বিরূপ মন্তব্য লেখকের ভাবনাকে দমিয়ে রাখতে পারে না

বাংলাদেশি তরুণ পাঠকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন জন ডেগেন
বাংলাদেশি তরুণ পাঠকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন জন ডেগেন

বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টারের (বিএলআরসি) উদ্যোগে চলতি মাসে ইংরেজিতে বাংলা সাহিত্যের বই আদান-প্রদানের সময় ছিল ২ ডিসেম্বর। সাহিত্য সংগঠনটির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী টরন্টোর আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরিতে মাসিক এই আয়োজনে এ মাসের লেখক ছিলেন রাইটার্স ইউনিয়ন অব কানাডার নির্বাহী পরিচালক ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক লেখক ফোরামের সভাপতি কবি, ঔপন্যাসিক ও কলাম লেখক জন ডেগেন। 

টরন্টোতে হাড় কাঁপানো শীতের মৌসুমে ২ ডিসেম্বরের আবহাওয়া খুব একটা মন্দ ছিল না। দিনটা ছিল সাপ্তাহিক ছুটির। আর শীতের সকালে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নানা বয়সী তরুণ উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটিকে পূর্ণতা দিয়েছেন।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ও চেতনাকে উদ্ভাসিত করার জন্য বিএলআরসি গত ১৮ নভেম্বর বছরব্যাপী এই বইপড়া প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পে বাংলা সাহিত্যের ২৯০টি অনুবাদ ও অন্যান্য বই সংগ্রহ করা হয়েছে যেগুলো প্রতি মাসের প্রথম শনিবার পাঠকদের দেওয়া ও ফেরত নেওয়া হয়ে থাকে। ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বই দেওয়া-নেওয়ার কাজ চলবে।
বিএলআরসির পূর্ব ঘোষণা ছিল বই নেওয়া-দেওয়ার দিনে একজন করে কানাডীয় লেখকের সঙ্গে আলাপচারিতা হবে। সে অনুযায়ী বেলা ১১টায় নাতিদীর্ঘ আড্ডায় মধ্যমণি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুটি নাটক, দুটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাসের রচয়িতা জন ডেগেন। উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রকল্পের সমন্বয়ক তাসমিনা খান আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। অতিথি লেখক নিয়ে আলোকপাত করেন অর্ক ভট্টাচার্য। আড্ডা পরিচালনা করেন ব্রতী দাস দত্ত।
ব্রতী একে একে জন ডেগেনকে লেখালেখি ও সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। আলাপে আলাপে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানটি। উপস্থিত দর্শকবৃন্দ অতি উৎসাহ নিয়ে প্রশ্নেত্তর পর্ব উপভোগ করেন। সদালাপী জন ডেগেন চমৎকারভাবে তুলে ধরেন তাঁর নানা অভিজ্ঞতার কথা, যাতে তিনি উল্লেখ করেন তাঁর লেখক হয়ে ওঠার গল্প। নতুন প্রজন্ম কী করে তাদের লেখালেখির চর্চা চালিয়ে যাবে এ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন।
জন ডেগেনের মতে, লেখাটা লিখতে হবে মনের আনন্দে এবং সেটি নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। লেখালেখির মাধ্যমে খুব সহজে পৌঁছে যাওয়া যায় মানুষের কাছে। লেখকের লেখা যখন সমাদৃত হয় অথবা প্রকাশক যখন পাণ্ডুলিপি প্রকাশের জন্য গ্রহণ করেন তখন মনের ভেতর একটা আবেগ তৈরি হয়। কিন্তু যখন মতামত লেখার বিপক্ষে যায় তাও গ্রহণ করার জন্য লেখককে তৈরি থাকতে হয়।
বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপারেও জন ডেগেন তাঁর বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, কোনো বিরূপ বক্তব্য লেখককে দমিয়ে রাখতে পারে না। নানাজন নানা মন্তব্য করতেই পারে। কিন্তু কোনো বিরূপ একটি মন্তব্য বা প্রতিবেদন কোনো লেখকের লেখাকে বা ভাবনাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু লেখা চালিয়ে যেতে হবে। লিখে লিখে নিজের লেখাকে আরও শাণিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি কিছু উদাহরণও তুলে ধরেন।
লেখক জন ডেগেন বলেন, নিজের লেখা প্রথম নিজে পড়াটা খুব একটা সহজ নয়। তবুও এই কঠিন কাজটি করতে হয় লেখককে। কারণ, একটি ভালো লেখার পেছনে অনেক শ্রম ও সময় দিতে হয়। অবশেষে আমরা হাতে পাই একটি ভালো ও পরিশীলিত লেখা। যে লেখাগুলো প্রকাশক হাতে পেয়েই প্রকাশনায় ছেড়ে দেন তাতে হয়তো ভালো লেখার মান বজায় রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
এরপর দর্শকসারি থেকে প্রশ্ন আহ্বান করা হয়। লেখালেখি নিয়ে দর্শকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে জন ডেগেন আলোচনায় ডুবে যান। তিনি দর্শকসারির প্রশ্নের জবাবে বলেন, লেখার জন্য সময় বের করতে হবে এবং লেখা চালিয়ে যেতে হবে। লেখা প্রকাশনার জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতাও কানাডায় পাওয়া সম্ভব। তাঁর কথায়, লেখালেখি করার নানান দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়, যা লেখকদের লেখালেখির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্বাস। নতুন প্রজন্মের কাছে এ রকম একটি আয়োজন ছিল খুবই আশাব্যঞ্জক।
আগামী ৬ জানুয়ারি একই স্থানে একই সময়ে আবারও বই আদান-প্রদানের কাজটি চলবে। সেদিন উপস্থিত থাকবেন কানাডার স্পোকেন ওয়ার্ড জগতের বহুল পরিচিত কবি আয়ান ফ্রে।