সুপেয় পানির নিরাপত্তায় নতুন উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগান

ক্যানসাসের উচিটায় মেট্রোপলিটন কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘হিউম্যান ওয়াটার ইন্টারন্যাশনাল’ সম্মেলনের একটি মুহূর্ত
ক্যানসাসের উচিটায় মেট্রোপলিটন কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘হিউম্যান ওয়াটার ইন্টারন্যাশনাল’ সম্মেলনের একটি মুহূর্ত

আমেরিকা ও বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের চাহিদা বাড়ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যভাগের বিশাল অংশ মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সহনীয় মাত্রার নিচে নেমে যাওয়াতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর ভূ-প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসের উচিটায় মেট্রোপলিটন কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে গত ২৮ অক্টোবর ‘হিউম্যান ওয়াটার ইন্টারন্যাশনাল’ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের একাধিক ভূ-বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য সুপেয় পানীয় জলের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত বাংলাদেশ, সৌদি আরব, মিশর, তুরস্ক, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নেন।

উচিটা শহরের মেয়রের উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে ক্যানসাসের উচিটা শহরে এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান। বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের জন্য সুপেয় পানির নিরাপত্তা বিধানে নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

দিনব্যাপী দুই পর্বে এ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সারা বিশ্বে সুপেয় পানির চাহিদার তুলনায় জোগান কম। তাই মানুষ নির্বিচারে প্রকৃতির ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই পৃথিবীর একেক প্রান্তে প্রকৃতি চেহারায় ভিন্নতা এনে দিয়েছে। আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়ে গেছে। অপরদিকে মধ্যাঞ্চলে খরতাপ বেড়ে যাচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের অভাব তীব্রতর হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভূ-বিজ্ঞানী ও পানি-গবেষকেরা দিনরাত ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমিয়ে বিকল্প চিন্তা খুঁজছেন।
বক্তারা বলেন, ন্যানো টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে মেঘ-কুয়াশা থেকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের দিকে এগোচ্ছে আগামী শতাব্দী। প্রাকৃতিক কারণে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার বছরের পানি সংরক্ষণাগার এখন ঝুঁকির মুখে। অপরদিকে পাহাড়-পর্বত থেকে ধেয়ে আসা মাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে সাগরের তলদেশ। এতে সমুদ্রের ভূপৃষ্ঠ ওপরে উঠে যাচ্ছে। তাতে জলোচ্ছ্বাস বাড়ছে।

বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে পানি পরিশোধনের জন্য রিজার্ভ অসোমোসিসসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়ায় পানি পরিশোধিত করে পানীয় জল তৈরি করা হচ্ছে, যা গ্রাফিন অক্সাইড ন্যানো ফিল্টার (জিও ন্যানো ফিল্টার) ব্যবহারের মাধ্যমে শতভাগ পানি উৎপাদনে সক্ষম বলে বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরি পর্যায়ে প্রমাণ পেয়েছেন।

সম্মেলনে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-বিজ্ঞানী মীর হোসাইন। বক্তব্য রাখেন উচিটা টেকনিক্যাল কলেজের প্রেসিডেন্ট সেরি উটাস, ড. বাহিদ রহমানী (ক্যানসাস ইউনিভার্সিটি), ড. এলিজাবেথ আবলা (কেইউ-স্কুল অব মেডিসিনি), ড. রমাজান আসমাতুল্লাহ (উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি), ড. সুশান স্টোভ (ভূ-বিজ্ঞানী), সেম মেসকিন (গ্লোবাল ফেথ ইন অ্যাকশন), ড. মো. হেলালী (ইসলামিক সোসাইটি অব উচিটা), ড. ফরসাদ মাসহাদী (ডব্লিওসু), কিশোর কে চিন্ডালা (ভারত), ড. আবু আসাদুজ্জামান (ডব্লিওসু), ড. মিয়া মোহাম্মদ আদেল, ড. সাইদুর রহমান (সৌদি আরব), মোস্তাফা হাসান, ফাইরুজ সাকিব তানজিম, নিজাম উদ্দিন ও সাইফুল ফয়সাল (ডব্লিওসু) প্রফেসর মুনিরুল হাসান (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)।