নতুন স্বাস্থ্য আইন তৈরির নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প

ওবামাকেয়ার বাতিল করে নতুন স্বাস্থ্য আইন তৈরির জন্য নীতি প্রণয়নের আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি এ নির্বাহী আদেশে সই করেন। এতে লাখো মানুষকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের স্বাক্ষরকৃত এ আদেশ প্রশাসনকে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কম খরচে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে আদেশ করা হয়েছে। এর ফলে কার্যত ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি বাতিল করে তার স্থলে নতুন একটি আইন পুনঃস্থাপনের পথ প্রশস্ত হলো। নতুন এ আইন থেকে কম বয়সী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আমেরিকানরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতার বাইরে চলে যাবেন।

নির্বাহী আদেশটিতে সইয়ের পর হোয়াইট হাউসের রুজভেল্ট রুম থেকে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘এ আদেশের মাধ্যমে ওবামাকেয়ারে আটকে পড়া লাখো আমেরিকান মুক্তি পাবে। এর জন্য সরকারকে প্রকৃত প্রস্তাবে বাড়তি কোনো ব্যয় নির্বাহ করতে হবে না। আবার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করা যাবে। বহু আগেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল।’

ট্রাম্প প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে কয়েকজন মিলে স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজীকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। এর মূল উপকারভোগী হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ আদেশ কার্যকর হলে প্রতিষ্ঠানগুলো তার কর্মীদের জন্য কম খরচে গ্রুপ ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণের বিষয়ে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করবে। একই সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি বিমা প্রকল্প গ্রহণেরও সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে এর মাধ্যমে, যা ওবামাকেয়ারে সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণের অংশ হিসেবে কর্মীদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণের জন্য অর্থ দেওয়ার স্বাধীনতাও ভোগ করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রসঙ্গত, এ দুই ক্ষেত্রেই ওবামাকেয়ার বেশ কঠোর ছিল। কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা করে দেওয়ার একটি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল ওই আইনের আওতায়।
নতুন আইনে আনা পরিবর্তনগুলো কার্যকর হতে ছয় মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সমালোচকেরা বলছেন, নতুন আইনের ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিতের বিষয়টিতে বড় ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করবে। একই সঙ্গে অঙ্গরাজ্যের নজরদারিও কমে আসবে। ফলে স্বাস্থ্যবিমা প্রতিষ্ঠানগুলো এর সুযোগ নিয়ে কম সুবিধা ও প্রিমিয়ামে বিভিন্ন বিমা প্রকল্প বিক্রি করবে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুলনামূলক কম বয়সী ও স্বাস্থ্যবান নাগরিকেরা।
ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ওবামাকেয়ার বাতিল ও তা প্রতিস্থাপন। মার্কিন কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। কিন্তু দ্বিধাবিভক্ত কংগ্রেস এ বিষয়ে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। এ অবস্থায় ট্রাম্প নিজেই মঞ্চে আবির্ভূত হলেন। নির্বাহী আদেশ জারি করলেও এখনো মূল কাজটি কংগ্রেসের। কিন্তু ট্রাম্প এ আদেশ দিয়ে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করলেন।
ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ সম্পর্কে সিনেটের ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা চাক শুমার টুইটার পোস্টে বলেন, কংগ্রেসে ব্যর্থ হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য নিজে মাঠে নেমেছেন।
এ বিষয়ে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ইজেকিয়েল ইমানুয়েল সিএনএনকে বলে, এটা এমন এক বিষয়, যেখানে কিছু করা কিছু না করার চেয়ে ক্ষতিকর। এটি কখনোই সমস্যার সমাধান করবে না।