রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত প্রশ্নে নতুন বিতর্কে ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার আঁতাত নিয়ে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলারের তদন্তে নতুন মোড় এসেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন আদালতে স্বীকার করে নিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে (এফবিআই) তিনি মিথ্যা বলেছিলেন। এরপরই আসে এই নতুন মোড়।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন ফ্লিন। এই অভিযোগে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ২৫ দিনের মাথায় চাকরি হারান তিনি।

ট্রাম্প দুই দিন আগে টুইটারে দাবি করেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও এফবিআইয়ের কাছে সত্য গোপন করায় বরখাস্ত হয়েছিলেন ফ্লিন। এ কথার অর্থ, বরখাস্ত করার সময় ট্রাম্প জানতেন, ফ্লিন এফবিআইকে মিথ্যা বলেছেন। ফ্লিনকে সরানোর পর ট্রাম্প তৎকালীন এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে ডেকে অনুরোধ করেছিলেন, ফ্লিনের বিরুদ্ধে যেন কোনো তদন্ত না হয়। ধারণা করা হয়, সে নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় ট্রাম্প কোমিকে পদচ্যুত করেন।

ঘটনায় নতুন মোড় আসে গত সোমবার। এ দিন সকালে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী জন ডাউড বলেন, ফ্লিনের ব্যাপারে ট্রাম্পের টুইটটির খসড়া তাঁর। ফ্লিন এফবিআইকে মিথ্যা বলেছেন, সে কথা ট্রাম্প জানতেন—এটি তিনি ভুলে লিখেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে কয়েক শ টুইট ট্রাম্প করেছেন, তার প্রতিটির লেখক তিনি নিজেই। হঠাৎ একটি ভুল টুইট তাঁর আইনজীবী কেন লিখে দেবেন, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

পরে এক সাক্ষাৎকারে ডাউড দাবি করেন, যাঁরা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিচারে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আনছেন, তাঁরা ভুল বলছেন। প্রেসিডেন্ট দেশের প্রধান আইনপ্রয়োগকারী নির্বাহী। শাসনতন্ত্রের ১১ ধারা অনুসারে যেকোনো বিষয়ে মতপ্রকাশের অধিকার তাঁর রয়েছে। ডাউডের কথার অর্থ, প্রেসিডেন্ট আইনের ঊর্ধ্বে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক অ্যালেন ডারশভিৎসও বলেছেন, কাকে নিয়োগ করবেন বা কাকে পদচ্যুত করবেন, সে অধিকার প্রেসিডেন্টের রয়েছে। শাসনতন্ত্রই তাঁকে সে অধিকার দিয়েছে। ফক্স নিউজের সঙ্গে ডারশভিৎসের সাক্ষাৎকারটি ট্রাম্প তাঁর টুইটে সবাইকে দেখতে পরামর্শ দিয়েছেন।

তবে পলিটিকো ওয়েবসাইটে তিনজন খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ এক যৌথ অভিমতে লিখেছেন, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ে এই কথা স্বীকৃত হয়েছে যে দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো প্রেসিডেন্ট নিরঙ্কুশ অবমুক্তি (ইমিউনিটি) আশা করতে পারেন না।

ডেমোক্র্যাট দলের জ্যেষ্ঠ সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথল বলেছেন, ট্রাম্প বিচারকাজে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রেসিডেন্টের আইনজীবী যে তাঁকে ‘আইনের ঊর্ধ্বে’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন, সে দাবি থেকেও সন্দেহ জাগে, আইনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন কতটা শ্রদ্ধাশীল।