্দিকালি বাজার পর্যন্ত মাটির তিন কিলোমিটার রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি এখন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই পাড়ের হাজারো মানুষের।
যুগের পর যুগ পার হলেও সাধারণ মানুষের দুঃখ–দুর্দশা লাঘবে আদৌ রাস্তাটি সংস্কারে এগিয়ে আসেনি কেউ বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর। যদিও ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট থেকে প্রতিবছর ইট খোয়া মাটি ফেলে কোনোমতো জোড়াতালি দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। তাও বেশি দিন স্থায়ী হচ্ছে না বলে এলাকাবাসী জানান।
জানা যায়, উপজেলার বেশির ভাগ সবজি পাহাড় অনন্তপুর গ্রামে চাষ হয়। অথচ উৎপাদিত পণ্য পরিবহন এবং বাজারজাতকরণে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে এলাকার কৃষকদের। যার ফলে অধিকাংশ কৃষক পাচ্ছেন না তাঁর ফসলের ন্যায্যমূল্যটাও। একটু বৃষ্টি হলেই আর যেন কোনো উপায় থাকে না সবজি বাজারে আনার মতো, তাই কৃষক সময়মতো তাঁর ফসল বাজারে পৌঁছাতে না পেরে খেতেই পচে যাচ্ছে।

গাড়িটি কাদা থেকে উঠলেও সামনে থাকা গর্তে পড়ে আবারও মাটিতে লুটিয়ে পড়ল একটি মহিষ। ছবি: লেখক
গাড়িটি কাদা থেকে উঠলেও সামনে থাকা গর্তে পড়ে আবারও মাটিতে লুটিয়ে পড়ল একটি মহিষ। ছবি: লেখক

পাহাড় অনন্তপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিন, শাহাব উদ্দিন, শামসুল হক, মোস্তফা, শাহজাহান মিয়া বলেন, আমরা জন্মের পর থেকে দেখতাছি রাস্তার এই বেহাল দশা। এই তিন কিলোমিটার রাস্তা কোনো দিন, কোনোকালেই কোনো সরকারের আমলেই পাকা হইলো না। সবাই খালি আশা দিয়া যায় আর খবর নেয় না। এই তিন কিলোমিটার রাস্তার লাইগা আমগর হাজারো মানুষের দুর্ভোগ পোহাইতে হয়, আমরা আমগর সবজি বাজারে আনা–নেওয়া করতে পারি না, একটু বৃষ্টি হলেই আর চলাচল করা যায় না। রাস্তাটা পাকা করার দাবি সরকারের কাছে জানান তাঁরা।
রাস্তাটির বিষয়ে রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী বলেন, উপজেলার একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত হলেও আমার ইউনিয়ন উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছে। আপনি যে রাস্তার কথা বলছেন, সেটিসহ ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলো কাঁচা রাস্তা হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি হয় খুব। তবে জাতীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ নিয়ে আমি নিজে এলজিইডিতে দৌড়াদৌডি করে এই রাস্তা পাকাকরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারই ধারাবহিকতায় পাহাড় অনন্তপুরের এই রাস্তার টেন্ডার হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এলজিইডি ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি, দেখা যাক কবে থেকে কাজ শুরু হয়। মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্যের সুদৃষ্টি আছে এ দিকে।

তিন কিলোমিটার রাস্তা এমন খানাখন্দে ভরা। ছবি: লেখক
তিন কিলোমিটার রাস্তা এমন খানাখন্দে ভরা। ছবি: লেখক

সালিনা চৌধুরী আরও বলেন, এই রাস্তাটিতে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিবছর কাজ করিয়েছেন পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে। গত বছর তিনি পুরো রাস্তাটি ইট ও বালু দিয়ে সুন্দরভাবে সংস্কার করে দেন। তাতে এলাকাবাসী খুব খুশি ছিলেন। কিন্তু রাস্তাটিতে মালবাহী ট্রাক, লরি ইত্যাদি নিয়মিত চলে বিধায় কাঁচা রাস্তাটি বর্ষা মৌসুমে নষ্ট হয়। কোনোভাবেই ভালো রাখা যায় না। মাটির রাস্তা পাকা না হলে এর কোনো স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হয় না। ইউনিয়ন পরিষদে রাস্তা পাকাকরণের কোনো বরাদ্দ নাই। আশা করি, দ্রুত পাকা হয়ে গেলে একটা স্থায়ী সমাধান হবে।
রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য এবং প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রকৌশলী কর্মকর্তা সালমান রহমান রাসেল বলেন, ‘রাস্তাটির টেন্ডার ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, প্রকল্পের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। কাগজপত্র আসা মাত্রই খুব তাড়াতাড়ি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে রাস্তাটির।’

imtiazmyn@gmail