জীবনজুড়ে যোগা

লেখক নিজে নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন
লেখক নিজে নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন

যোগা বা যোগব্যায়াম কেবল শরীরের জন্য নয়, এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে মন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপরও। যোগা শরীরকে ভালো রাখে। মনকে ঝরঝরে করে। ফুরফুরে মন নিয়ে তাই একজন মানুষ করতে পারেন অনেক কাজ। এগিয়ে যেতে পারেন নিজের লক্ষ্যের দিকে। তাই এটা বলা হয়, জীবনজুড়ে যোগা। 

কিন্তু মাঝে মাঝে কেবল যোগার চর্চা করলেই কি সব হয়ে যাবে? না, বিষয়টি তেমন নয়। এটিকে নিয়মিত জীবনযাপনের অংশ করে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই পাওয়া যাবে সুস্থজীবনের খোঁজ। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, একজন মানুষকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে প্রয়োজন কায়িক পরিশ্রম, নিয়মিত ঘুম, সময়ানুবর্তিতা, শুদ্ধ জীবনচর্চা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, ইতিবাচক চিন্তা করা, সামাজিকীকরণ এবং প্রয়োজন ছাড়া ইলেকট্রনিক স্ক্রিন পরিহার করা।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল সাহিত্য চর্চাই করতেন না, করতেন পরিপূর্ণ জীবনচর্চাও। নিয়ম মেনে চলতেন, করতেন প্রার্থনা। প্রকৃতির মাঝে জীবনকে খুঁজতেন রবীন্দ্রনাথ। আর তাই মানবজীবনের প্রায় সব অনুভূতিরই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। হয়েছেন দীর্ঘজীবী। পরিপূর্ণ জীবন তাঁর।
তবে সবাই খ্যাতিমান হবেন, তেমন হয়তো নয়। কিন্তু সবাই নিশ্চয়ই সুন্দরভাবে বাঁচতে চান। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই মানুষ চান সুস্থতা। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। সেই শরীরচর্চা হতে পারে যোগার মাধ্যমে।
প্রাচ্যের যোগব্যায়ামকে পশ্চিমা দুনিয়ার মানুষ চেনে ‘যোগা’ নামে। আজকাল যোগাকে দেখা হয় ‘অলটারনেটিভ মেডিসিন’ হিসেবে। একধরনের ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক মুক্তিলাভের জন্যই এর চর্চা শুরু হয়েছিল। যোগার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে মন, শরীর ও আত্মাকে সংহত করা। শরীরকে ঠিক রাখা আর সুখী জীবনযাপন করা।
একটা ভুল ধারণা রয়েছে, কেবল নারীরাই হয়তো যোগা করে থাকেন। বিষয়টি তা নয়। নারী-পুরুষ সবার জন্যই যোগা কার্যকর। যোগার চর্চায় শরীর ও মনের অনেক উপকার হয়। রক্তের অতিরিক্ত সুগারের পরিমাণ কমায়, শরীরকে

সুস্থ রাখতে যা ভূমিকা রাখে। ক্ষতিকর খারাপ কোলস্টেরল কমিয়ে দেয়। মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। দেহের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। যোগা মানুষের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে রাগ, চাপ, মন খারাপ, বিষণ্নতা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলাফল মানুষের মন ভালো থাকবে। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি হবে। 

নানা ধরনের যোগা রয়েছে। ভোর থেকে রাত, সুযোগ ও সুবিধা অনুযায়ী একজন মানুষ যোগার চর্চা করতে পারেন। সকালে এক রকম আবার দুপুর কিংবা বিকেলে আরেক রকম। মানুষ তার ব্যস্তজীবনের ফাঁকে নিজের মতো করে সময় বের করে যোগা করতে পারেন। আবার একেক যোগার কার্যকারিতা একেক রকম। এ নিয়ে পড়াশোনা ও চর্চার মাধ্যমে বিস্তারিত জানা সম্ভব।
আমেরিকায় আজকাল যোগার চর্চা হচ্ছে খুব। গড়ে উঠেছে অনেক আন্তর্জাতিক মানের যোগা স্টুডিও। মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে যোগার আদি পর্বের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রাচীন ভারতে। ‘যোগা’ একটি সংস্কৃত শব্দ। বাংলায় বলে যোগ। যার অর্থ সমন্বয় সাধন করা। কিন্তু কিসের সমন্বয়? আসলে দেহযন্ত্রগুলোর কর্মক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে মন ও দেহকে প্রকৃতিগতভাবে একাত্ম করা দরকার। এই এক করার কাজটির মধ্যে সাধনা থাকতে হবে। একধরনের আধ্যাত্মিক ব্যাপার থাকতে হবে নিজের মধ্যে। তার মানে এই নয়, নিজের স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে একেবারে আলাদা হয়ে যাওয়া। অল্প সময়ের জন্যও যদি কেউ যোগা করেন, তাহলে পুরো পৃথিবী থেকে নিজের মতো আলাদা হয়ে যেতে হবে। তলিয়ে যেতে হবে অন্য এক জগতে।
যোগার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ প্রাণায়াম। এটি আসন করার আগেও করা যায়, পরেও করা যায়। তবে দুটোর মাঝে শবাসন করা ভালো। প্রাণায়াম করার সময় মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। যেকোনো বয়সে যোগা করা সম্ভব। তবে কোন বয়সে কোনটা করা যাবে, শারীরিক কোনো সমস্যা থাকলে বিশেষ কোনো আসন করা যাবে কি না, তা অভিজ্ঞজনদের কাছ থেকে ভালোমতো জেনে করা ভালো। এর জন্য অভিজ্ঞ যোগা ইনস্ট্রাক্টরের পরামর্শ নিয়ে, নিজের মতো করেও নিয়মিত যোগা করা যায়। যোগা করতে হবে জেনে এবং নিয়মিত। এক দিন করলেই জীবন বদলে যাবে, এমনটা নয়। নিয়মিত সাধনায় ফল আসবেই।