ভার্জিনিয়ায় শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষ

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের শার্লটসভিলে গত শনিবার কু ক্ল্যাক্স ক্ল্যান (কেকেকে) ও অন্যান্য বর্ণবাদী গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে একজন নিহত ও প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রক্তপাতের ঘটনার নিন্দা করলেও শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের কোনো সমালোচনা না করায় এখন নিজেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

শুক্রবার রাতে কয়েক শত কেকেকে সদস্য দাসপ্রথার কঠোর সমর্থক ও মার্কিন গৃহযুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি জেনারেল রবার্ট লির একটি মূর্তি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জড়ো হয়েছিল। তাদের উপস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করা হলে রক্তাক্ত সংঘর্ষ দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কায় ভার্জিনিয়ার গভর্নর জরুরি অবস্থা জারি করেন। পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে শনিবার বড় ধরনের কোনো মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো গেলেও বিক্ষোভকারীদের ওপর একটি চলন্ত গাড়ি তুলে দেওয়ার ফলে একজন পথচারী নিহত হয় ও ৩২ জন আহত হয়। গাড়ির চালক ওহাইও থেকে আসা একজন শ্বেতকায় যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

রবার্ট লির মূর্তি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি শার্লটসভিলের নগর পরিষদ এ বছরের এপ্রিলে গ্রহণ করে। তখনই কেকেকে ও অন্য শ্বেত শ্রেষ্ঠতবাদীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। চার মাস প্রস্তুতির পর তারা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বৃহত্তম বর্ণবাদী সমাবেশের আয়োজনে সক্ষম হয়। কেকেকের সাবেক সর্বাধিনায়ক ডেভিড ডিউক ছিলেন এই সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শ্বেত বর্ণবাদীরা কেকেকের পতাকা বহন করে সমাবেশে যোগ দেয় ও নাৎসি জার্মানিতে হিটলার সমর্থকদের ব্যবহৃত স্লোগান, ‘ব্লাড অ্যান্ড সয়েল’ ধ্বনি দিয়ে রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। তাদের অনেকের মাথায় ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামাঙ্কিত টুপি।

সমাবেশ থেকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড ডিউক জানান, তারা (অর্থাৎ কেকেকের সমর্থকেরা) ‘নিজেদের দেশ ফিরে পেতে’ বদ্ধপরিকর, শার্লটসভিলের এই সমাবেশ থেকেই তাদের সে আন্দোলন শুরু হবে। তিনি জানান, ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমেরিকাকে তার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেবেন। তাঁর প্রতিশ্রুতির সমর্থনেই এই সমাবেশ।

খোলামেলাভাবে বর্ণবাদী ও শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের সমাবেশ হলেও ট্রাম্প তাদের কোনো সমালোচনা করেননি। কেকেকে বা শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ব কথাটি একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি। সংঘর্ষের কথা জানার পরও তিনি প্রায় ছয় ঘণ্টা নিশ্চুপ থাকেন, এমনকি টুইটারে অতি তৎপর এই প্রেসিডেন্ট তাঁর এই প্রিয় মাধ্যমটিরও কোনো ব্যবহার করেননি। অবশেষে শনিবার বেলা দেড়টার দিকে এক টুইটার বার্তায় তিনি ‘ঘৃণার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানান। এর দুই ঘণ্টা পর এক বিবৃতিতে ট্রাম্প ‘বিভিন্ন পক্ষে’ যে ঘৃণা ও সহিংসতা দেখানো হয়েছে, তার নিন্দা করেন। বিভিন্ন পক্ষ কথাটি তিনি দ্বিতীয়বার জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

বর্ণবাদী গ্রুপসমূহকে চিহ্নিত করে তাদের নিন্দা করতে ব্যর্থ হওয়ায় রিপাবলিকান পার্টির ভেতরেই অনেকে শীর্ষস্থানীয় নেতা ট্রাম্পের নিন্দা করেছেন। সিনেটর মার্কো রুবিও গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে চিহ্নিত করে ট্রাম্পকে ‘শ্বেত শ্বেষ্ঠত্ববাদীদের’ নাম ধরে নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছেন। সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেন, শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা মার্কিন দেশপ্রেম চেতনার বিরোধী। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেত্রী ন্যান্সি পেলসি বলেন, বর্ণবাদীদের সঙ্গে প্রতিবাদরত বিক্ষোভকারীদের এক পাল্লায় দেখে ট্রাম্প আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদের বাস্তবতা উপেক্ষা করেছেন। এটি লজ্জাজনক।

তবে ডেভিড ডিউকের প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন। ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে ‘বিভিন্ন পক্ষের’ সমালোচনা করায় তিনি এক পাল্টা টুইটে লেখেন, ট্রাম্পের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, আমেরিকার শ্বেতকায় মানুষেরাই তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।