অভিবাসন ঝামেলা এড়াতে আইন মেনে চলতে হবে

অভিবাসন আইন ও আয়করবিষয়ক এক সেমিনারে আসা অতিথিরা
অভিবাসন আইন ও আয়করবিষয়ক এক সেমিনারে আসা অতিথিরা

আইনজীবী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অভিবাসন এজেন্টরা বাড়িতে এসে দরজায় টোকা দিলেও তা খোলা যাবে না। ভেতর থেকেই কথা বলতে হবে এবং এজেন্টদের জানিয়ে দিতে হবে, নিযুক্ত অ্যাটর্নির পরামর্শ ছাড়া দরজা খোলা হবে না।
নিউইয়র্কে অভিবাসন আইন ও আয়করবিষয়ক এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এমন পরামর্শ দিয়েছেন। ল অফিস অব ব্যারি সিলভার ও সিপিএ ইয়াকুব খানের তত্ত্বাবধানে ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে অভিবাসন আইন ও আয়করবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে বক্তারা অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নানা পরামর্শ তুলে ধরেন।
অবৈধ অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে বিতাড়নে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ধরপাকড়সহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে অভিবাসীরা, বিশেষ করে কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সেমিনারে প্রবাসীদের উদ্দেশে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভিবাসন আইনে বিশেষভাবে অভিজ্ঞ অ্যাটর্নির পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সেমিনারে পরিবর্তিত অভিবাসন আইন, পরিবর্তিত আয়কর ও চাকরি বিধি, রাজনৈতিক আশ্রয়, পরিবার ও স্বজনদের সুবাদে অভিবাসন, পারিবারিক ভিসা, ‘ডাকা’ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ, ব্যাংক দেউলিয়া আইন, রিয়েল এস্টেট ও ক্লোজিং, বিমা ইত্যাদির ওপর গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞ প্যানেল সদস্যরা। তাঁরা অবৈধ অভিবাসীদের আইনি পরামর্শ ছাড়াও নতুন আয়কর আইনের পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় সম্পর্কেও সেমিনারে তুলে ধরেন। এটি ছিল আয়োজকদের অষ্টম বার্ষিক ফ্রি সেমিনার।
সেমিনারে কি-নোট স্পিকার ছিলেন সাবেক বিচারক রুথ ক্র্যাফট। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার। প্যানেল সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সিপিএ ইয়াকুব এ খান, ইনস্যুরেন্স ব্যবসায়ী ও এ খাতে বিশেষজ্ঞ মো. শাহ নেওয়াজ, অ্যাটর্নি ফেরদৌসী চৌধুরী, কেন সিলভারম্যান, মার্ক লিভিংটন ও এলেন কাস। সেমিনারে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইন মেনে চললে ও কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হলে ভয়ের কিছু নেই। তবে ধরপাকড় এড়াতে অভিজ্ঞ অ্যাটর্নির পরামর্শ শুনে চলাফেরা করা, কোনো ঝগড়াঝাঁটি কিংবা হাঙ্গামায় লিপ্ত না হওয়া, গাড়ি চালানোর সময় ট্রাফিক আইন মেনে চলা, পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে—চলতি পথে থামাতে পারে, এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটিও পরিহার করতে হবে। সেমিনারে অভিবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিবাসনসংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করার পরামর্শ দেন তাঁরা।
আমেরিকায় ব্যবসা করে কীভাবে গ্রিন কার্ড পাওয়া যায়, পুরোনো মামলা কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করে গ্রিন কার্ড পাওয়া যায়, গৃহবিবাদ, বিবাহবিচ্ছেদসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন প্যানেল সদস্যরা। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে আমেরিকা ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকারও পরামর্শ দেন। প্রবাসী আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার সেমিনারে অংশ নেওয়া প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আইনি সহায়তা দিতে ভবিষ্যতে প্রতিবছরই এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করা হবে।
মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, সেমিনারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিভিন্ন বিষয়ে আইনি জটিলতা সমাধানের কিছু বিষয় তুলে ধরা, যাতে কমিউনিটির মানুষ প্রচলিত আইন ও বিধানের আওতায় সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা ভোগ ও উপকৃত হতে পারেন। সেমিনার ছাড়াও যেকোনো সময় অভিবাসনসহ বিভিন্ন আইনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য সবাইকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারে বাংলাদেশি আমেরিকান সিপিএ ইয়াকুব এ খান পরিবর্তিত আয়কর ও চাকরি আইন, আয়কর ফাইল দাখিল, ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়কর, ব্যবসা শুরুর আগে কী কী বিষয়ে জানা প্রয়োজন, ব্যবসায় সাফল্য-ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। নতুন আয়কর আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কী করতে হবে, সে ব্যাপারেও তিনি নানা পরামর্শ দেন।
ইয়াকুব এ খান বলেন, ফ্যাটকার আওতায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেশে কিংবা বিশ্বের যেকোনো স্থানে বিনিয়োগ করা নির্ধারিত অর্থ বা এই ধরনের বিনিয়োগ এবং তার আয় আমেরিকার আয়কর ফাইলে উল্লেখ করতে হবে। আয়কর ব্যবস্থায় তথ্য গোপন করার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সঠিকভাবে আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ নির্ভুল তথ্য দিয়েছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে জরিমানাসহ অন্যান্য কঠোর ব্যবস্থার বিধান রয়েছে। আইআরএসের নিরীক্ষা থেকে রেহাই পেতে সবারই সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে আয়কর দাখিল করা উচিত।
এনওয়াই ইন্স্যুরেন্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ বিমা বিষয়ে অজানা অনেক তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি অটো ও জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অ্যাটর্নি ফেরদৌসী চৌধুরী পারিবারিক সহিংসতা, বিবাহবিচ্ছেদ, হেফাজত ইত্যাদি স্পর্শকাতর অনেক বিষয় তুলে ধরেন। পরে আইনজীবী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সাংবাদিক আশরাফুল হাসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ল সোসাইটির সভাপতি কাজী শামসুদ্দোহা, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী প্রমুখ। সবার জন্য উন্মুক্ত এ সেমিনারে অভিজ্ঞ আয়কর ও অভিবাসন আইনজীবী, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্টসহ বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন।