আয়কর দাখিলে সামান্য ভুল বিপদ ডেকে আনতে পারে

শুরু হচ্ছে ২০১৮ সালের ট্যাক্স রিটার্নের পালা। এরই মধ্যে যারা আগে আগে ট্যাক্স রিটার্নের টাকা ফেরত পেতে আগ্রহী, তাঁরা নিশ্চয়ই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকেই পরিচিতজনকে দিয়ে ট্যাক্স ফাইল করান, আবার অনেকে নিজে ট্যাক্স ফাইল জমা দেন। এটা করতে গিয়ে আইআরএসের খড়্গে যেন না পড়েন, সে জন্য বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন, ট্যাক্স পেশাজীবীরা। বিশেষত, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই আমলে সামান্যতম আয়কর-সংক্রান্ত অপরাধ যেন কেউ না করেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ট্যাক্স এনরোল এজেন্ট ওয়াসী চৌধুরী বলেছেন, অনেকেই মনে করেন, ট্যাক্স ফাইল মানেই হলো কিছু সংখ্যা এদিক-ওদিক বসিয়ে দিয়ে একটা হিসাব জমা দেওয়া। কিন্তু এটা করতে গিয়ে সাবধান হতে হবে। এমন কিছু ব্যয় দেখানো উচিত নয়, যেটা তাঁর জীবনযাত্রার সঙ্গে যায় না। আবার অনেকেই ডোনেশনকে ব্যয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন; সেখানে অবশ্যই প্রমাণ রাখতে হবে, না হলে ছোটখাটো ভুলের মাশুল গোনা লাগতে পারে। উপযুক্ত রসিদ বা ডকুমেন্ট ছাড়া যেকোনো ধরনের ডিডাকশন পরবর্তী সময়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
জ্যাকসন হাইটসের কর্ণফুলী ট্যাক্স সার্ভিসেসের প্রধান এনরোল এজেন্ট মোহাম্মদ হাসেম বলেছেন একই কথা। তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্যাক্স পরিকল্পনার বাড়তি সুবিধা নিতে অনেকেই এ বছর ট্যাক্স নিয়ে একটু বেশি জানার চেষ্টা করছেন। তবে নতুন যে ট্যাক্স আইন হয়েছে, তার কার্যকারিতা এ বছরে নয়, ২১০৯ সালের ট্যাক্স রিটার্নে পাওয়া যাবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ট্যাক্স কাট অ্যান্ড জব অ্যাক্ট’ প্রভাব ফেলবে আগামী ট্যাক্স সিজনে। গত ২০ ডিসেম্বর কংগ্রেসে পাস হওয়া নতুন ট্যাক্স রিফর্ম প্রভাব ফেলবে না এই ট্যাক্স সিজনে। নতুন ট্যাক্স রিফর্ম কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন করব্যবস্থায় শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়। ট্রাম্প তাঁর কর বিলকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য একটি ‘চমৎকার ও বড় ধরনের বড়দিনের উপহার’ বলে মন্তব্য করেন। নতুন কর আইনে সাতটি ট্যাক্স রেট নতুন হারে ধার্য করা হয়েছে। তবে এ বছর সবাইকে আগের নিয়মেই ট্যাক্স ফাইল করতে হবে।

কেউ যদি প্রথমবার ট্যাক্স ফাইল করার জন্য যোগ্য হন, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে নিয়মকানুন দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা। সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর ট্যাক্স ফাইল করতে গিয়ে কয়েকটি বিষয়ের পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে হবে।
১. রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান: যেসব কর্মী আগের ফাইল ৪০১ বা ৪০৩ বা ৪৫৭ ধারায় রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানে সেভিং করছিলেন, তাঁদের লিমিট আগের বছরের ১৮ হাজার ডলার থেকে ৫ ডলার বাড়িয়ে এখন নতুন ১৮ হাজার ৫০০ ডলার ধার্য করা হয়েছে।
২. আইআরএসের ডিডাক্টেবল কন্ট্রিবিউশন: যাঁরা এককভাবে (সিঙ্গেল ট্যাক্সপেয়ার) ডিডাক্টেবল বা খরচের খাত দেখান, তাঁদের জন্য একধরনের সীমা, ৬৩ হাজার থেকে ৭৩ হাজার ডলার করা হয়েছে। যাঁরা বিবাহিত ও যৌথভাবে জমা দেন, তাঁদের জন্য এ সীমা ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ডলার। এ ক্ষেত্রে একজন একক ব্যক্তি যাঁর রিটায়ারমেন্ট সেভিংস নেই, কিন্তু যাঁর সঙ্গে বসবাস করছেন তাঁর রয়েছে, সেখানে এই সীমা ১ লাখ ৮৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯৯ হাজার ডলার করা হয়েছে।
৩. যাঁরা বিবাহিত এবং একসঙ্গে ট্যাক্স ফাইল করছেন, তাঁদের ডিডাক্টেবল আয় আগের ১২ হাজার ৭০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ডলার করা হয়েছে।
৪. ব্যক্তিগত খরচ যেটা ঊহ্য রাখা যাবে তাঁর পরিমাণ ১০০ ডলার থেকে ৪ হাজার ১৫০ ডলার পর্যন্ত করা হয়েছে।
৫. যাঁদের আয় ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ ডলারের ওপর, তাঁদের জন্য ট্যাক্স রেট ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ করে কার্যকর হবে।
এ ধরনের আরও অনেক সূক্ষ্ম বিষয় আছে, যেগুলো নজরে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন ট্যাক্স বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে আইআরএসের চিঠি পাওয়ার বিড়ম্বনা এড়াতে আর ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার আইনি জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনে ট্যাক্স বিষয়ে যাঁরা জানেন এবং অভিজ্ঞ, তাঁদের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন আইনজীবীরা।