ব্রঙ্কসের সেই উদ্ধারকর্মীর নামে নিউইয়র্কের সড়কের নাম

নিউইয়র্ক নগরের ব্রঙ্কসের প্রসপেক্ট অ্যাভিনিউয়ের আগুনে মারা গিয়েছিলেন ১২ জন। আর বাকিদের অনেকে হয়েছিলেন গুরুতর আহত। কিন্তু এই অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা হয়তো আরও অনেক বাড়তে পারত, যদি না সেখানে ইমানুয়েল মেনসাহের মতো উদ্ধারকর্মী না থাকতেন। ভয়াবহ সেই আগুন থেকে মানুষকে বাঁচাতে তিনি চারবার ভবনটিতে ঢুকেছিলেন। অন্য অনেককে বাঁচাতে পারলেও নিজে শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। তাঁর এই আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে নিউইয়র্কের একটি সড়কের নাম তাঁর নামে করা হচ্ছে।
ব্রঙ্কসের অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য একটি তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে। ২২ জানুয়ারি এই তহবিলের পরিমাণ ঘোষণা করা হয়। এ দিন ব্রঙ্কসের একটি গির্জায় উপস্থিত সবার সামনে অন্য ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এই তহবিলের পরিমাণ ঘোষণা করেন স্থানীয় কাউন্সিলম্যান রিচি টোরেস। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অর্থ হতাহতদের পরিবারকে সহায়তার জন্য ব্যয় করা হবে। একই সঙ্গে ব্রঙ্কসের একটি সড়কের নাম ইমানুয়েল মেনসাহের নামে রাখা হবে বলেও তিনি জানান।
গত ২৮ ডিসেম্বর ব্রঙ্কসের প্রোসপেক্ট অ্যাভিনিউর একটি ছয়তলা ভবনে আগুন লাগে। প্রচণ্ড ঠান্ডার ওই রাতে লাগা আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। এতে শিশুসহ নিহত হয় ১২ জন। অগ্নিকাণ্ডের সময় ছুটি কাটাতে আসা ইমানুয়েল মেনসাহ নিউইয়র্কেই ছিলেন। ছুটি তাঁকে দায়িত্ব ভোলাতে পারেনি। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ ছুটে যান উদ্ধারকাজে অংশ নিতে। চারজনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন তিনি। অন্যদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও তিনি নিজে শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। পাঁচতলায় আরও কয়েকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করার সময় তিনি মারা যান। ঘানা বংশোদ্ভূত এই তরুণ সেনা নিজের জীবন দিয়ে অন্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। নিউইয়র্ক শহরের বাসিন্দারাও তাঁর এই আত্মত্যাগকে ভুলে যায়নি। শুধু সড়কের নামকরণ নয়, মেনসাহকে সেনাবাহিনী থেকে দেওয়া হচ্ছে সোলজার মেডেল ও মেডেল অব ভেলোর। নিউইয়র্কের আইন প্রণেতারা সড়কের নামকরণ ছাড়াও তাঁকে আরও নানাভাবে সম্মান জানানোর পরিকল্পনা করছেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইমানুয়েল মেনসাহের বাবা কাবেনা মেনসাহ বলেন, ‘এটা অনেক বড় কিছু। ওই ঘটনার পর থেকে আমাদের অনেক বাজে সময় যাচ্ছে। সে একজন নায়ক। তার নামে সড়ক হলে আমাদের শোকে কিছুটা প্রলেপ পড়তে পারে। তার প্রতি সম্মান জানানোর অনেক ভালো একটি পন্থা হতে পারে এটি। সে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। কিন্তু হয়তো ওই সড়কের নাম যখন আমি দেখব, তখন হয়তো মনে হবে সে আছে আমাদের আশপাশেই।’
নিউইয়র্ক ডেইলিকে তিনি বলেন, ‘সে সব সময়ই চাইত দেশের সেবা করতে। এই দেশে আসার পর থেকেই সে এ জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইত। আমি গর্বিত যে, সে যা চেয়েছে তা-ই পেয়েছে। কিন্তু এটা আমাদের পরিবার, বিশেষত আমার মেয়ের জন্য অনেক বড় একটি আঘাত। সে এখন হাসপাতালে। শোক ভুলতে পারছে না। বলছে, সে তার ভাইকে দেখছে দগ্ধ হতে।’
ব্রঙ্কসের আওয়ার লেডি অব কারমেল গির্জায় ওই সমাবেশের সময় টোরেস উপস্থিত সবাইকে হতাহতদের সহায়তায় এই তহবিল সংগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ যতটা উন্নতি করেছি, তার পেছনে রয়েছে আমাদের সবার অংশীদারত্ব।’
এই সহায়তার পাশাপাশি এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের সঙ্গে সঙ্গে নায়কদেরও মনে রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই দেশ বা সমাজ যা চায় তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু দিয়েছেন ইমানুয়েল মেনসাহ। তাঁকে আমাদের চিরস্মরণীয় করে রাখা উচিত। আমরা তাই করব। কারণ আমাদের অন্ধকার ও কঠিন সময়ে তাঁর এই সাহসিকতাই আমাদের পথ দেখাবে।’