মধ্যযুগে ফিরে যাওয়া নয়

মনোবিজ্ঞান বলে, মানুষের মনের ভেতরে দুটি সত্তার বাস। একটি পশুত্ব, অন্যটি দেবত্ব। দেবত্বকে পেছনে হটিয়ে পশুত্ব যখন মানুষের মনোজগৎকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করে, তখনই মানুষ খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। অন্যদিকে দেবত্ব চালকের আসনে থাকলে মানুষ খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। অর্থাৎ দুটি শক্তির একটি যখন সক্রিয় থাকে, অন্যটি তখন সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তবে সভ্যতার কল্যাণে মানুষ অন্তত এটুকু শিখেছে যে, মনোজগতের দানবীয় শক্তিকে পরাস্ত করে শুভ কাজে মনোনিবেশ করাই সভ্য মানুষের কাজ।
তারপরও কথা থেকে যায়। ধর্ম বিদ্বেষ, বর্ণ বিদ্বেষ, গোত্র ও জাতিগত বৈষম্য এখনো বিদ্যমান, যার পেছনে শক্তি হিসেবে কাজ করছে মানুষ ও তাদের ভেতরের দানবীয় শক্তি। ধর্মীয় ও বর্ণ পরিচয়ের কারণে কারও প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষপ্রসূত আচরণকে আজকাল বলা হচ্ছে ‘হেইট ক্রাইম’। আমেরিকাতে এ ধরনের অপরাধ ছড়িয়ে পড়ার পটভূমিতে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু গণমাধ্যম দিচ্ছে বিস্ময়কর তথ্য। খোদ নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) সদস্যরাই ইদানীং হেইট ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি ব্রঙ্কস কাউন্টির ট্রানজিট ডিস্ট্রিক্ট-১১-এর পাঁচজন অফিসারের লকারে উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণার বার্তা লেখা চিরকুট পাওয়া গেছে। এঁদের মধ্যে চারজনই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। আর এই চারজনের মধ্যে তিনজনই মুসলিম।
কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, সেনাবাহিনী থেকে আসা শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্যদের একটি পক্ষ এই কাজটি করে থাকতে পারেন। কেননা কতিপয় মুসলিম চৌকস কর্মকর্তা তাঁদের সমপরিমাণ দায়িত্ব ও ভাতা পাচ্ছেন, এটা তাঁদের পছন্দ না। এ অবস্থায় অনেকই ধরে নিচ্ছেন, মুসলিম বিদ্বেষ থেকেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য হেইট ক্রাইমের আশ্রয় নিয়েছেন। অবশ্য আরেকটি কারণও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেটা হলো অশ্বেতাঙ্গ বা বর্ণ বিদ্বেষ। এমন ধারণার অন্যতম কারণ হলো চিরকুট পাওয়া দলে একজন অমুসলিমও আছে। সুতরাং বলা যায়, যারা নিজ সহকর্মীদের লকারে চিরকুট রেখেছেন, তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষের পাশাপাশি বর্ণ বিদ্বেষও কাজ করেছে।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে হেইট ক্রাইমকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সুতরাং পুলিশ সদস্যরা যদি এ ধরনের অপরাধ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তারা চলমান বৈশ্বিক ঘটনা প্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কমিউনিটিতে উত্তেজনা ছড়ানোর কোনো অবকাশ থাকা উচিত নয়। কারণ নিউ ইয়র্ক পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছে। আশা করা যায় তারা অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হবে।