সমুদ্র দেখতে কক্সবাজারে

সাগরপাড়ে ঘোরাঘুরি। ছবি: সেলফি
সাগরপাড়ে ঘোরাঘুরি। ছবি: সেলফি

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই বলতে গেলে অবসর সময়ই পার করছি। এ সময়ে আমার মাথায় মাঝেমধ্যে চলে আসে বিভিন্ন অতীত সব ঘটনা বা চিন্তা। তার মধ্যে যে বিষয়টি আমার কাছে আকর্ষণীয় লেগেছে, সেটি হচ্ছে মামার সঙ্গে প্রথম কক্সবাজার ভ্রমণ। এই ভ্রমণ নিয়েই আমার কিছু স্মৃতিচারণা।

সময়টি ছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাস। পরীক্ষা প্রায় শেষ হওয়ার পথে। আমার মামা হঠাৎ আমাকে ফোন দিল। কক্সবাজার যাবে, এ জন্য আমাকে প্রস্তুতি নিতে বলল। আমি মামার কথায় তেমন একটা কর্ণপাত করলাম না। কেননা এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমি আরও আগেও হয়েছি। যা–ই হোক আমি বললাম আচ্ছা আমি সব সময় প্রস্তুত। তার পরের দিন আবারও ফোন পেলাম এবং এবার আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কেননা সব জল্পনাকল্পনা শেষে মামা বললেই ফেলল, এত তারিখ ট্রেনের টিকিট কেটেছি। তুইও কেটে রাখ। যা–ই হোক, এটা শোনার পর আমার মনটাও প্রফুল্ল হয়ে উঠল, কেননা এটা আমার জীবনের প্রথম কক্সবাজার ভ্রমণ। মামা যে ট্রেনের টিকিট কেটেছে আমি ওই ট্রেন এবং ওই তারিখের টিকিট কেটে নিলাম। যদিও আমার আর মামার স্টেশন ছিল ভিন্ন।

যাত্রা শুরুর দিন। অনেক আগ্রহ ও কৌতূহল নিয়ে স্টেশনে গেলাম। কেননা দীর্ঘদিনের ইচ্ছেটা পূরণ হতে যাচ্ছে। স্টেশনে গিয়ে আমি জানতে পারলাম ট্রেন দুই ঘণ্টা লেট। নিরুপায় হয়ে বসে থাকলাম প্ল্যাটফর্মে। আমি বসে থাকা অবস্থায় একে একে পাঁচটি ট্রেন দুই ঘণ্টার মধ্যে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়। রাত সাড়ে ১২টার ট্রেন এল রাত তিনটায়। আমি উঠে গেলাম আমার বগিতে। ট্রেন চলতে শুরু করল। আমার আর মামার বগি ভিন্ন থাকার ফলে আমি যাই মামা যে বগিতে আছে ওই বগিতে মামার সঙ্গে দেখা করতে। দীর্ঘ এক বছর পর মামাকে দেখতে পেয়ে ভালোই লাগল। বলে রাখি, মামা শুধু একা ছিল না, তার গোটা পরিবারসহ ছিল ছয়জন। ট্রেন চলছে আর আমরাও গল্পগুজবে মেতে আছি। সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছালাম। সেখান থেকে নাশতা করে উঠে পড়লাম কক্সবাজারের বাসে। দুপুর ১২টায় আমরা কক্সবাজার পৌঁছালাম। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে নেমে সাগরের চোহারা দেখতে পেলাম না। তারপর অটোরিকশাওয়ালা মামা বলল এখান থেকে সাগর একটু ভেতরে। ডলফিন মোড়ে এসে দেখতে পেলাম বিশাল সে সাগর। মনে হয়েছে এত দিন পর এসে হয়তো সমুদ্রে ঝাঁপাঝাঁপি করতে পারব। তারপর হোটেলে রুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া সেরে নিলাম। বিকেলবেলায় আমরা গেলাম সমুদ্রদর্শনে। সমুদ্রের বিশালতা ও ঢেউ দেখে যেন মন জুড়িয়ে গেল। বিকেল থেকে নিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত সাগরেই ছিলাম।

পরের দিন সকাল ৯টায় শুরু হলো আমাদের ইনানী বিচ যাত্রা। একটি অটোরিকশা ভাড়া করে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে চলে গেলাম ইনানী বিচে। সেখানে পাথর, পানির স্বচ্ছতা ও রং ছিল সত্যিই অসাধারণ। আসার সময় হিমছড়ি পাহাড়ে কিছু সময় ছিলাম। পাহাড়ের ওপর থেকে সমুদ্র দেখা সত্যিই দৃশ্যটি অপরূপ ছিল। হোটেলে ফিরে আসলাম বিকেল তিনটায়। খাওয়াদাওয়া শেষ করে মামা, আমি ও মামাতো ভাই মিলে চলে গেলাম সাগরে গোসল বা ঢেউয়ের সঙ্গে ঝাঁপাঝাঁপিতে অংশ নিতে। সত্যি কথা বলতে সেই সময়টা ছিল আমার জন্য অন্য রকম মুহূর্ত। কেননা কক্সবাজারের মূল মজাটাই এখানে। আমি বলব যে কক্সবাজার এসে সমুদ্রে নামেনি তার কক্সবাজার ভ্রমণই বৃথা। বিকেল থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমরা ওখানেই ছিলাম। তারপর ওখান থেকে হোটেলে এসে কাপড়চোপড় পরিবর্তন করে চলে গেলাম ফ্রিশ ওয়ার্ল্ডে। সেখানে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণীর পরিচয় জানতে পারলাম। তারপর ওখানে থেকে কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেটে চলে গেলাম। বেশ কিছু কেনাকাটার পর হোটেলে এলাম।

এরপরের দিন সকালে স্পিডবোটে করে চলে গেলাম মহেশখালী দ্বীপে। সেখানে আদিনাথ মন্দির, স্বর্ণমন্দির, রাখাইনপাড়া ও শুঁটকি বাজার ঘোরাঘুরির পর দুপুরে আমরা কক্সবাজার চলে এলাম। তারপর আবার সেই সাগরে গোসল। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই হোটেলে চলে এলাম। কেননা এদিন ছিল আমাদের চলে আসার দিন। তিন দিনের স্মৃতি আসলে আমার জন্য স্মরণীয় আর মজার মুহূর্ত ছিল। বাস ছাড়ার কিছু সময় আগেও শেষমেশ দর্শন করার জন্য হলেও সৈকতে গিয়েছিলাম।

* শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]