টরন্টোতে শুরু হচ্ছে বইপড়া প্রকল্প

বইপড়া প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন (বাঁ থেকে) মিশিগানের অভিবাসী বাঙালি চিকিৎসক দেবাশিস মৃধা, রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জনম মুখার্জি, টরন্টো স্কুল বোর্ডের ট্রাস্টি পার্থি ক্যান্ডেভাল ও টরন্টো সিটি কাউন্সিলর জ্যানেট ডেভিস
বইপড়া প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন (বাঁ থেকে) মিশিগানের অভিবাসী বাঙালি চিকিৎসক দেবাশিস মৃধা, রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জনম মুখার্জি, টরন্টো স্কুল বোর্ডের ট্রাস্টি পার্থি ক্যান্ডেভাল ও টরন্টো সিটি কাউন্সিলর জ্যানেট ডেভিস

প্রবাসে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চেতনার বুনন ঘটাতে বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি) ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বাংলা সাহিত্যের ক্ল্যাসিক বইগুলো পড়ানোর এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ১৮ নভেম্বর বিকেল চারটায় আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরিতে (৪৯৬ বার্চমাউন্ট রোড) বছরব্যাপী এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। প্রবাসে বাংলা ভাষা না জানা বা কম জানা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে পরিচিত করাতে টরন্টোর সাহিত্যমোদীদের প্রিয় সাহিত্য সংগঠন বিএলআরসি এমন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
উদ্বোধনী পর্বে অতিথি থাকবেন আমেরিকার মিশিগানের অভিবাসী বাঙালি দার্শনিক, চিকিৎসক ও সমাজসেবক ড. দেবাশিস মৃধা, রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জনম মুখার্জি, টরন্টো স্কুল বোর্ডের ট্রাস্টি পার্থি ক্যান্ডেভাল ও কাউন্সিলর জ্যানেট ডেভিস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তরুণ অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত কুইজ প্রতিযোগিতা। সেরা তিন উত্তরদাতা পাবেন আকর্ষণীয় পুরস্কার। উপস্থিত থাকবেন তরুণদের প্রিয় একজন কানাডীয় সাহিত্যিক।
উদ্বোধনের পর ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে শুরু করে আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম শনিবার একই গ্রন্থাগারের মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বই নেওয়া ও ফেরত দেওয়া যাবে। আগামী বছরের আগস্ট মাসে অংশগ্রহণকারীরা বাংলা সাহিত্য নিয়ে তাঁদের পাঠের ওপর একটি লিখিত মূল্যায়ন জমা দেবেন। সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে সেরা ১০ মূল্যায়ন নিয়ে প্রকাশিত হবে একটি স্মরণিকা। আর সেরা তিন তরুণ লেখককে দেওয়া হবে নগদ অর্থ পুরস্কার। পুরো প্রকল্পটির ভাষা হবে ইংরেজি।
সংগৃহীত বইয়ের তালিকায় যেমন থাকবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক গ্রন্থ, তেমনি থাকবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শহীদুল্লা কায়সার, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আশাপূর্ণা দেবী, জহির রায়হান, রাজিয়া খান, মহাশ্বেতা দেবী, সৈয়দ শামসুল হক, রিজিয়া রহমান, হুমায়ূন আহমেদ, হাসান আজিজুল হক, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, মুহম্মদ নূরুল হুদা, হরিশংকর জলদাস, সালেহা চৌধুরী, সেলিনা হোসেন, নাসরীন জাহান প্রমুখের রচিত গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণ। থাকবে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের জীবনী। আরও থাকবে লালন শাহ, হাসন রাজা, রাধারমণ ও শাহ আবদুল করিমের রচনা। থাকবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শহীদজননী জাহানারা ইমামের গ্রন্থও। শিল্পী সুলতানকে নিয়ে রচিত জীবনীমূলক উপন্যাসের অনুবাদটিও থাকছে। মোটামুটি ২৫০টির মতো বইয়ের অনুবাদ সংগ্রহ করা গেছে।
বিভিন্ন বয়সী পাঠকের কথা চিন্তা করে সংগ্রহ করা হয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী শিশুসাহিত্য নালক ও ক্ষীরের পুতুল। সুকুমার রায়ের পাগলা দাশুর ইংরেজি যুক্ত হয়েছে তালিকায়। রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’ সিরিজের একগুচ্ছ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লিনটন বি সিলির অনুবাদে মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য থাকছে এই প্রকল্পে। সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে রচিত বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত সিলির জীবনীগ্রন্থটিও। অমর কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আম আঁটির ভেঁপুও থাকছে পাঠ তালিকায়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কালজয়ী উপন্যাস কাঁদো নদী কাঁদো এবং চাঁদের অমাবস্যাও সংগ্রহ করা হয়েছে। টরন্টোর বিদ্যোৎসাহী সমাজের
উৎসাহ বিএলআরসির সদস্যদের আরও উদ্যমে কাজ করার উৎসাহ জুগিয়ে চলেছে।
বাংলা ভাষায় রচিত যেসব কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে, সেগুলোর বিরাট একটি সংগ্রহ উপস্থাপন করা হবে টরন্টোর বহুভাষী তরুণ-তরুণীদের সামনে। থাকবে বাংলা সাহিত্যের ওপর ইংরেজিতে রচিত বেশ কিছু গ্রন্থ। ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘সিক্স সিজনস রিভিউ’-এর অনেক সংখ্যাও সংগ্রহ করা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা তাহমিমা আনামের উপন্যাসগুলোও থাকবে পাঠের জন্য।
উল্লেখ্য, প্রতি মাসের প্রথম শনিবার বেলা ১১টায় একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে একটি সাহিত্য-আড্ডা। প্রতি আড্ডায় যোগ দেবেন একজন করে কানাডীয় সাহিত্যিক। আড্ডার ভাষাও হবে ইংরেজি। তবে আড্ডাটি সব বয়সীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কোন লেখক কোন মাসে উপস্থিত থাকবেন, সেটি শিগগিরই জানানো হবে। একজন তরুণের উপস্থাপনায় এই আড্ডায় হবে উপস্থিত লেখকের গ্রন্থ থেকে পাঠ ও তাঁর রচিত সাহিত্য নিয়ে আলোচনা।
বইপড়া প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন মুক্ত চিন্তক ও লেখক আকবর হোসেন। যেকোনো প্রয়োজনে তাঁকে ৪১৬-৩৮৫-৭৪২৩ নম্বরে ফোন করা যেতে পারে। প্রকল্পের সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবেন তাসমিনা খান। অন্য সদস্যরা হলেন অদিতি জহির, সূচনা দাস বাঁধন, সুইটি রায়, অদিতি ফৌওজিয়া, হাসিব করিম, মেরিলিন সামান্থা পান্ডে প্রমুখ। স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করতে টরন্টোর তরুণ বয়সীদের প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএলআরসির পক্ষ থেকে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হয়, ‘আপনার উপস্থিতি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে
উৎসাহিত করবে।’