ট্রাম্পের এক বছরচাপের মুখে রিপাবলিকানরা

ডোনাল্ড ট্রাম
ডোনাল্ড ট্রাম

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক বছর পূর্তির আরও কিছুদিন বাকি। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে অভিষেক হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এ হিসাবে রিপাবলিকান এ সরকার বছর পূর্তির আগে চার সপ্তাহের কিছু বেশি সময় পাচ্ছে। আইনসভার কার্যদিবসের হিসাবে বাকি মাত্র ১২ দিন। কাছে আসছে মধ্যবর্তী নির্বাচনও। তাই বাকি এ কদিনের মধ্যেই সরকার ও প্রশাসনের সব পর্যায়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রমাণের চাপের মুখে রয়েছেন রিপাবলিকানরা।

ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত বড় কোনো অর্জন সামনে হাজির করতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন। এদিকে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও নগর প্রশাসনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে শোনা গেছে ডেমোক্র্যাটদের জয়ধ্বনি। ফলে ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই বাস্তবিক কিছু অর্জন হাজির করার চাপে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য বছরের বাকি কয়েকটি দিনই তারা পাচ্ছে। কারণ, বছর ঘুরতেই সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থা বসে যাবে বর্তমান প্রশাসনের সাফল্য–ব্যর্থতা নিয়ে, যা নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে। এ জন্য কর পুনর্গঠনসহ বর্তমান প্রশাসনের অগ্রাধিকার তালিকার কিছু কাজ করে দেখাতে হবে। পাশাপাশি রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফেডারেল প্রকল্পও নবায়ন করতে হবে রিপাবলিকানদের।
২০১৮ সাল কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে রিপাবলিকান নেতৃত্বের কার্যকারিতা প্রমাণের ক্ষণও এগিয়ে আসছে। এ সময়ের মধ্যেই তাদের প্রমাণ করতে হবে যে দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্বের আবর্তে রিপাবলিকান নেতৃত্ব আটকে যায়নি। শেষ মুহূর্তের এ লড়াইয়ে রিপাবলিকানরা কতটা টিকে থাকতে পারেন, তা–ই এখন দেখার বিষয়। তবে সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এখনো আশাবাদী। সিএনএনকে সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘দলের ভবিষ্যৎ এখন আমাদের হাতে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিও। অর্থনীতিকে বাঁচাতে এখন কর পুনর্গঠন খুব জরুরি। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব বলে আশা করি।’
বছরের শেষ মাসে কংগ্রেসের সামনে বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাজির হয়েছে কর পুনর্গঠনের বিষয়টি। ওবামাকেয়ার বাতিলে ব্যর্থতার দায় ঘোচাতে এটি পাস করা এখন রিপাবলিকানদের জন্য সবচেয়ে জরুরি। এরই মধ্যে বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে। এখন অপেক্ষা সিনেটের, যেখানে মিচ ম্যাককোনেল সর্বোচ্চ দুটি ভোট হারানোর ঝুঁকি নিতে পারেন। অথচ এখনো তিন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা আইনটির বিষয়ে সরাসরি তাঁদের অবস্থান জানাননি। ফলে এখন পর্যন্ত আইনটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও, যেকোনো সময় দিক বদল হতে পারে। শেষ পর্যন্ত আইনটি পাস হলেও রিপাবলিকানদের যুঝতে হবে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের প্রস্তাবের মধ্যে রয়ে যাওয়া বিস্তর ব্যবধান ঘোচাতে। রয়েছে শিশুদের স্বাস্থ্যবিমার মতো বিষয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্যাপিটল হিলের ওপর চেপে বসা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মতো বিষয়ও। এসবই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে এসেছে রিপাবলিকানদের সামনে। কারণ, এগুলো নিয়ে ডেমোক্র্যাটরাও ছেড়ে কথা বলবেন না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ ডেমোক্র্যাটদের সামনেও রয়েছে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ডিসেম্বরে কংগ্রেসকে সেই কর্মদক্ষতাই দেখাতে হবে, যা বছরের বাকি মাসগুলোয় তারা দেখাতে পারেনি। বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে উপস্থিত সরকারি ব্যয়বিষয়ক সিদ্ধান্ত। আগামী ৮ ডিসেম্বরই ব্যয়সম্পর্কিত অনুমোদিত সরকারি তহবিলের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় সাময়িক একটি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কিছু কংগ্রেস সদস্য আলোচনা শুরু করেছেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যদের মতপার্থক্য শেষ পর্যন্ত কী ফল দেয়, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
কংগ্রেসের অবস্থা এমনিতেই টালমাটাল। গত কয়েক সপ্তাহে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ একে আরও নড়বড়ে করে দিয়েছে। নিপীড়কের তালিকায় উঠেছে ডেমোক্র্যাট সিনেটর আল ফ্রাংকেন, ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি জন কোনিয়ার্স ও রিপাবলিকান সিনেটর রয় মুরের নাম। তীব্র সমালোচনা চলছে গোটা মার্কিন প্রশাসন ও এর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রয় মুরের পক্ষ নিয়ে কথা বলে আক্ষরিক অর্থেই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন, যা সরকারের ওপর বাড়তি চাপ হয়ে হাজির হয়েছে। অসংখ্য অভ্যন্তরীণ বিষয় কংগ্রেসের সামনে হাজির থাকলেও এর কর্তাব্যক্তিদের এখন বিষয়টির সুরাহা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। এ সপ্তাহেই এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবের বিপরীতে প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটির কথা রয়েছে।
ওবামাকেয়ার বাতিলের বিষয়ে মার্চের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এর সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি অংশের সুরাহা ডিসেম্বরেই করতে চান ডেমোক্র্যাটরা। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের স্বাস্থ্যবিমার প্রসঙ্গটি। বিশেষত, ফেডারেল তহবিল নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই এ–সম্পর্কিত একটি সিদ্ধান্ত চান ডেমোক্র্যাটরা। পাশাপাশি ড্রিমারদের জন্যও তহবিল চায় দলটি। এর প্রতি রিপাবলিকানদের একটি অংশের সমর্থন রয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিতদের জন্য বিমাসুবিধার মেয়াদও শেষ হচ্ছে ৮ ডিসেম্বর। ফলে এ বিমাপদ্ধতি পুনঃ অনুমোদন কিংবা তা পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তটিও ঝুলে আছে। বছরজুড়েই বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও কংগ্রেস এ ক্ষেত্রে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই বছরের এই শেষ সময়ে এসে এটিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়েই সামনে হাজির হয়েছে। ইরমাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানায় এ বিমা তহবিলের দাবিটি এখন বেশ চড়া সুরেই বাজছে। ফলে সার্বিকভাবেই রিপাবলিকানদের জন্য বছর শেষের লড়াইটা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো আমেরিকার খোলনলচে বদলে পুরোনো প্রতাপ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইন তিনি পাস করতে পারেননি, যা পুরো জাতির গতিপথকে বদলে দিতে পারে। এমনকি ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একরাশ যুদ্ধংদেহী বক্তব্য দেওয়া ছাড়া ঘরের বাইরেও তিনি এমন কোনো সাফল্য নিয়ে আসতে পারেননি। সর্বশেষ এশিয়া সফরের কপালেও বিশ্লেষকেরা এঁকে দিয়েছেন ব্যর্থতার তিলক। যদিও তিনি এই সফরকে ভীষণভাবে সফল বলে দাবি করছেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নিজ দলের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে পড়ছেন তিনি। তাঁর অবস্থানের কারণেই রিপাবলিকান পার্টির লোকরঞ্জনবাদী অংশ ও প্রথাগত ধারার মধ্যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ বিতর্ক সত্ত্বেও অ্যালাবামা সিনেট নির্বাচনে রয় মুরের প্রতি তাঁর সমর্থন এ ব্যবধানকে আরও গাঢ় করেছে। ফলে শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন বড় ধরনের সাফল্য হাজির করে এক বছরের ব্যর্থতাকে অর্জনে রূপান্তরিত করতে পারবে বলে মনে করছেন না অনেক বিশ্লেষকই। তবে এ আশঙ্কার সত্যাসত্য জানতে সবাইকে আগামী বড়দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।