আট কোম্পানির বিরুদ্ধে নগর কর্তৃপক্ষের মামলা

মাদকাসক্ত হতে পারে এমন ওষুধের (উচ্চ মাত্রার ব্যথানাশক) ব্যবস্থাপত্র দেওয়া ও এর বিপণনের দায়ে চার ওষুধ কোম্পানি ও চার বিপণন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ।
নিউইয়র্ক নগরে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের নির্দেশিত ওষুধের অতি ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট মাদকাসক্তি মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আট কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিল নগর কর্তৃপক্ষ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে অ্যালারগান, এন্ডো ইন্টারন্যাশনাল, জনসন অ্যান্ড জনসন, পারডিউ এলপি, টেভা ফার্মাসিউটিক্যালস, আমেরিসোর্সবারজেন, কার্ডিনাল হেলথ ও ম্যাককেসন। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জনবিশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিউইয়র্ক নগরের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেন, এই সংকট মোকাবিলায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হয়েছে। কারণ এভাবে সৃষ্ট মাদকাসক্তির কারণে ২০১৬ সালে ১ হাজার ১০০ মানুষ মারা গেছে, যা আত্মহত্যা ও গাড়ি দুর্ঘটনায় মোট নিহত হওয়ার সংখ্যার চেয়েও বেশি। আর এই মহামারির পেছনে বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। মুনাফার দিকে নজর দিতে গিয়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়া এই সংকটকে তারা কোনো আমলেই নেয়নি।
এই মামলার পর পৃথক বিবৃতি দিয়েছে অ্যালারগান, এন্ডো ইন্টারন্যাশনাল, জনসন অ্যান্ড জনসন, পারডিউ এলপি, টেভা ফার্মাসিউটিক্যালস, আমেরিসোর্সবারজেন ও ম্যাককেসন। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সতর্কতার সঙ্গে ওপয়েড বা মাদকাসক্তি তৈরি করতে পারে এমন ওষুধ ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
এন্ডো, জনসন অ্যান্ড জনসন ও পারডিউ নগর কর্তৃপক্ষের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ম্যাককেসন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আর মন্তব্যের জন্য কার্ডিনাল হেলথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স।
ওষুধের অতি ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট মাদকাসক্তিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নিউইয়র্কসহ সারা দেশেই
এই সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বহু
অঙ্গরাজ্যেই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয়েছে।
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ব্যবস্থাপত্রে নির্দেশিত বিভিন্ন ব্যথানাশকের কারণে সৃষ্ট মাদকাসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা দিনদিন মহামারির রূপ নিচ্ছে। ২০১৬ সালে আমেরিকায় শুধু এই কারণেই মারা গেছে ৪২ হাজার ২৪৯ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। আর ২০১৪ সালের তুলনায় এই মৃত্যুর হার ৪৭ শতাংশ বেশি।
এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল নিউইয়র্ক। ম্যানহাটনে দায়ের করা মামলায় নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো গত দুই দশক ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তারা ব্যথানাশকের গুরুত্ব তুলে ধরলেও এর অতিব্যবহার রোধে কিছুই করছে না। শুধু তাই নয়, এই অতিব্যবহারকে প্রকারান্তরে উৎসাহ দিচ্ছে বিপণন সংস্থাগুলো। ২০১৪-১৬ সময়ে শুধু নিউইয়র্কেই আড়াই মিলিয়ন ব্যবস্থাপত্রে ব্যথানাশকের উল্লেখ করা হয়েছে।