এবার কংগ্রেসে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নীনা

ড. নীনা আহমেদ।
ড. নীনা আহমেদ।

আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে কয়জন এগিয়ে গেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ার ডেপুটি মেয়র ড. নীনা আহমেদ। এবার আর স্থানীয় সরকার নয়, যেতে চান আরও দূর। লড়তে চান কংগ্রেস নির্বাচনে। সে জন্য ডেপুটি মেয়রের পদ ছেড়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে কংগ্রেসে লড়াইয়ের প্রস্তুতির কথা জানান তিনি। এ জন্য গত ৩০ নভেম্বর ফিলাডেলফিয়া নগরীর ডেপুটি মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কংগ্রেসে নির্বাচন করার জন্য তাঁকে এই পদ ছাড়া বাধ্যতামূলক ছিল।
ফিলাডেলফিয়ার সিটি অফ চেস্টার, সেন্ট্রাল ফিলাডেলফিয়া নগরের একাংশ ও দক্ষিণের একাংশ নিয়ে গঠিত কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-১ থেকে নীনা আহমেদ নির্বাচন করবেন। ডেমোক্র্যাট দলের টিকিটে তিনি নির্বাচনে কংগ্রেস সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফলে প্রাথমিক লড়াইয়ে জয়ী হলে মূল নির্বাচনে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা বেশ প্রবল।
দুই বছর ধরে ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর গত সপ্তাহে পদত্যাগপত্র জমা দেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকার রাজনীতিক। এর আগে তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘এশিয়ান-আমেরিকান অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার্স’ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত জুলাইয়ে। কিন্তু ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সময় নীতিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
নীনা আহমদ যে আসনে নির্বাচন করবেন, সেখানে বর্তমানে কংগ্রেসের সদস্য আছেন ডেমোক্র্যাট দলের রবার্ট ব্র্যাডি। ব্রাডির বিরুদ্ধে নির্বাচনী তহবিল তসরুপের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা এফবিআই। ইতিমধ্যেই ওই অপকর্মে জড়িত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠিত হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বব ব্রাডির প্রার্থিতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তাই ডেমোক্রেটিক পার্টির বলিষ্ঠ সংগঠক নীনা আহমেদ মাঠে নামলেন।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা দিয়ে তৃণমূলে ব্যাপক জনপ্রিয় ড. নীনা কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও হিসপ্যানিকদের একচেটিয়া ভোট পাবেন বলে বিশ্লেষকেরা ইতিমধ্যেই আভাস দিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। কারণ ফিলাডেলফিয়াসহ আশপাশে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্তদের ৭৮ ভাগের বেশি হচ্ছেন ডেমোক্র্যাট। অর্থাৎ দলের প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই নির্বাচনে উতরে যাওয়া মানেই মূল নির্বাচনে জয়ী হওয়া।
বারাক ওবামার উপদেষ্টা হওয়ার বেশ কয়েক বছর আগে ড. নীনা ফিলাডেলফিয়া নগরের মেয়রের অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার ছিলেন। আর এভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন হাসিম ক্লার্ক (২০১১-২০১৩)। এরপর আরও কয়েকজন লড়েছেন বিভিন্ন আসন থেকে। এখন পর্যন্ত কেউই জয়ী হতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে ড. নীনা আহমেদের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে ড. নীনা আহমেদ বলেন, একজন অভিবাসী হিসেবে, একজন নারী হিসেবে, একজন অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে তিনি সব মহলের সহযোগিতা কামনা করছেন। এই মুহূর্তে তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। বড় দিনের আগেই সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবেন। তিনি বাংলাদেশিসহ সবার সহযোগিতা ও শুভকামনা প্রত্যাশা করেছেন।