ট্রাম্পের নতুন চাল!

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

অভিবাসন নিয়ে নতুন রাজনৈতিক চালে নেমেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করা এবং অভিবাসনের নানা পথ সংকুচিত করার এ ফাঁদে ডেমোক্র্যাট দল পা না দেওয়ার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমেরিকার অভিবাসী গ্রুপগুলোও রাজনৈতিক চাল ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য সতর্ক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিলাষের পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই নতুন বছরে আমেরিকায় অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক চাঙা হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সমাধানের ব্যাপারে কেউ আশাবাদী নন।

আট লক্ষাধিক ড্রিমারসহ সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীর ভাগ্যনির্ধারণী বিল নিয়ে ৯ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শিশুকালে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর এখন পর্যন্ত অভিবাসনের বৈধ মর্যাদা পায়নি, এমন তরুণ-তরুণীদের বৈধতা প্রদানের একটি বিশেষ আদেশ জারি করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওবামার সেই ‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল’ তথা ডেকা কর্মসূচির আওতায় আট লাখ তরুণ-তরুণীকে ড্রিমার হিসেবে অভিহিত করা হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ডেকা কর্মসূচি বাতিল হয়ে যাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ নির্বাহী আদেশে। এটি অব্যাহত রাখতে কংগ্রেসকে তাগিদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কংগ্রেস যদি এসব তরুণ-তরুণীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একটি বিল পাস করে, তাহলে ট্রাম্প আপত্তি জানাবে না বলেও ওই বিশেষ আদেশ প্রদানের সময় উল্লেখ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিমায় সমঝোতার কথা বলেছেন। তিনি তাঁর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ, পারিবারিক অভিবাসন বা চেইন ইমিগ্রেশন, ডিভি লটারি বন্ধ করা—এসব নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সমঝোতা চান।
বৈঠকের এক দিনের মাথায়ই অভিবাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে সতর্ক অবস্থা লক্ষ করা গেছে। সমঝোতার নামে ডেমোক্র্যাটদের আমেরিকার অভিবাসনের মৌলিক অর্জনে ছাড় না দেওয়ার অবস্থান দেখা যাচ্ছে। পারিবারিক অভিবাসন যাতে বন্ধ না হয়, আমেরিকার নাগরিকেরা যাতে তাঁদের নিকটাত্মীয়দের অভিবাসী হিসেবে নিয়ে আসতে পারেন, এ পথটি অভিবাসী গ্রুপ ও উদারনৈতিক মহল খোলা রাখার পক্ষে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় খুশি হয়ে সমঝোতার নামে ছাড় দেওয়ার অবস্থান থেকে সরে আসার তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে এর মধ্যেই। ইউনাইটেড ল্যাটিন আমেরিকান সিটিজেনস নামের অভিবাসী সংগঠনের প্রধান ব্র্যান্ট উইল্কেস গত বুধবার বলেছেন, পারিবারিক অভিবাসন ও ডিভি লটারির পরিবর্তে কী চাওয়া হচ্ছে, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, আমেরিকার নাগরিকেরা কেন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে আসতে পারবেন না, এ নিয়ে শক্ত যুক্তি রক্ষণশীলদের কাছে নেই। পারিবারিক অভিবাসনের সবচেয়ে নাজুক চিত্র ধরে প্রচার চালানো হয়েছে। বলা হয়েছে, একজন অভিবাসী মার্কিন নাগরিক ২০-৩০ জন করে নিকটাত্মীয় আমেরিকায় নিয়ে আসছেন। ব্র্যান্ট উইল্কেস বলেন, প্রচারটি সত্য নয় এবং এ প্রক্রিয়াটিও দ্রুত নয়। তিনি বলেন, এ ধরনের নিকটাত্মীয় না আনায় আমেরিকার নাগরিকদের লাভ কী হবে, তা আগে আলোচনা করা হোক।
‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল’ তথা ডেকা কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠন ইউনাইটেড উই ড্রিমের ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর এড্রিয়েন রেয়ানা বলেছেন, যেসব শিশু অবৈধভাবে আমেরিকায় এসেছে, তাদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন হবে। তাদের কারণে অন্য অভিবাসী গ্রুপ, বিশেষ করে পারিবারিক অভিবাসন বা লটারি ভিসার মাধ্যমে সুযোগ পাওয়া অভিবাসীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অভিবাসী গ্রুপগুলো মনে করছে, একটি অভিবাসী দলকে সহযোগিতার নামে অন্যদের সুবিধা বন্ধ করার চালাকি রোধ করতে হবে।
৯ জানুয়ারি সমঝোতা আলাপের পরদিনই হোয়াইট হাউসের বৈঠকে উপস্থিত প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর স্ট্যানি হোয়ার বলেছেন, হোয়াইট হাউস যে পদ্ধতিতে অভিবাসন সমস্যার সমাধান করতে চায়, সে ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটরা এখনো একমত নয়।
ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের ওপর অভিবাসী গ্রুপগুলোর প্রচণ্ড চাপ শুরু হয়েছে কোনো সমঝোতার নামে অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত না করার জন্য। আমেরিকাস ভয়েস নামের নাগরিক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ফ্রাঙ্ক শারি বলেছেন, ডেকা কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতার নামে অন্য কর্মসূচি বন্ধের আলোচনা চলতে পারে না। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ডেকা কর্মসূচির লোকজনের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করা হোক।’ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাচ্ছেন এ আইনের সঙ্গে অন্য বিষয় নিয়ে এসে দর-কষাকষি করা। রিপাবলিকানদের এ ফাঁদে পা নেওয়ার জন্য নাগরিক সংগঠনগুলো চাপ শুরু করেছে।
সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের হুইপ ডিক ডারবিন বলেছেন, অভিবাসী গ্রুপগুলোর উৎকণ্ঠা নিয়ে তিনি অবগত আছেন। তিনি বলেন, পরিবার ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে সংযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমেরিকার সমাজের প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ রেখে ডিভি লটারিও চালু হয়েছিল। তিনি বলেন, অভিবাসন বিষয়ে সংস্কারের যেকোনো সমঝোতায় এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। ইলিনয় থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা লুইস গিটারেজ পরিষ্কার অবস্থান নিয়েছেন অভিবাসী গ্রুপগুলোর পক্ষে। বলেছেন, ‘আমরা রিপাবলিকানদের সুবিধামতো গোলপোস্ট পরিবর্তন করতে দিতে পারি না।’ তিনি ডেকা কর্মসূচির জন্য অন্য সব বিষয়ে ছাড় দিয়ে দিলে ডেমোক্র্যাটদের হাতে অভিবাসন নিয়ে আর কিছুই থাকবে না। নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান অ্যাড্রিয়ানো এস্পাইল্যাট বলেন, ডেকা কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতার নামে পারিবারিক অভিবাসন বা ডিভি লটারি সুবিধা বন্ধ করার বিপক্ষে তিনি অবস্থান গ্রহণ করবেন।
অভিবাসন বিষয়ে বিতর্ক অবসানে দুই পর্বে কাজ করতে চান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রথমে ডেকা কর্মসূচি বহাল রাখা এবং পরে অবৈধভাবে বসবাসরত ব্যক্তিদের বৈধতা প্রদান ও পারিবারিক কোটায় পরিবর্তন সাধন। নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করে আসছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিবাসন-বিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অবৈধভাবে বসবাসরত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার অভিযানও জোরদার করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশি প্রবাসী আকায়েদ উল্লাহ নিউইয়র্কে পাইপ বোমা বিস্ফোরণের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আকায়েদকে পারিবারিক অভিবাসনের সঙ্গে যুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। পারিবারিক অভিবাসন বন্ধের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। কৌশলী পথে তিনি হাঁটছেন। পারিবারিক অভিবাসনসহ অভিবাসীদের জন্য সত্যিকারের কোনো সুবিধা যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান না, এ নিয়ে আমেরিকার অভিবাসী মহল, উদারনৈতিক নাগরিক সংগঠনসহ ডেমোক্র্যাটদের কোনো সন্দেহ নেই। ফলে তাদেরও সতর্ক পথে হাঁটার আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।