ট্রাম্পের নারীরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের নিয়ে নানা কৌতুক চালু আছে। একটি শুনুন। সাবেক প্রেসিডেন্টরা তাঁদের সময়ের হোয়াইট হাউসের কর্মী, বন্ধুবান্ধব ও পরিবার নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে গেছেন। জাহাজের অবস্থা ডুবুডুবু। প্রেসিডেন্টন বারাক ওবামা চিৎকার করে বলছেন, ‘নারীদের প্রতি আগে নজর দাও।’ জর্জ বুশ বলছেন, ‘বাদ দাও সব। নিজের জান বাঁচাও।’ বিল ক্লিনটন এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলছেন, ‘আমি নারীদের দেখছি। জাহাজ ডুবে যাওয়ার আগে কিছু সময় তো পাওয়া যাবে, নাকি?’

অন্যদিকে মিটি মিটি হাসছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অস্ফুট উচ্চারণে বলছেন, ‘ইট ইজ অল ডান বিফোর আই কাম হিয়ার!’

তর্জন-গর্জনে ভিলেন মনে হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প আদতে একজন প্রেমিক পুরুষ। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নানা কথা বলে প্রতিদিন মাঠ যেমন গরম রাখছেন, তেমনি ভিন্ন আলোচনায় কান গরম করা গল্পও প্রচারিত হচ্ছে সমানতালে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের নারী আসক্তি এবং হোয়াইট হাউসের নারীবিষয়ক কথা নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাল আমলের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে জনপ্রিয় বিল ক্লিনটন। হোয়াইট হাউসে তাঁর কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিশংসনের প্রস্তাব পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পকে নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। তবে প্রেমিক পুরুষ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নারীদের নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই।

বর্ণাঢ্য ভালোবাসার জীবন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। আবেদনময়ী সাবেক পর্নো তারকা স্টোর্মি ডেনিয়েলস দাবি করলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্ক ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার আগেই বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ করেছেন ট্রাম্প। অবশ্য ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এমন অপবাদ অস্বীকার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাইকেল উলফের বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ প্রকাশের পর মার্কিন মিডিয়া হামলে পড়েছে। খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অতীত সময়ের আলো-আঁধার নিয়ে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনবার বিয়ে করেছেন। তাঁর সব স্ত্রীই সুন্দরী। দাম্পত্যের বাইরেও তাঁর নারীদের নিয়ে এখন মার্কিন মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে।

ইভানা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল তাঁর এ সম্পর্ক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় তিন সন্তানের মা ইভানা ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ইভানাও একেবারে নীরব নন। তাঁর তিন সন্তান—ট্রাম্প জুনিয়র, ইভাঙ্কা ও এরিখ। ইভানা নিজেকে ফার্স্ট লেডি দাবি না করলেও প্রেসিডেন্টের ফার্স্ট ওয়াইফ হিসেবে দাবি করছেন সত্যিকারভাবেই।

মার্লা ম্যাপলসের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেখা হয় প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থাতেই। ১৯৯৩ সালে ট্রাম্প দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ বিয়ে টিকেছিল ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফা দাম্পত্যের সন্তান টিফানি ট্রাম্প। ট্যাবলয়েড পত্রিকার শিরোনামে মার্লাকে বলা হয়েছে, ‘বেস্ট সেক্স এভার’। পরে অবশ্য মার্লা বলেছেন, এমন কার না হয়?

বর্তমান ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মডেল মেলানিয়ার সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক চালাচ্ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০০৫ সালে তৃতীয়বারের মতো বিয়ে করেন তিনি। মেলানিয়ার সঙ্গে দাম্পত্যের ফলাফল তাঁদের কনিষ্ঠ সন্তান ব্যারন। সে এখন ১১ গ্রেডের শিক্ষার্থী। ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি বইয়ে বলা হয়েছে, ট্রাম্প অনেক সময়েই মেলানিয়ার সঙ্গে অবিশ্বাসী কাজ করেছেন। এ বইয়ে দাবি করা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে আলাদা বিছানায় ঘুমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া।

এখন সংবাদমাধ্যমে আসছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে বন্ধুদের নামও। ২০০১ সাল থেকে প্রায় দুই বছর কারা ইয়াং নামের এক মডেলের সঙ্গে ডেট করেছেন ট্রাম্প। ভার্জিনিয়ার শার্লেটসভিল ঘটনার পর ট্রাম্পের বক্তব্যের বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বহু বর্ণের মডেল কারা ইয়ং। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের মুখে এমন জাতিগত বিদ্বেষের কথা আগে কখনো শোনেননি তিনি।

১৯৯৫ সালের দিকে বেশ কিছুদিনের জন্য কাইলি ব্যাক্স নামের অন্য এক মডেলের সঙ্গে প্রকাশ্যেই ডেট করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শিথিল হলেও সম্পর্কটি বেশ কিছুদিন টিকিয়ে রেখেছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে তাঁর সাবেক এ মেয়েবন্ধু ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

রোয়ানি ব্রিউয়ার লাইন নামের ২৬ বছর বয়সী আরেক মডেলের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠেছিল কিছুদিন। কোনো এক পুল পার্টিতে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল এ সুন্দরীর।

১৯৮৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেট করেছেন গাব্রিয়ালা সাবাতানি নামের টেনিস খেলোয়াড়ের সঙ্গে। ইভানাকে ডিভোর্স দেওয়া এবং মেপলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় এই সম্পর্কটি আর বেশি দীর্ঘ হয়নি। আবার ১৯৯৭ সালে আলসন জিয়ানিনি নামের ২৭ বছরের এক মডেলের সঙ্গে ডেট করেছিলেন ওই সময়ের ৫০ বছর বয়সী ট্রাম্প।

এমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অভিনেত্রী কেন্ডিস বার্গেনের সঙ্গে ষাটের দশকের শেষ দিকে ডেট করেছিলেন ট্রাম্প। এ অভিনেত্রী ট্রাম্পকে ‘সুদর্শন পুরুষ’ আখ্যা দিয়েছিলেন। মডেল ও টিভি তারকা আনা নিকোল স্মিথের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে মার্কিন ট্যাবলয়েড পত্রিকা সংবাদ প্রচার করেছে। গুজব রটেছিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির স্ত্রী কার্লা ব্রুনিকে নিয়েও। সেটি ছিল ১৯৯১ সালের কথা। যদিও কার্লা সেই গুজব উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর মোটে ‘একবারই’ দেখা হয়েছিল।

‘প্রেমিক পুরুষ’ ট্রাম্পকে সাধারণভাবে নারীদের কাছে তেমন জনপ্রিয় বলে মনে হয় না। কারণ নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবধি নানাভাবে তির্যক ভাষায় নারীদের আক্রমণ করেছেন তিনি। নানা বেপরোয়া বক্তব্যের পাশাপাশি প্রথম স্টেট অব ইউনিয়ন বক্তৃতায় একবারও যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের সম্পর্কে একটি কথাও উচ্চারণ করেননি তিনি। এমনকি ওই বক্তৃতায় স্থান পায়নি নারী শব্দটিও। ক্ষমতার প্রথম বছরে মার্কিন পুরুষদের কাছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা গড়ে ৪৫ শতাংশ হলেও, নারীদের মধ্যে ছিল গড়ে ৩৩ শতাংশ।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়েই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা বিশাল বিশাল প্রতিবাদ-সমাবেশ করেছেন। মিলিয়ন উইমেন মার্চ হয়েছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নারীর মন জয় করার রেকর্ড রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের, তাঁদের অধিকাংশই মডেল, তারকা বা শোবিজের। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নারীদের মন কতটা জয় করতে পারলেন ট্রাম্প, তা জানা যাবে পরের নির্বাচনেই।