ফেব্রুয়ারির সাজ

বাংলাদেশে পয়লা ফাল্গুন হলেও নিউইয়র্কে এখনো শীত। তবু ফেলে আসা দেশকে ভালোবেসে বাসন্তী সাজে নিজেকে সাজিয়েছেন মাকসুদা আহমেদ
বাংলাদেশে পয়লা ফাল্গুন হলেও নিউইয়র্কে এখনো শীত। তবু ফেলে আসা দেশকে ভালোবেসে বাসন্তী সাজে নিজেকে সাজিয়েছেন মাকসুদা আহমেদ

দিনের হিসাবে বছরের সবচেয়ে ছোট মাস ফেব্রুয়ারি। মাস ছোট হলে কী হবে, পুরো মাসজুড়ে যেন উৎসবের ঘনঘটা। সবার মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা থাকে এই মাস ঘিরে। ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবসের আয়োজন তো বিশ্বজনীন। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে ব্যাপক সমারোহে আয়োজিত হয় এই উৎসব। সাগরপাড়ে নিউইয়র্ক ও আশপাশের অন্যান্য স্টেটে যেখানে বাঙালিরা থাকেন, তাঁরাও এখন বাংলাদেশি কায়দায় পালন করেন ভালোবাসা দিবস।
মজার ব্যাপার হলো, উত্তর আমেরিকার বাঙালিরা পয়লা ফাল্গুনও পালন করেন দারুণভাবে। যদিও এখানে তখন কনকনে শীত। বসন্ত আসতে আরও দেড় মাস বাকি। তবু বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখে তীব্র শীতের মধ্যে পয়লা ফাল্গুন উদ্‌যাপন করা হয়। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন। উত্তর আমেরিকায় বাঙালি বসতির উত্তরোত্তর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই দিন ঘিরে আয়োজনের মাত্রা বেড়েছে। জাতিসংঘ সারা পৃথিবীতে দিনটি পালন করে। নিউইয়র্কের বাঙালিদের সৌভাগ্য হলো তাঁরা জাতিসংঘের সামনে শহীদ মিনার বানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার সুযোগ পান, যেটা পৃথিবীর অন্য কোনো শহরে সম্ভব না।
এই উদ্‌যাপন ঘিরে নানা ধরনের পোশাকের সম্ভার দিয়ে দোকান সাজিয়েছেন দিওয়ান কালেকশনের স্বত্বাধিকারী শারমিন এলিন। জ্যাকসন হাইটসের সেভেন্টি ফোর স্ট্রিটে তাঁর দোকান। বৃষ্টিমুখর এক দিনে গিয়েছিলাম তাঁর দোকানে। জানতে চাইলাম, ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে তাঁর ফ্যাশন ভাবনা। এলিন বললেন, ‘প্রথমে আসা যাক ভ্যালেন্টাইন ডের পোশাকে। লাল ও গোলাপি কিংবা গাঢ় ম্যাজেন্টা হলো এই দিনের রং। এদিন কিন্তু সুতি কিংবা কাতান শাড়ি পরলে ভালো লাগবে না। পরতে হবে সিল্ক, জর্জেট, শিফন, তসর ইত্যাদি শাড়ি। সাজটা হবে ঝলমলে। চোখে গাঢ় মেকআপ হলে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। আর চোখের সাজ হালকা
হলে গাঢ় লিপস্টিক দেওয়া যাবে। ফাল্গুনের সাজে সুতি বা কাতান শাড়ি ভালো লাগবে। হলুদ বা কমলা রঙের শাড়ি হতে হবে। চুলে খোঁপা বা বেণি করা যেতে পারে। তাতে থাকবে তাজা গাদা ফুল। কিংবা কৃত্রিম ফুলের গয়না। অনেকে মাথায় টায়রা বা হেডপিস পরেন। রুপার গয়না পরতে পারেন কেউ। কিংবা মাটির গয়না। একুশে ফেব্রুয়ারির সাজটা হবে খুব সাধারণ। শাড়ি অবশ্যই সাদা বা কালো কিংবা উভয় রঙের। সাদা–কালো বৈশ্বিক একটা রং। সবার প্রিয় রং।’
ভালোবাসা দিবসে শুধু শাড়ি বা সালোয়ার–কামিজ নয়, নানা রকম গাউনও খুব ভালো লাগবে বলে জানালেন শারমিন রহমান তানিয়া। ব্রঙ্কসে তানিয়া বিউটি পারলারের স্বত্বাধিকারী এই বিউটিশিয়ান আরও বললেন, ‘ভালোবাসা দিবসটা যেহেতু সর্বজনীন, পৃথিবীর সব দেশের মানুষ পালন করে, সেহেতু পোশাকে দেশীয় ঐতিহ্য ধরে রাখার ব্যাপারে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আর তা ছাড়া গাউন ধরনের পশ্চিমা পোশাক বেশ আরামদায়ক। অনেকে কাজের শেষে শাড়ি পরার সময় পান না। তাঁদের জন্য গাউন, সালোয়ার-কামিজ কিংবা আনারকলি ধরনের পোশাক অবশ্যই মানানসই।’ ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব পাশাপাশি উদ্‌যাপিত হয়। তাই অনেকে টেনশনে পড়ে যান পোশাক নিয়ে। এই নিয়ে তানিয়ার ভাবনা, ‘ভালোবাসা দিবসে অবশ্যই লাল বা গোলাপি আর ফাল্গুন উৎসবে হলুদ শাড়ি পরাই নিয়ম। তবে দুটো উৎসব যেহেতু পাশাপাশি, তাই অনেকে দুটোই একসঙ্গে পালন করেন। যেমন কমলা বা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরল, যেখানে লালের প্রভাবও থাকল, যাতে দুটো উৎসবের রংই একসঙ্গে পালন করা হলো। আবার মাল্টি কালার শাড়িও পরা যেতে পারে। অনেকে ভালোবাসা দিবসে লাল-কালো গাউন পরেন।’
ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবে মেকআপ কেমন হবে? গাঢ় নাকি হালকা? বিউটিশিয়ান তানিয়ার মতে, ‘দিনে লাইট মেকআপ আর রাতে হেভি মেকআপের কথাই সাধারণত আমরা প্রস্তাব করি। তবে দিনের বেলাতেও গাঢ় মেকআপ করলে খারাপ লাগবে না। কারণ, আবহাওয়া তো ঠান্ডা থাকবে। ঘাম হবে না।’ একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসের সাজগোজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ দিন মেয়েরা চুলটা একটু পাফ করে খোঁপা করলে ভালো মানাবে। হালকা লিপস্টিক, চোখে কাজল আর কালো টিপ থাকবে। বাইরে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে শাড়ির ওপর একটা চমৎকার শাল পরা যেতে পারে। এখন তো শীত কমে এসেছে। তাই ঢাউস জ্যাকেট পরার কোনো প্রয়োজন নেই। হালকা একটা জ্যাকেট কিংবা কোট পরলেই যথেষ্ট।’