ভয়াবহ ঠান্ডা

পুরো আমেরিকা শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে আছে। বছর শুরুর ‘বোম্ব সাইক্লোন’ শ্বেত ক্রিসমাসের উচ্ছ্বাসে লেপ্টে দিয়েছে শঙ্কার ছায়া। আমেরিকার পূর্ব উপকূল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, এককথায় ফ্লোরিডা থেকে মেইন সব অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ শীত নেমে আসে ৩ জানুয়ারি থেকে। ৪ জানুয়ারির মধ্যে নিউইয়র্কসহ ২৮টির বেশি অঙ্গরাজ্যে আঘাত করা এই তুষারঝড় নাকাল করে ছাড়ে পুরো আমেরিকাকে। এখন পর্যন্ত এই তুষারঝড়ে পুরো আমেরিকায় ১৮ জন মারা গেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে নিউইয়র্ক, বোস্টন, হিউস্টন, ওয়াশিংটন ডিসিসহ বেশ কয়েকটি শহরের অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। কিন্তু তারপরও মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না। কমছে না ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা। ইরমা, মারিয়াসহ আগের বছরের প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়ের অনুগামী হয়ে নতুন বছরের শুরুতেই আমেরিকায় আঘাত করা এই তুষারঝড়কে ‘বোম্ব সাইক্লোন’ নামে ডাকা হচ্ছে, যা বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের সামনে এক বড় আপদ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
মার্কিন জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, তুষারঝড়ে পুরো আমেরিকার অন্তত ১৩৯ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ৩ জানুয়ারি সতর্কতা জারির প্রথম দুই দিনেই ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনার ২৫ হাজারের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যা এই তীব্র ঠান্ডায় তাদের বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে।
এদিকে আমেরিকায় বর্তমানে প্রায় দেড় মিলিয়ন লোক গৃহহীন রয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের পর এই সংখ্যা এখন নিশ্চিতভাবেই দুই মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। টেক্সাস, পুয়ের্তো রিকোসহ বহু অঞ্চলের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো এখনো পুরোনো ঝড়ের ক্ষতই কাটিয়ে ওঠেনি। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ রয়েছে, যাদের অনিশ্চয়তার মাত্রা গৃহহীনদের কাছাকাছি। অথচ এসব মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। এরই মধ্যে নিউইয়র্ক, বোস্টন, হিউস্টনসহ বেশ কয়েকটি শহর কর্তৃপক্ষ এই বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে। ১ জানুয়ারি নিউইয়র্কে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রিত থাকলেও রাস্তায় গৃহহীনদের দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। আর ঘর গরম করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই এমন নিম্ন আয়ের মানুষকে বিবেচনায় নিলে ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের সংখ্যা বড় আকার ধারণ করবে।
এ অবস্থায় দরিদ্র ও গৃহহীনদের সামনে পুরোনো পদ্ধতিতে আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। এরই মধ্যে অনেকেই এমনটি শুরু করেছেন, যা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরের শীতকালে সাবেকি পন্থায় জ্বালানো আগুন থেকে হওয়া দুর্ঘটনায় আমেরিকায় মারা গেছে ২ হাজার ১৫২ জন। এরই মধ্যে এমন ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। রয়েছে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ার আশঙ্কাও। সব মিলিয়ে গৃহহীনসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরাই মূলত ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সামর্থ্যবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত।