ডিএসিএ ছাড়ে কঠোর অভিবাসন নীতি চায় হোয়াইট হাউস

অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষার বিনিময়ে কঠোর অভিবাসন নীতির প্রস্তাব করেছে হোয়াইট হাউস। ৫ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব কংগ্রেসে পাঠানো হয়েছে। এতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবসহ কঠোর অভিবাসন নীতির বেশ কিছু নতুন মানদণ্ড অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়াতে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এতে। দেয়াল নির্মাণসহ সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়াতে ১০ বছরে মোট ৩৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের কথা বলা হয়েছে এতে।
সীমান্তের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১০ হাজার বাড়তি অভিবাসন কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আরও কঠোর আইন প্রণয়ন ও ‘তথাকথিত অভয়াশ্রম নগর’ (স্যাংচুয়ারি সিটি)— এর বিপরীতে ফেডারেল তহবিলের পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব তো রয়েছেই। আর এসবই করা হচ্ছে তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষায় বাতিলকৃত প্রকল্প ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারইভালসকে (ডিএসিএ) আইনে রূপান্তরের মুলা ঝুলিয়ে। গত সেপ্টেম্বরে ডিএসিএ বাতিলের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার ইলিনয়ের ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড জে ডারবিন।
হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক এ প্রস্তাব নিয়ে ডারবিন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘দেয়ালের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমনকি গভর্নমেন্ট শাটডাউনও মেনে নিতে রাজি আছেন। আর এই প্রস্তাব বলছে, তিনি সেদিকেই এগোচ্ছেন। তরুণ অভিবাসীদের ভাগ্যকে এভাবে পুঁজি করাটা সত্যি ভয়াবহ। এত দিনের দ্বিদলীয় আলোচনার পরও হোয়াইট হাউস এভাবে কঠোর অভিবাসন নীতি ও দেয়াল নির্মাণে ১৮ বিলিয়ন ডলারের যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ভীষণ হতাশাজনক।’
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১২ সালে তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষায় ডিএসিএ প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে প্রকল্পটির আওতায় বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেন প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার তরুণ অভিবাসী, যারা সাধারণভাবে ড্রিমার নামে পরিচিত। সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি বাতিল করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় তিনি কংগ্রেসকে এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিতে ছয় মাস সময় বেঁধে দেন। এই নিয়ে কংগ্রেসে দুই দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি রিপাবলিকান অনেক নেতাই ড্রিমারদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু তারপরও এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ড্রিমার নবায়ন করতে না পারায় সুরক্ষা হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অভিবাসন আইনজীবীরা।
রিচার্ড জে ডারবিনসহ চার সিনেটর গত দুই মাস ধরেই প্রায় প্রতিদিন ডিএসিএ সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণ অভিবাসীদের নিয়ে আলোচনা করছেন। অন্য সিনেটরদের সবাই রিপাবলিকান দলের। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তাদের মূল বক্তব্যের কেন্দ্রে রয়েছে কঠোর অভিবাসন নীতির বিষয়টি। এ বিষয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানান তারা। কিন্তু এখন হোয়াইট হাউসের প্রস্তাব এই আলোচনাকে শর্তসাপেক্ষে আলোচনায় রূপান্তরিত করেছে বলে জানান তারা।
হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মেক্সিকো সীমান্তজুড়ে প্রায় ২ হাজার মাইল এলাকায় দেয়াল নির্মাণের বিষয়টি। এতে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ জানুয়ারি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে প্রথম জানানো হয়। আর এখনো আলোচনায় আস্থা রাখা সিনেটর ডারবিন বিষয়টি প্রথম সামনে আনেন একই দিন বিকেলে। খবরটি প্রকাশের পর থেকেই ডেমোক্রেট নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন।
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট দলীয় নেতা এবং ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি ন্যান্সি পেলোসি তাঁর টুইটার পোস্টে লেখেন, ‘আপনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) সীমান্তে দেয়াল তুলতে যে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা দিয়ে অন্য খাতে অনেক ভালো কাজ করা যায়।’ পোস্টে তিনি ‘নো ওয়াল’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন।
এদিকে হোয়াইট হাউস যখন এই প্রস্তাব পাঠাচ্ছে, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসে রিপাবলিকান নেতাদের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিডে বৈঠক করছেন। মূলত ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে চালু রাখতে করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্যই তাঁরা বৈঠকে বসেছেন। গভর্নমেন্ট শাটডাউন এড়াতে ১৯ জানুয়ারির আগেই অভ্যন্তরীণ ও সামরিক ব্যয় সংকোচনে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় সংকোচনসহ অভিবাসীদের অভয়াশ্রম হিসেবে স্বীকৃত শহরগুলোর ওপর খড়্গ পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্যাম্প ডেভিডের আলোচনার একটি বড় অংশজুড়েই ডিএসিএর বিনিময়ে কঠোর অভিবাসন নীতি পাস করতে ডেমোক্র্যাটদের রাজি করানোর পন্থা গুরুত্ব পাচ্ছে। একই সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের আরেক দাবি শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেও এখানে পুঁজি করার কৌশল খোঁজা হচ্ছে। এর আগে হোয়াইট হাউসেও বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। কিন্তু ক্যাম্প ডেভিডের আলোচনাকে আরও কৌশলগত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ১৯ জানুয়ারির মধ্যে এসব বিষয়ে দ্বিদলীয় সমঝোতা না হলে তা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের সংকটের কারণ হয়ে উঠতে পারে।