জামালপুরে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানিতে ভেসে যাবে ঈদ আনন্দ

একদিকে বন্যা অন্যদিকে চলছে ভাঙন। ছবি: লেখক
একদিকে বন্যা অন্যদিকে চলছে ভাঙন। ছবি: লেখক

২০২০ দুর্যোগের বছর। নানা ঘাত–প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বছর শুরু হয়েছে। করোনার ধাক্কা, চৈত্র মাস থেকে তীব্র বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় আমফান, ফসলের ক্ষতি। এক দুর্যোগে শেষ না হতেই অন্য আরেকটি দুর্যোগ কাঁধে ভর করেছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে গেছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ।

এই দুর্যোগের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা এসে ভর করেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর অন্যতম। এই জেলায় সাতটি উপজেলা রয়েছে। সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্রতি বছরই যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়। একদিকে বন্যা, অন্যদিকে নদীভাঙন। ১৯৮৮ সালের বন্যার সঙ্গে এ বছরের বন্যা তুলনা করছেন অনেকেই।

প্রতিবছরে জামালপুরে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির হিসাব চুকাতে হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। প্রতিবার বন্যা আসে আবার চলে যায় কিন্তু এ বছর বন্যার পানি দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ চরমে।

জামালপুরের সাতটি উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়ন এখন বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। পানিতে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। মানুষ সড়কে কিংবা উঁচু কোনো স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও মাঠ দীর্ঘ সময় ধরে পানির ভেতর আবদ্ধ রয়েছে। খাবারের সংকটসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বানভাসি মানুষগুলোর।

যাতায়াতের অভাবে কেউ কোথাও বের হতে না পারছে না। কর্মহীন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। তার মধ্যে আবার করোনার চিন্তা মাথার ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে আছে বানভাসিদের। বানভাসিদের পাশে নেই কোনো প্রতিনিধি। ত্রাণের জন্য অসহায় মানুষদের আর্তনাদ চোখে পড়ার মতো। শিশু ও বয়স্ক মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। প্রায় সময়ই পানিতে পড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে দেখা গেছে শিশুখাদ্যের অভাব।

এদিকে করোনার পর বন্যায় প্রান্তিক জনপদবাসীদের ঈদ আনন্দ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের করাল থাবা। ফলে বানভাসিদের ঈদ আনন্দ এবার পানির ভেতরে সীমাবদ্ধ। না আছে ঘরে খাবার, না আছে আয়–রোজগার, না আছে পিতা, মাতা, সন্তানাদিদের ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষমতা। রুদ্ধ হয়ে গেছে তাদের জীবন। কষ্টের তীব্রতায় অনেকে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়। দেখা নেই কোনো জনপ্রতিনিধিদের। নেই কোনো মানবিক সহায়তা।

আমাদের মানবিক সহায়তা আজ ক্যামেরায় সীমাবদ্ধ। একজনকে ত্রাণ দিয়ে মানুষকে জানানো হয় আমি ত্রাণ দিয়েছি। এটি ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়। যারা এটি পাওয়ার যোগ্য, তারা খায় গালি, আর যারা অযোগ্য, তারা পায় সেমাই–চিনি। অন্যদিকে দেখা যায়, যাদের বাড়ির আশপাশে বন্যার দেখা নেই, তারা বন্যার ত্রাণ ও টাকা পায়। অথচ যারা বন্যায় ভাসছে, তাদের সবার কাছে পৌঁছায় না সহায়তা বা কোনো মানবিক সান্ত্বনা।

আমরা বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসে তাদের পাশে দাঁড়াই। সামনে ঈদুল আজহা। সামর্থ্যবানেরা নিরুপায়দের পাশে থেকে তাদের মুখে হাসি ফোটাই। যারা কোরবানি দেবেন, একমুঠো খাবার তাদের মুখে তুলে দেবেন। এতে মানুষের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে, বাড়বে নিজের সম্মান। সব ধর্মই বিশ্বাস করে মানবতার সেবাই মুক্তির সোপান। এই ঈদুল আজহায় একে অপরের পাশে থেকে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুঃখগুলো দূরীভূত করি। অসহায় মানুষগুলো ফিরে পাক তাদের হাসি।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া