৯১ বছর বয়সেও তিনি তরুণ

লিয়ন ইস্টমন্ড
লিয়ন ইস্টমন্ড

মাত্র ১২ বছর বয়সে কর্মজীবন শুরু। এর পর কেটে গেছে আরও ৭৯ বছর। কিন্তু এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি। অবসরের ভাবনাহীন এই ৯১ বছরের তরুণের নাম লিয়ন ইস্টমন্ড। শুরুর চড়াই-উতরাইয়ের জীবন এখন অনেক স্থিত। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের ১০ লাখ ডলার সমমূল্যের বয়লার কোম্পানির মালিক তিনি। এমন নয় যে অবসর নিলেই সব ধসে যাবে। কিন্তু কর্মী এই মানুষটির অভিধানেই নেই অবসর শব্দটি।
লিয়ন ইস্টমন্ডের কথা সোজাসাপটা। অবসর সম্পর্কে তাঁর ভাবনাটিও অনুপ্রেরণা দিতে পারে অনেককে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনওয়াই১-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘বহু মানুষ কেন অবসর নিয়ে এত চিন্তিত জানো? কারণ তারা নিজেদের কাজ উপভোগ করে না।’
ইস্টমন্ড বয়লার বানান। না একটি দুটি নয়। বয়লার বানানোর কারখানা আছে তাঁর। শুধু কারখানা বললে ভুল হবে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ইসকো আমেরিকারই অন্যতম বড় বয়লার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ১৯২৬ সালে ইস্টমন্ডের বাবা একটি ঝালাই ও মেরামতের দোকান শুরু করেন। সেই দোকানেই তাঁর কর্মজীবন শুরু। আর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সেই দোকানটিকেই তিনি পরিণত করেছেন আমেরিকার অন্যতম বড় বয়লার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে।
ইস্টমন্ড বলেন, ‘তিনি (বাবা) দিনে কাজ করতেন। আর আমি করতাম রাতে।’
১৯৪০ সাল নাগাদ ইস্টমন্ডের এই প্রতিষ্ঠান জ্বালানি ট্যাংক নির্মাণ শুরু করে। একই সঙ্গে বয়লার মেরামতের কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। আর ছিল কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন অনভিপ্রেত সংকটও। তিনি বলেন, ‘চল্লিশের দশকে যখন আমি মানুষের ঘরের দরজায় গিয়ে টোকা দিতাম, মানুষের মনে স্বাভাবিক প্রশ্নটি ছিল, কে এল নৈশভোজে। কিন্তু আমি হাজির হতাম একটি বয়লার বিক্রির জন্য। ভাবুন কেমন ব্যাপার। মাঝে মাঝে লোকেরা আমার প্রতি সদয় হতো। আর আমিও তাঁদের সর্বোচ্চ সেবাটি দেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সাফল্যের ধারণাটি প্রসারিত করতে চেয়েছিলাম।’
ইস্টমন্ডের কোম্পানিতে এখন শতাধিক লোক কাজ করেন। রবার্তো মেন্দোজা তাদেরই একজন। ইস্টমন্ডের প্রতিষ্ঠানে তিনি ৩৩ বছর ধরে কাজ করছেন। শুরু করেছিলেন শ্রমিক হিসেবে। এখন তিনি তত্ত্বাবধায়কদের একজন। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তাঁর মত হচ্ছে, ‘এটা দারুণ একটি কোম্পানি। কর্মীদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ এখানে রয়েছে।’
৭৯ বছরের পথ পরিক্রমায় লিয়ন ইস্টমন্ডের প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেক বড়। বর্তমানে বছরে আড়াই শ বয়লার উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এর ক্রেতার তালিকায় রয়েছে ইয়াংকি স্টেডিয়াম ও ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠান। তবে ইস্টমন্ড এখন আর একার হাতে সামলাতে পারেন না প্রতিষ্ঠানটি। এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করে তাঁর নাতি। ইসকো’র চিফ স্টাফ হিসেবে সব দায়িত্ব সামলান টাইরেন ইস্টমন্ড। তিনি বলেন, ‘বংশপরম্পরায় একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়াটা আমার কাছে বিশেষ কিছু। আমার দাদার বাবার হাতে এই প্রতিষ্ঠানের পত্তন। আর তাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন আমার দাদা, যিনি এখনো প্রতিদিন নিজের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করছেন। আমরা শুধু তাঁকে সাহায্য করছি। এটা আমার জন্য ভীষণ আনন্দদায়ক।’
মাঝে মহামন্দার সময় বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হলেও এখন ইসকো’র অবস্থা বেশ ভালো। লিয়ন ইস্টমন্ড জানান, ‘এই বছর ১২ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর আমি এখনো অবসরের কথা ভাবছি না। কারণ আমি আমার কাজকে ভালোবাসি।’