যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকার ফের সচল হলো

সরকার চালু করতে সম্মত হওয়ার পর উচ্ছ্বাসিত সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল। ছবি: রয়টার্স
সরকার চালু করতে সম্মত হওয়ার পর উচ্ছ্বাসিত সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল। ছবি: রয়টার্স

তিন দিন থমকে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার আবার সচল হয়েছে। গত সোমবার কংগ্রেসের উভয় কক্ষ পরবর্তী ১৭ দিনের জন্য সরকার চালাতে অর্থ বরাদ্দে সম্মত হওয়ায় অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। তবে ১৭ দিন পর ঠিক একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সরকার চালু করতে সম্মত হওয়ার বদলে ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরা সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেলের কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন যে পরবর্তী দুই সপ্তাহে ‘ডাকা’ প্রশ্নে কোনো মীমাংসা অর্জিত না হলে ৮ ফেব্রুয়ারির পর তিনি সিনেটে এই প্রশ্নে বিতর্ক শুরু করার অনুমতি দেবেন। এই প্রশ্নে কোনো মীমাংসা অর্জিত হবে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি অবশ্য সিনেট রিপাবলিকানরা দেয়নি। সিনেটে বিতর্ক শুরুর প্রতিশ্রুতি থাকলেও প্রতিনিধি পরিষদও একই পথ অনুসরণ করবে, তা মনে করারও কোনো কারণ নেই। কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই কোনো সমাধান অর্জন সম্ভব হবে। তাঁর মনঃপূত না হলে ‘ডাকা’ প্রশ্নে কোনো আইনে স্বাক্ষর করবেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেন না।

অধিকাংশ ভাষ্যকারই একমত, ‘ডাকা’ প্রশ্নে সরকার বন্ধের সিদ্ধান্ত ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি কৌশলগত ভুল ছিল। একইভাবে ‘ডাকা’ প্রশ্নে সমাধানের কোনো নিশ্চয়তা ছাড়া সরকার সচল করার সিদ্ধান্তে এত দ্রুত সম্মত হয়ে তারা রিপাবলিকানদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করেছে, রিপাবলিকানদের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে ডেমোক্র্যাটরা হার মানতে বাধ্য হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও মনে করেন, এই লড়াইয়ে তাঁরই জয় হয়েছে। এক টুইটার বার্তায় তিনি মন্তব্য করেন, ‘ডেমোক্র্যাটদের যে সুমতি হয়েছে, তাতে তিনি খুশি।’

ফেডারেল সরকার বন্ধের কেন্দ্রে ছিল ‘ডাকা’ প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটদের অনড় অবস্থান। উল্লেখ্য, ‘ডাকা’ কর্মসূচির অধীনে প্রায় ৮ লাখ অবৈধ তরুণ-তরুণী, যারা শিশু অবস্থায় এ দেশে পিতামাতার সঙ্গে এসেছিল, ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা এক নির্বাহী আদেশে তাদের সাময়িক বৈধতা প্রদান করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই আদেশ বাতিল করে ৫ মার্চের মধ্যে এই প্রশ্নে সমাধান অর্জনের জন্য কংগ্রেসের কাছে সময় বেঁধে দেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ‘ডাকা’ সদস্যদের বৈধতার পক্ষে, তবে এর বদলে তিনি তাঁর প্রস্তাবিত সীমান্ত দেয়ালের জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ চান। পাশাপাশি তিনি সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি, পারিবারিক ভিসা বন্ধ ও ডিভি ‘লটারি’ ভিসা-ব্যবস্থা বাতিলেরও পক্ষে।

জানা গেছে, সরকার বন্ধের কৌশলটি তাঁদের বিপক্ষে যাচ্ছে, তা টের পেয়ে বাধ্য হয়েই ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব সরকার খুলে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেন। তাঁর সিদ্ধান্তের সমর্থনে ডেমোক্রেটিক নেতা সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘ডাকা’ প্রশ্নে সিনেটে আলোচনা হবে। চাক শুমার স্বীকার করেছেন, এই সিদ্ধান্তে সবাই খুশি হননি, তা তিনি জানেন। কিন্তু সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার জন্য এ ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় ছিল না।

ম্যাককনেল যে তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখবেন, এ কথা অনেক ডেমোক্রেটিক নেতা বিশ্বাস করেন না। ২০২০ সালের নির্বাচনে যেসব ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে আগ্রহী, তাঁদের অনেকেই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের একজন হলেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সিনেটর কমলা হ্যারিস। তিনি চাক শুমারের সমালোচনা করে বলেন, মিচ ম্যাককনেল এমন কোনো নিশ্চয়তা দেননি যে বিষয়টি মীমাংসা করতে তিনি আগ্রহী। সে রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে যাঁরা ভাবেন, তাঁরা আসলে বোকামি করছেন।

সবচেয়ে ক্রুদ্ধ হয়েছে দলের সেই সব তৃণমূল সংগঠন, যারা অবিলম্বে ডাকা সদস্যদের বৈধতা প্রদানে আগ্রহী। ক্রেডো নামের একটি সংগঠনের পরিচালক মুর্শিদ জাহিদ বলেছেন, যাঁরা ম্যাককনেল বা ট্রাম্পের মতো নির্বিকার মিথ্যাচারীদের কথার ভিত্তিতে অভিবাসন সমস্যার সমাধান আশা করেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করেন।

মঙ্গলবার থেকে ফেডারেল সরকার খুলে গেলেও বাজেট প্রশ্নে এটাই সম্ভবত শেষ সংকট নয়। ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘ডাকা’ ও অভিবাসন প্রশ্নে দুই দল কোনো সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হলে আবারও সরকার বন্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তেমন ঘটনা ঘটলে মাত্র তিন দিনের মধ্যে সংকট মিটে যাবে, তা মনে হয় না।