স্বপ্নের নতুন দ্বার

মধ্যযুগে বাইরের শত্রু, বিশেষ করে মঙ্গল দস্যুরা ঘন ঘন দিল্লি আক্রমণ করত। রাজধানীকে এই আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি থেকে প্রায় হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেছিলেন। ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান সবাইকে দিল্লি ছেড়ে দেবগিরিতে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রজা ও রাজ-অমাত্যরা সেই নির্দেশ মেনে নেন। যদিও শেষ পর্যন্ত সুলতানের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়। সবাইকে নিয়ে আবার দিল্লিতেই ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সেই মধ্যযুগে হাজার কিলোমিটার দূরের দেবগিরিতে পাড়ি জমানো এবং পরে আবার দিল্লিতে ফিরে আসতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে অপরিসীম কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল, অনেকে মারাও পড়েছিলেন।
শোনা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে নাকি অনেক বাঙালি ভালো নেই। কারণ এখানে তাঁদের ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য নেই। প্রতি মাসে বাড়িভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পেছনে যে পরিমাণ ব্যয় হয়, সে পরিমাণ আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেকে নিউইয়র্ক ছেড়ে ৩০০ কিলোমিটার দূরের শহর বাফেলো এবং মিসিগানের হ্যামট্রিক শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন। সেখানে বাড়িভাড়া নাগালের মধ্যে আছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক কম। অদক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিকদের কাজের সুযোগও নাকি বিস্তর, যা নিউইয়র্কে নেই। ইতিমধ্যে অনেক বাঙালি এই দুই শহরে সুখে-শান্তিতে বসবাসও শুরু করেছেন।
এখন যাঁরা নিউইয়র্ক ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চয় অনেক চিন্তাভাবনা করে এবং স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য বটে। কারণ তাঁরা গতানুগতিক চিন্তাধারার আর দশজন বাঙালির মতো এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়ে না থাকার সাহস পেয়েছেন। প্রতিকূল পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বৈশ্বিক হওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। এই চ্যালেঞ্জে তাঁরা সফল হলে অন্যান্য বাঙালির জন্য স্বপ্নের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
তবে এটাও সত্য। যাঁরা নিউইয়র্ক ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নতুন শহরে তাঁদের সফল হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ শ্রম দিতে হবে। কারণ ব্যর্থ হলে তাঁদের আবার নিউইয়র্কে ফিরে আসতে হবে এবং সীমাহীন ও ভোগান্তি বরণ করে নিতে হবে, যেমনটা মেনে নিতে হয়েছিল দিল্লির অধিবাসীদের। ফলে সে পথে যে তাঁরা ফিরবেন না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিদেশের মাটিতে শত প্রতিকূলতা প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে জয় করেছেন, তাতে তাঁরা স্যালুট পাওয়ার যোগ্য। তাঁদের বিজয়ী হওয়ার মানসিকতাই বাফেলো, হ্যামট্রিক বা অন্যান্য নতুন জায়গায় সাফল্য এনে দেবে, এ প্রত্যাশা একেবারেই বাড়াবাড়ি কিছু নয়।