ভালোবাসা কারে কয়?

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

তার সঙ্গে আমার পরিচয় সেই ২০০৫ সাল থেকে। এক বছর আগেও আমার কাছে সে ছিল আমার সব থেকে কাছের বন্ধুদের একজন। বিয়ের কথাও ছিল আমাদের, এ বছরই। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই কানে আসছিল কিছু কথা। আমার বিদেশে থাকার সুযোগে সে একজন নয়, একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত ছিল...মুখে যতই বলুক, ‘তোকে ভালোবাসি দোস্ত!’

আমার অপরাধ? জন্মগত সামান্য শারীরিক ত্রুটি। আশ্চর্য হই এটা ভেবে, একজন মানুষের পক্ষে এতো নিখুঁত অভিনয় কী করে সম্ভব?

বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম সব বন্ধন। যারা আমাকে জানেন, নিশ্চয়ই এটুকু জানেন, ভুল করলে আমি হাজার বার ক্ষমা করতে পারি। তবে বিশ্বাস ভাঙা মানেই সব সম্পর্ক শেষ। যতই কাছের মানুষ হোক না কেন।

সাম্প্রতিক একজন চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনায় আবারও ভাবতে বসলাম ভালোবাসা কি এতই ঠুনকো? এতো সোজা মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা? একজন চিকিৎসককে কেন স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হতে হবে?

মুখবইয়ের কল্যাণে ইদানীং একটা ছবি বেশ নজরে পড়ছে। স্ত্রীর শরীরে একটি ছুরি গাঁথা, স্বামীর পিঠে বেশ কিছু ছুরির আঘাত। যেখানে স্ত্রী মনে করেন স্বামী তার কোনো কষ্টই বুঝছে না। আর স্বামী আঘাতে জর্জরিত হয়েও মুখে বলছে, দুঃখিত।

এ ছবির বিপরীত চিত্র তো থাকতেই পারে, তাই না? বান্ধবীদের অনেকেই জানি, যারা আট দশ বছর সংসার করার পরে পুত্র অথবা কন্যার হাত ধরে ঘর ছেড়েছেন। পতিদেবতা নিজের থেকে প্রায় বারো বছরের ছোট কোনো সুন্দরীর প্রেমে মজেছেন তাই।

এসব মনে হলে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই, বিয়ে নামক বস্তুটির সামনে পড়তে হয়নি আজও।

আবার এমন কয়েকজনকেও জানি, যারা প্রেমে পড়েছিলেন কৈশোরে। প্রেম, বিয়ে, দুটি সন্তানের পরেও, কোথাও কোন ওগো, হ্যাঁ গো অমুকের মা, তমুকের বাবার বালাই নেই, আজও স্বামী–স্ত্রী পরস্পরকে একটি নামেই ডাকেন ‘দোস্ত’।

তাই মাঝে মাঝে নিজেকেই প্রশ্ন করতে হয়, ‘ভালোবাসা কারে কয়?’

আমার কাছে ভালোবাসা মানে শ্রদ্ধা, সম্মান, বন্ধুত্ব স্নেহ আর অবশ্যই বিশ্বাসের ওপরে দাঁড়ানো এমন এক মজবুত বাঁধন, যা হাজার ঝড়ে দুলতেও পারে, তবে তা দুজনের চেষ্টাতেই সামলে নেওয়া যায়।

আমি বলছি না পরকীয়ায় দোষ একা পুরুষের। বা নারী কোনো ধোয়া তুলসী পাতা। মোটেও না। তবে পুরুষ যদি শুধু নারীর রূপের পেছনেই ছোটেন আর নারী যদি শুধুই দেখেন পুরুষের অর্থ, তবে তো ভালোবাসা দরজা দিয়ে ঢুকে জানালা দিয়ে পালাবে।

তার থেকে তো ভালো নারী গেয়ে উঠুক—‘আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব।’ আর পুরুষ অন্য নারী থেকে দূরে, বারবার নিজের স্ত্রীর প্রেমেই পড়ুক। বয়সের সঙ্গে বদল পুরুষ–নারী দুই পক্ষেরই হয়। এ বদলকে মেনে নিয়ে, একই মানুষের প্রেমে বারবার পড়াকেই হয়তো ভালোবাসা বলে।