অচলাবস্থার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যা যা ঘটছে

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ন্যাশনাল গার্ডের একটি পদাতিক বাহিনীকে তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অথচ এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এক বছর চলার কথা ছিল। দেশজুড়ে ফ্লুয়ের নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে গেছে। এর সবই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অচলাবস্থার কারণে। বাজেটে অর্থ বরাদ্দ-সংক্রান্ত একটি বিল মার্কিন সিনেটে আটকে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি হয়।

গত শনিবার স্থানীয় সময় সকাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রমের একটি বড় অংশ বাস্তবিক অর্থেই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আমলাতন্ত্র এখনো সচল রয়েছে। এ ছাড়া সচল রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী, ডাক বিভাগসহ কিছু জরুরি পরিষেবা।

কেন্দ্রীয় সরকার বাজেট বরাদ্দ না পাওয়ায় সর্বপ্রথম এর জন্য ভুগতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই। হোয়াইট হাউসের তিন-পঞ্চমাংশ কর্মী সাময়িক ছুটিতে যাবেন। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কার্যক্রম পুরোদমে চললেও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ৬০ শতাংশ কাজে যোগ দিতে পারবেন না। বাকি সহযোগীরা হোয়াইট হাউসে যেতে বা টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারলেও প্রতিদিন এর জন্য সময় বরাদ্দ থাকবে মাত্র চার ঘণ্টা।

কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন বেসামরিক প্রশাসনের অনেক কর্মীই বেকার বা বাধ্যতামূলক সাময়িক ছুটিতে থাকবেন। এর মধ্যে আবাসন ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী ছুটিতে থাকবেন। এই দপ্তরে কর্মী রয়েছেন প্রায় ৮ হাজার। তাঁদের ৯৬ শতাংশই কাজে যোগ দিতে পারবেন না। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার ১৪ হাজার ৪০০ কর্মীর ৯৫ শতাংশ, শিক্ষা বিভাগের প্রায় ৪ হাজার কর্মীর ৯৫ শতাংশ, বাণিজ্য বিভাগের প্রায় ৪৮ হাজার কর্মীর ৮৭ শতাংশ, শ্রম দপ্তরের প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কর্মীর ৮৩ শতাংশ এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ৭০ হাজার ৪০০ কর্মীর ৮০ শতাংশ ছুটিতে যাবেন। এ ছাড়া অর্থ, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা (বেসামরিক বিভাগ), যোগাযোগ, বিচার, সামাজিক সুরক্ষা প্রশাসন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বয়োজ্যেষ্ঠ সম্পর্কিত দপ্তরেরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মীর কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম বন্ধ না হলেও সেনাসদস্যদের পারিশ্রমিক বন্ধ থাকবে এই সময়টায়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ওপর এই অচলাবস্থার প্রভাব খুব একটা পড়বে না বলে দাবি করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের মতো কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। তবে বন্ধ থাকবে ন্যাশনাল পার্কের সেবা কার্যালয়গুলো। অর্থাৎ, এসব পার্কের অভ্যর্থনাকক্ষগুলো পরিষ্কার, আবর্জনা সংগ্রহ কিংবা সড়কগুলো পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

পার্কগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্কস কনজারভেশন অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী থেরেসা পিয়েরনো বলেছেন, এসব পার্কের ফটক খোলা থাকবে, দর্শনার্থীরা প্রবেশও করতে পারবেন, কিন্তু সেখানে তাঁদের বা পার্কের সম্পদ সুরক্ষায় দৃশ্যত কোনো কর্মী থাকবেন না। এতে কাণ্ডজ্ঞানহীনতারই প্রকাশ ঘটবে।

স্মিথসোনিয়ান ও ন্যাশনাল জু (চিড়িয়াখানা) অবশ্য আজ সোমবার পর্যন্ত অন্তত খোলা থাকবে। তবে পার্ক পরিষেবাগুলোকে জানানো হয়েছে, এই বিভাগের ২৪ হাজার ৬৮১ জন কর্মীর মধ্যে ২১ হাজার ৩৮৩ জনকেই ছুটিতে যেতে হবে।

পেন্টাগন পুরোদমে কার্যক্রমে থাকার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেও সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অনেকাংশেই সীমিত হয়ে আসছে কেন্দ্রীয় সরকারের অচলাবস্থার কারণে। এরই মধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনায় প্রশিক্ষণরত একটি পদাতিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেনাসদস্যরা যেমন তাঁদের অস্ত্র গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন, একইভাবে ট্যাংকগুলো ফিরে যেতে শুরু করেছে ব্যারাকে।