হোঁচট খাওয়া জীবন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

যাকে আমি ভালোবাসি, সে সবেমাত্র বুয়েটে চান্স পেয়েছে। আর আমি অষ্টম শ্রেণিতে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কেউ কি প্রেমে পড়ে? তবে এটাই সত্যি যে, শেষ অবধি আমি প্রেমে পড়েছিলাম, তাকে ভীষণভাবে ভালোবেসেছিলাম।
সে আমার কাজিন। একটু দূরের। তার মা এবং আমার মা একে অপরের খালাতো বোন। সেই সুবাদে আমরা একে অপরের কাজিন।
আমি ছাত্র তেমন ভালো নই। একদিন আম্মা তাকে বললেন, ‘বাবা, তোমার তো ক্লাস শুরু হতে এখনো ঢের দেরি। এ কয়টাদিন সায়েন্সের সাবজেক্টগুলো নদীকে যদি একটু দেখিয়ে দিতে, খুব উপকার হতো।’ এরপর হতে সে নিয়মিত পড়াতে আসত।
আমি নদী, সে ইমন।
এভাবেই আমাদের গল্পটি শুরু।

একদিন বইয়ের ভাঁজে একটি চিঠি রেখে ইমন বলল, ‘আমি যাবার পর এটি পড়বে। কেউ যেন দেখতে না পায়। পড়া শেষে ছিঁড়ে ফেলবে। আর অবশ্যই উত্তর লিখবে।’ আমি তাঁর কথা রাখিনি। সেটি ছিঁড়ে ফেলিনি, কিংবা উত্তর দেইনি।
চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলা সম্ভব ছিল না। কেননা, জীবনে এই প্রথম কেউ আমায় ভালোবাসার কথা লিখল। আমি বাথরুমে দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে সেটি পড়লাম। প্রবল উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে ঘ্রাণ নিলাম। আবারও এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম। এরপর আমি শত সহস্রবার সেটি পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে, রাতে ঘুমোতে যাবার আগ অবধি পড়তেই থাকলাম সকলের অগোচরে। আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি লাইন গভীর অনুভবে ছুঁয়ে দেখলাম। একসময় ক্রমশ ত্যানা ত্যানা হয়ে আসা চিঠিখানা ভীষণ যত্নে রেখে দিলাম। কিন্তু আমি তাকে কোনো উত্তর দিলাম না।
ইমন প্রতিদিন পড়াতে আসে।

আমার চোখে চোখ রাখে। আমি দৃষ্টি ফেরাই বইয়ের হরফে। কিংবা আঁকিবুঁকি করি অকারণেই। বুঝেও না বোঝার ভান ধরি। প্রতি উত্তর না পেয়ে শেষে বাধ্য হয়ে একদিন তার ছোট বোনকে দিয়ে বলায়। বোনটি বাক প্রতিবন্ধী। কিন্তু পারিবারিক গণ্ডির ভেতরের অন্য সব নিকটতম মানুষগুলোর মতন আমি তার সব কথাই বুঝতে পারি। এবং বোঝাতে পারি। আমি তাকে কোনো উত্তর করিনি, কিংবা হ্যাঁ না সিদ্ধান্ত জানাইনি। আসলে আমি ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাইনি পেয়ে হারাবার ভয়ে। নিজের অক্ষমতা একান্তই নিজের ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছি। অন্য কারও সুন্দর জীবনকে, ভবিষ্যৎকে অসুন্দর করার কোনো অধিকার তো আমার নাই, তাই না?
একদিন মা এবং নানুর সঙ্গে তাদের বাসায় বেড়াতে যাই। গল্প, খাওয়া-দাওয়ার এক ফাঁকে তার বড়বোন বললেন, ‘ইমন এক্ষুনি চলে আসবে, তুমি বসো।’ বুঝলাম, বিষয়টি তিনিও জানেন এবং পরোক্ষ সমর্থন আছে হয়তো।

ইমন এল। কুশল বিনিময় শেষে রেকর্ড প্লেয়ারে গান ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘আমার খুব পছন্দের একটি গান, শোন, আমি আসছি।’ সে বেরিয়ে গেল অন্য রুমে অতিথিদের সঙ্গে দেখা করতে। আমি একলা একা টেবিলে রাখা বইগুলো নাড়াচাড়া করছি, উল্টে পাল্টে দেখছি। মূলত আমি তন্ময় হয়ে গান শুনছিলাম—‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে...’
তাঁদের বিশাল একতলা শৌখিন বাড়ি। বারান্দায় সারি সারি টবে যত্নে লাগানো গাছ। সামনে খোলা বাগান। সেখানে ফুটে আছে নানান রকম দেশি বিদেশি ফুল। ভীষণ সুন্দর এক পরিবেশ। শেষ বিকেলের নিরুত্তাপ আলোয় আমরা হাঁটছিলাম। বাগান জুড়ে সন্ধ্যা নেমে এল। নাম না জানা রকমারি সব ফুলের সুবাস মিলেমিশে একাকার হয়ে বুনো এক সুগন্ধ ছড়াচ্ছিল।
সেই সন্ধ্যা আর রাত্রির সন্ধিক্ষণে ইমন বলল, ‘আমাকে ভালো না লাগার কারণগুলো যদি বলো, বদলে ফেলব নিজেকে। তোমায় ভালোবেসেই না হয় বদলে যাব, তোমার মতন করে ঠিক যেমনটি তুমি চাও।’
মনটা আচানক খারাপ হলো।

পৃথিবীর কোনো একজন মানুষ আমার জন্য নিজেকে বদলে ফেলতে চায়! সামান্য আমিও কারও কাছে অসামান্য কেউ! পৃথিবীর প্রতিটি মেয়েই হয়তো অনেকের কাছে তুচ্ছ হলেও কারও না কারও কাছে অনেক কিছু। তবুও আমি নিশ্চুপ। পরিবারের সকলের আদরের মেধাবী, শান্ত ছেলেটির শিশুসুলভ সরলতায় মুগ্ধ আমি তবুও নির্বাক!
হুম, রাতের অন্ধকারের মতোই নিঃশব্দ, নীরব।
কেননা, আমার কিছু অক্ষমতা ছিল। একটি পায়ে জটিলতা ছিল। ছোটবেলায় পোলিও রোগের কারণে পা-টি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য ছোট ছিল। আমি নিশ্চিত জানি, ইমনের পরিবার কখনোই চাইবে না এমন একটি মেয়েকে তাঁদের পুত্রবধূ করে নিতে। সামাজিক, পারিবারিক নানাবিধ বাধা-বিপত্তির সমূহ সম্ভাবনার কথা ভেবে ভেবে আতঙ্কিত, ক্লান্ত আমি প্রচণ্ড শীতের দিনেও ঘেমে যাচ্ছিলাম। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে শেষে হেরে যাই। জয় হয় ভালোবাসার।
আমি তাকে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিই।

আমরা ভালোবাসলাম একে অপরকে। তুমুল ভালোবাসার সেই দিনগুলোতে বুয়েটের কোনো এক নির্জন হলে বসে চিঠি লেখে ইমন। আর মূল্যবান সেই সব চিঠি মফস্বল শহরের ছোট্ট ঘরে বসে আমি পড়ি ভীষণ এক ভালো লাগায়, মায়ায়। একবার, দু বার, তিনবার, বারবার, অগণিত বার।
জীবনটাকে বড্ড রঙিন মনে হয়। পৃথিবীটাকে স্বর্গ মনে হতে থাকে। স্বর্গ কি এর চেয়েও সুন্দর? সুন্দরের আর কোনো সংজ্ঞা যে আমার জানা নাই!
কিন্তু হায়! পৃথিবীর সুখগুলো, সুন্দরগুলো এত ক্ষণস্থায়ী হয়! এতটাই! পৃথিবীর কোনো জটিলতাই দেখেনি যে বালিকা, সেই অবুঝ বালিকার সামনে বাস্তবের পৃথিবীর নির্মম, কঠিন, বীভৎস রূপগুলো, ধূসর রংগুলো খোলস ছড়াতে থাকে।

জানাজানি হয় ইমনের বিত্তশালী পরিবারে। তার মায়ের ভাষাগুলো হয়ে ওঠে ভয়ানক। ‘বামন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরতে চাওয়া’ কিংবা ‘তেলের সাথে জল ক্যামনে মিশে’ এমনতর আরও অনেক বিশেষণ। কেউ কেউ সেখানে আগুনে ঘি ঢালার মতো করে টিপ্পনী কাটে। ‘ভালোই তো, ল্যাংড়া বউ, যত যা-ই বলবেন, বকাঝকা করবেন, মাথা নিচা (নত) কইরা রাখবো।’ অতঃপর সেই সব মানুষগুলো হা হা হো হো শব্দে তৃপ্তির, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ওঠে।
প্রচণ্ড দৈন্যের মধ্যেও প্রবল আত্মসম্মানবোধের এই মধ্যবিত্ত আমি হেঁট হয়ে থাকি। দুঃখে, কষ্টে, সংকোচে, অপরাধবোধে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে যেতে দম বন্ধ হয়ে আসে। সেই সময় ছোট্ট ঘরের বন্ধ জানালা খুলে বাইরে খোলা বাতাসে বুকভরে শ্বাস নেওয়া হয়নি অনেকগুলো দিন। একদিন সেই বন্ধ জানালা খুলে পৃথিবীর মুখোমুখি এসে দাঁড়াই। জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা একলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজি। তাঁকে আমার অনেক প্রশ্ন ছিল, অ-নে-ক।
আমার মা লোকমুখে শোনা সমস্ত কটু কথা নীরবে হজম করে যায়। অশ্রুজলে বুক ভাসায়। কাউকে কিচ্ছুটি বলে না। বলবেই বা কেমন করে? ঠিকই তো! মিথ্যে তো আর বলেনি! উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্ত তো তেল আর জলই। তা ছাড়া এক পা খুঁড়িয়ে হাঁটা অক্ষম কন্যাটি প্রবলভাবে সুস্থ স্বাভাবিক আর মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে ভালোবাসা তো বামুন হয়ে আকাশের চাঁদ ছুঁতে চাওয়া-ই।

আমি বুঝি, ইমন তার পরিবারের কাছে অসহায় ভীষণভাবে। প্রবল উচ্ছ্বাস নিয়ে ভালোবাসার, নির্ভরতার যে হাতটি বাড়িয়েছিল, ক্রমশ তা আলগা হতে থাকল যেন! তার অপরাধী মুখ আর অসহায়ত্ব দেখে একদিন বলি,
‘বাড়িতে তোমাকে অনেক কথা শুনতে হয়, তাই না?’
সে অপ্রস্তুত হয়ে বলে, ‘আরে নাহ্’
আমি বলি, ‘আমি সব বুঝতে পারি। চারপাশের মানুষগুলোকে বুঝতে পারি। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ত্রুটির ওপর তো আমার কোনো হাত নেই। তুমি তোমার পরিবারকে ভুল বুঝো না।’
ইমন অপরাধী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কঠিন এক দুঃসময়ের মুখোমুখি থেকেও দু’হাত চেপে ধরে আমায় আশ্বস্ত করে এই বলে, ‘আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাসার সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করব।’

ভাঙচুর টাইপের ভালোবাসা হতে সাহসী হতে হয়। ভীষণ সাহসী।
আমরা কেউই পরিবার, সমাজের কথা ভেবে তেমন সাহসী হয়ে উঠতে পারিনি।
আমাদের শক্ত মুঠিতে ধরা হাত একটু একটু করে আলগা হতে থাকল টাইটানিক ছবির সেই নায়ক-নায়িকার শেষ দৃশ্যের মতন। তবে আমরা তলিয়ে যাইনি। বেঁচে ছিলাম।
একদিন মফস্বল শহরের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ঢাকায় ভর্তি হলাম। বাবার হাত ধরে লঞ্চে ঢাকায় এলাম। ভীষণ ঝলমলে কোলাহলমুখর এক শহর। সন্ধ্যার নিয়ন আলোয় অচেনা এক আগন্তুকের শহরে প্রবেশের মতোই ছিল আমার আগমন। আমি বিস্ময়ে চারপাশ দেখি। জনসমুদ্রের ভিড়ে একজন মানুষকে খুঁজে ফেরে আমার অবুঝ বোকা চোখজোড়া।
নতুন শহরে সুখ সুখ এক অনুভূতিতে আমার নির্ঘুম রাত কাটে এই ভেবে যে, একই শহরের আলো-বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি আমরা দুজন। হয়তোবা দেখা হয়ে যাবে কোথাও। স্বপ্নের ঝোলা কাঁধে নিয়ে দেয়াল বেয়ে বেড়ে উঠে আমার মধ্যরাত। রাতের আঁধার মিলিয়ে ভোরের আলো ফোটে। আজান হয়। রাস্তার নেড়ি কুকুরগুলো করুণ আর্তনাদে ডেকে উঠে। ধীরে ধীরে ঘুমন্ত শহর আবারও কোলাহলমুখর হয়ে উঠে।

এভাবে দিন, মাস, বছর পেরোলেও আমাদের দেখা হয়ে যায় না কারণে, অকারণে কিংবা ভুল করেও। মনের আকাশ জুড়ে অবুঝ মেঘের কোলাহল। দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, আর জড়তার মাঝে একদিন পুরোনো নম্বরে ফোন করি। ও প্রান্তে চেনা স্বর। কেন যেন অধিকার খাঁটিয়ে জোর গলায় বলা হয় না, ‘অনেক দিন দেখা হয় না, এসো একদিন দেখা করি।’
শুধু সংকোচে বলি, ‘আমাদের কি আরেকবার, শেষবার দেখা হতে পারে? এরপর না হয় আর দেখা হলো না, কোনো দিনই দেখা না হলো আর।’
ইমন খুব সহজেই রাজি হলো। কবে, কখন, কোথায় জানতে চাইল। মনে হলো, সে বোধ হয় এই ফোনটির অপেক্ষাতেই ছিল এ কয়টি বছর।
আমাদের দেখা হলো।

জন্ম জন্মান্তরের চেনা মানুষটিকে ভীষণ অচেনা মনে হলো। মুখোমুখি বসে আমরা। সে মেঝের দিকে চেয়ে থাকল। কথাও বলছিল সেদিকে চেয়ে। চোখ তুলে তাকাল না। একি অপরাধ বোধ? সহজ সরল এক বালিকাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেবে বলে মাঝপথে হাতটুকু ছেড়ে দেওয়ার অপরাধবোধ? জানি না।
জানাল, কালই তার ফ্লাইট। স্কলারশিপ নিয়ে জাপান যাচ্ছে।
এ-ও জানাল, সে যেতে চায়নি। পরিবারের চাপে যেতে হচ্ছে। ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বলল, ‘ষড়যন্ত্র, সব ষড়যন্ত্র।’
যাবার আগে শুধু বলল, ‘বলছি না তুমি আমার জন্য অপেক্ষায় থেকো, তবে আমি শেষ অবধি চেষ্টা করব পরিবারকে বোঝাতে।’
সে-ই শেষ দেখা।

কেননা, এরপর আর কোনো দিনই দেখা হয়নি আমাদের।
তত দিনে পদ্মা-মেঘনায় অনেক জল গড়াল। জীবন বহতা নদী। সে নদীর স্রোতোধারা ঢেউ খেলে খেলে এগিয়ে চলল সামনে, দূরে, আরও দূরে...
শুনেছি দুই সন্তান নিয়ে পৃথিবীর উন্নত একটি দেশে ইমনের বসবাস।
অন্যদিকে নদীর বসবাস বিশ্বের রাজধানীতে। স্বামী, এক ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে সুখের সংসার। চারপাশের অসংখ্য ভালো মানুষ আর তাঁদের ভালোবাসায় ভীষণ সুন্দর তার বেঁচে থাকা। সে লেখে। শব্দ সাজায়। জীবনের গল্পগুলো নিয়ে রচিত শব্দ।
......
একজন লেখিকার কাছ হতে জীবনের গল্প শোনার এ পর্যায়ে একটু বিরতি নিয়ে সাংবাদিক শেষ প্রশ্নটি করেন আজকের সত্তরোর্ধ্ব বয়সের লেখিকা নদী রহমানকে, আপনার প্রথম প্রেমের মানুষটি দেখতে কেমন ছিল? লেখিকার মুখেই শোনা যাক—
‘আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থাকি। মেঝের দিকে চেয়ে থাকি। ভাবি। ফ্ল্যাশব্যাকে যাই। মনে করার চেষ্টা করি। আজ থেকে অনেক বছর আগে শেষবার দেখা হওয়া মানুষটির মুখাবয়ব। মনে করতে পারি না। সেখানে ঝাপসা, ঘোলাটে কুয়াশা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাই না। এই প্রথম কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভীষণভাবে হোঁচট খাই।’
সাংবাদিক আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘শুনেছি প্রথম প্রেম মানুষ শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ভুলতে পারে না, তবে কি …’
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ইশারায় প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলি, ‘আমি যদি অতীত আঁকড়ে ধরে রাখি, তবে তো বর্তমানকে ঠকানো হবে। বর্তমানকে ভালোবাসতে পারব না। চারপাশের অজস্র ভালোগুলো আমাদের হোঁচট খাওয়া জীবন ভুলিয়ে রাখে এমন করেই প্রতিনিয়ত।’

পুনশ্চ:
প্রতি ফেব্রুয়ারির বইমেলায় একজন লেখিকার আগমন হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন একটি দেশের কোলাহলমুখর ঝলমলে ঢাকা শহরে। এ আগমন ছোট্ট মফস্বল শহরের কোনো বালিকার আগমন নয়। এ আগমন পশ্চিমা দেশের সত্তরোর্ধ্ব এক নারীর আগমন। সন্ধ্যার নিয়ন আলোয় বিশাল জনসমুদ্রের ভিড়ে তাঁর দু’চোখ খুঁজে ফেরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোকে। যাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সে সাধ্যমতো। সে সেদিনের প্রচণ্ড দৈন্যের মধ্যেও ভীষণ আত্মবিশ্বাসী সেই নারী, নদী রহমান।