জেবিবিএতে অনৈক্যের সুর

আমেরিকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্ক (জেবিবিএ)। এর দ্বিবার্ষিক (২০১৮-২০১৯) নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ২ জানুয়ারি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংগঠনে বিভক্তির সুর। এক পক্ষ সাংবাদিক সম্মেলন করেছে, অন্যপক্ষ তলবি সাধারণ সভার আয়োজন করেছে। ১৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটির নয়জন এক পক্ষে। আরেক পক্ষে আছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি ছয়জন।

জেবিবিএ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটির মোট সদস্য ২৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। গত ৩১ অক্টোবর দুপুর ২টায় জ্যাকসন হাইটসের খাবার বাড়ি রেস্তোঁরায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেবিবিএর কার্যকরী কমিটির ছয়জন। একই জায়গায় রাত ৮টায় তলবি সাধারণ সভার আয়োজন করে সংগঠনের কমিটির অন্য নয়জন সদস্য।

পূর্ব নির্ধারিত সাধারণ সভার দিন কেন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হল এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ জিকো বলেন, হিসাবের নিরীক্ষিত কপি না থাকার কারণে সাধারণ সভার তারিখ পরিবর্তন করে ২১ নভেম্বর করা হয়েছে। মাহবুব এ চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার করে ৫ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তা জানানোর জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আমরা জানি হারুন সেলিমের উদ্যোগে একটি সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছিল যা সংবিধান বহির্ভূত। সংবিধান লঙ্ঘনের কারণে সেলিমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে সাধারণ সভার চিঠি দিতে হয় সদস্যদের। ১০ নভেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের জন্য সদস্য তালিকা কমিশনের কাছে হস্তান্তর করব। ২১ নভেম্বর মুলতবি সাধারণ সভাতেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। আমরা উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গেও বসব। তারা যদি সংবিধান অনুযায়ী কোনো সিদ্ধান্ত দেন, আমরা তা মেনে নেব।’

সাধারণ সদস্য শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমরা জানি ৩১ অক্টোবর সাধারণ সভা হবে বলে ১২ জনের কার্যনির্বাহী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কাউকে না জানিয়ে পরিবর্তন করে সংবাদ সম্মেলন করলেন যা অন্যায়। তারা সাধারণ সদস্যদের কাছে জবাবদিহি না করে সাংবাদিকদের কাছে জবাবদিহি করেন যা হাস্যকর। তলবি সভায় কার্যকরী কমিটি এবং নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।’

৩১ অক্টোবর তলবি সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে ৯ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দেওয়া হয় উপদেষ্টা কমিটির কাছে। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মহসীন ননী তা গ্রহণ করেন। এই সম্পর্কে মহসীন ননী বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করব যেন সংগঠনটি ঐক্যবদ্ধভাবে টিকে থাকে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের নিজেদের মতো করে সংগঠন চালাচ্ছেন। তলবি সভায় সাধারণ সদস্যরাও নানা অভিযোগ করেছেন, আমরা তা নিয়েও কাজ করব। তবে প্রথমে সবাইকে একত্রিত করার চেষ্টা করছি।’

সাধারণ সদস্য মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সংগঠনটি এক হয়েছিল বলে আমি উৎসাহ নিয়ে এতে যুক্ত হয়েছিলাম। এখন এই কমিটি যেসব কার্যকলাপ করছে তাতে মনে হচ্ছে এই সংগঠন আর এক থাকতে পারবে না। কমিটির কার্যক্রম আমাকে হতাশ করছে। তবে উপদেষ্টা কমিটির ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আমার বিশ্বাস সংগঠনটি আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে।’
দীর্ঘ ২০ বছর আগে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় গড়ে তোলেন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ) ইনক। এক যুগের বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চলে আসা জেবিবিএ ইনকের নাম পরিবর্তন করে ২০১২ সালে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন নিউইয়র্ক ইনক অর্থাৎ জেবিবিএ এনওয়াই ইনক করা হয়। মাঝে বিভিন্ন কারণে জেবিবিএ বিভক্ত হয়ে হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধভাবে ‘জেবিবিএ এনওয়াই ইনক’ গঠন করেন।