মন্ট্রিয়েলে লালন সেন্টারের যাত্রা শুরু

মন্ট্রিয়েলে লালন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা
মন্ট্রিয়েলে লালন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা

শিল্প, সংস্কৃতি ও দর্শনচর্চায় সেতুবন্ধন রচনার প্রত্যয়ে মন্ট্রিয়েলে লালন সেন্টারের যাত্রা শুরু হলো। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসএমইউ বলরুমে ১ ডিসেম্বর সেন্টারের উদ্বোধন হয়। 

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া এই আয়োজন দুই পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠানে লালন সেন্টারের পরিচিতি ও একটি অসাম্প্রদায়িক, উদার ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন সেন্টারের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দিদার এ হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ট্রিয়েলের পার্ক এক্সটেনশন অঞ্চলের সিটি কাউন্সিলর মাদাম মেরী ডেরোস।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ডেরোস বলেন, লালন সেন্টারের উদ্বোধনী আয়োজনে এসে তাঁর উপলব্ধি এটি অন্যান্য কমিউনিটি সংগঠনের মতো নয়। বহুভাষিক একটি সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন সমাজকে সংহত করে, সৌন্দর্য তৈরি করে। লালন সেন্টার আজকের অনুষ্ঠানকে যেভাবে ত্রিভাষিক করে (বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি) উপস্থাপন করছে, সেটা খুবই জরুরি। লালন সেন্টার সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করার প্রয়াসে, কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের সর্বাত্মক সহযোগিতা পাবে-এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি মন্ট্রিয়েল একাডেমি অব ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড ফাইন আর্টসের পরিচালক, জেনিফার ডাভোস তাঁর আলোচনা শুরু করেন বাংলা ভাষায়। তিনি বলেন, অন্য ভাষাভাষী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের মতোই জরুরি নিজেদের একতা। বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও লোকাচারের সমৃদ্ধি তখনই তুলে ধরা সম্ভব হবে, যখন বাঙালি সংগঠনগুলো বিভাজনের ঊর্ধ্বে কাজ করবে।
লালন সেন্টারের সভাপতি লালনের গানের উদ্ধৃতি খচিত স্মারক অতিথিদের উপহার দেন। রোকেয়া চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ পর্বে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাদমান শাহরিয়ার ও ইমরুল কায়েস।
সাংস্কৃতিক পর্বে লালনের চারটি গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার মাহমুদুজ্জামান বাবু এবং অনুজা চন্দ। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন অনুপ চৌধুরী মিঠু এবং ইয়াসির ইমরান হায়দার। এরপর ‘আমরা করব জয়’ গানটি যৌথভাবে পরিবেশন করেন চন্দ্রিমা তৃণা ধর, ইমন ধর, চিন্ময় ধর এবং দিব্য ধর। বাংলা, ইংরেজি ও ফরাসিতে গানের মূল ভাব উপস্থাপন করেন মাহমুদুজ্জামান বাবু, সারাহ জেসমিন ও জিনাত ফারাহ নাজ। সাংস্কৃতিক পর্বের সময় পর্দায় ইংরেজি ও ফরাসিতে গানের চুম্বক অংশের ভাষান্তর ভেসে ওঠে। এ ছাড়া মিলনায়তনে বাংলা, ইংরেজি ও ফরাসিতে লালনের গানের উদ্ধৃতির বিভিন্ন রঙের প্ল্যাকার্ড সাজানো ছিল। ত্রিভাষিক এই আয়োজন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় লালন সেন্টারের সহযোগী ও শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। লালন সেন্টারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ বক্তব্য উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ।