ট্রাম্পের নতুন কৌশল

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ‘ডাকা’ নামে পরিচিত কর্মসূচির অধীনে প্রায় ১৮ লাখ অবৈধ অভিবাসী তরুণ-তরুণীর বৈধতা দিতে প্রস্তুত আছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁরা বৈধভাবে থাকার এবং কাজ করার সুযোগ পাবেন। কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে পড়লে পরবর্তী ১০-১২ বছরের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভের যোগ্যতা অর্জন করবেন এই তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু এর বিনিময়ে মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণ করতে কংগ্রেসকে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।

ডেফর্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) কর্মসূচির অধীনে প্রায় ৮ লাখ তরুণ-তরুণীর বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে মাত্র এক সপ্তাহ আগেই মার্কিন কংগ্রেসে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম বন্ধ ছিল তিন দিন। পরে সাময়িক সময়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে একমত হন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক দলের সদস্যরা। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকা প্রশ্নে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে আবারও ফেডারেল সরকার অচল হয়ে যেতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বরাত দিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট শুধু ৮ লাখ নয়, মোট ১৮ লাখ অবৈধ ব্যক্তির বৈধতা দিতে প্রস্তুত। এই অতিরিক্ত ১০ লাখ হলেন সেই সব ব্যক্তি, যাঁরা শিশুকালে মা-বাবার সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন কিন্তু ডাকা কর্মসূচির অধীনে বৈধতার জন্য আবেদন করেননি।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের সঙ্গে একাধিক শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে তাঁর প্রস্তাবিত দেয়ালের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ মঞ্জুর করতে হবে। এর আগে ট্রাম্প ১৮ বিলিয়ন দাবি করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি দেয়াল নির্মাণ ছাড়াও দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দাবি করছেন। এ ছাড়া তিনি অভিবাসন-ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘পারিবারিক ভিসা’ ও ডিভি লটারির ব্যবস্থা বাতিল এবং সব অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কারের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি তুলেছেন।

ট্রাম্পের অভিবাসন-বিষয়ক অন্যতম উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের বিশ্বাস, এই প্রস্তাবের পক্ষে সিনেটে প্রয়োজনীয় ৬০টি ভোট পাওয়া যাবে। ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করা হবে বলে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোর ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।

কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা বাতিল করে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ডাকা কর্মসূচির অন্তর্গত তরুণ-তরুণীদের নিয়ে একধরনের জুয়া খেলায় নেমেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কংগ্রেসে হিস্পানিক সদস্যদের প্রধান মিশেল গ্রিশাম বলেছেন, এই সব তরুণ-তরুণীকে দাবার ঘুঁটি বানাতে দেওয়া হবে না।

রিপাবলিকান সদস্যদের অনেকেই প্রস্তাবটির ব্যাপারে তাঁদের আপত্তির কথা বলেছেন। মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কাঠামোর বাইরে সমঝোতা অর্জনের জন্য উভয় দলের সদস্যরা যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, তা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখযোগ্য, সিনেটর সুসান কলিন্সের নেতৃত্বে দুই দলের প্রায় ২০ জন সিনেটরের একটি দ্বিপক্ষীয় প্রতিনিধিদল ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকা প্রশ্নে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন রক্ষণশীল রিপাবলিকান মহলেও প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবকে অবৈধদের প্রতি ঢালাও ক্ষমা (বা অ্যামনেস্টি) বলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। প্রভাবশীল রক্ষণশীল ওয়েবসাইট ব্রেইটবার্ট বলেছে, এই প্রস্তাবের পর ট্রাম্পের নাম দেওয়া উচিত ‘অ্যামনেস্টি-ইন-চিফ’।

হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, ডাকা প্রশ্নে ট্রাম্প যে প্রস্তাব করেছেন, তা অত্যন্ত উদার। হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ডাকা প্রশ্নের সমাধান না হলে ৫ মার্চের পর এই কর্মসূচির অন্তর্গত সবাই বহিষ্কারের সম্মুখীন হতে পারেন।

 ট্রাম্পের দুঃখ প্রকাশ

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থী সংগঠন ব্রিটেন ফার্স্টের মুসলিমবিদ্বেষী ভিডিও রিটুইট করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত নভেম্বর মাসে ওই ভিডিও রিটুইট করেন। এরপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ট্রাম্পের ওই কাণ্ডের জন্য প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। ট্রাম্পও এর জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইটিভির ‘গুড মর্নিং ব্রিটেন’ অনুষ্ঠানে গতকাল এ ব্যাপারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বলেন যে তারা (ব্রিটেন ফার্স্ট) ভয়ংকর বর্ণবাদী, তাহলে আমি নিশ্চিতভাবেই দুঃখ প্রকাশ করব, যদি আপনারা তা চান।’