অপরাধ দমনে নিউইয়র্ক পুলিশের নতুন অস্ত্র আইফোন

নিউইয়র্ক শহরের গ্রেমারসি পার্ক এলাকার পুরোনো পুলিশ অ্যাকাডেমি এখন পরিণত হয়েছে অ্যাপল স্টোরে, যেখানে শুধু কিছু বিশেষ গ্রাহককেই সেবা দেওয়া হয়। কোনো কাচের দেয়াল নেই। নেই কোনো জমকালো আলোকসজ্জা। কিন্তু তারপরও এই স্টোরের দরজায় দেখা মিলবে লম্বা লাইনের। এই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) সদস্যরা। অপরাধ দমনে নিউইয়র্ক পুলিশের নতুন সরঞ্জাম ‘আইফোন’ নিতে এসেছেন তাঁরা।
নিউইয়র্ক পুলিশকে প্রথমে নকিয়া ফোন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব ফোনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এখন ওই

নকিয়া ফোনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে আইফোন। সম্প্রতি প্যাট্রল বরো ম্যানহাটন সাউথের পুলিশ সদস্যদের এই আইফোন দেওয়া হয়। ক্রমে নিউইয়র্ক পুলিশের সব সদস্যই এই ফোন হাতে পাবেন।

এনওয়াইপিডির উপকমিশনার (তথ্য ও প্রযুক্তি) জেসিকা টিশ নিউইয়র্ক ডেইলিকে বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা ৬০০টি করে ফোন হস্তান্তর করছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।’

উচ্চ গতি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্যই নিউইয়র্ক পুলিশ আইফোনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এরই মধ্যে ব্রঙ্কস ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের পুলিশ সদস্যদের আইফোন সরবরাহ করা হয়েছে। এখন ম্যানহাটনের পুলিশদের মধ্যে এটি বিতরণ করা হচ্ছে। এরপর ব্রুকলিন ও কুইন্সেও একইভাবে আইফোন ৭ অথবা ৭ প্লাস বিতরণ করা হবে। এতে আগের নকিয়া সেটটির মতোই ৯১১ নম্বরে আসা বিভিন্ন ফোনকলে সাড়া দেওয়া ও সংশ্লিষ্ট ভিডিও দ্রুত দেখার সুবিধা থাকছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে উচ্চমাত্রার নিরাপত্তাব্যবস্থা, যা নিয়ে আগের সেটটির ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল। পাশাপাশি নতুন এই ফোনটিতে রয়েছে সমন, দুর্ঘটনা ও অপরাধের বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদন লেখার সুযোগ।
আইফোন হাতে পেয়ে ভীষণ খুশি পুলিশ কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার ক্ল্যামপিট। তিনি বলেন, ‘টহল পুলিশের হাতে এ ধরনের একটি প্রযুক্তিই থাকা উচিত। এর মাধ্যমে অপরাধ ও দুর্ঘটনাস্থলে আমরা দ্রুত পৌঁছাতে পারছি। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে নির্দেশনা আসার আগেই কখনো কখনো আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেতে পারছি।’
প্রায় চার বছর আগে নিউইয়র্ক পুলিশকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। সে সময় এনওয়াইপিডির সদস্যদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিতে ১৬০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেন সাবেক পুলিশ কমিশনার বিল ব্র্যাটন।
পুলিশ সদস্যদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার এই উদ্যোগের সুফল এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। জেসিকা টিশ বলেন, ‘আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এখন সাড়া দিতে পারছেন পুলিশ সদস্যরা। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের সাড়া দেওয়ায় বিলম্বের হার ১৪ শতাংশ কমেছে।’
নকিয়ার স্মার্টফোনের বদলে আইফোন নিয়ে এসেছে আরও কিছু সুবিধা। এখন পুলিশ সদস্যরা এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ হাতে পাচ্ছেন। ফলে ঘটনা ঘটার সময়েই কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তা সম্পর্কে জানতে পারছেন। শুধু তা–ই নয়, একই সময়ে এই ফুটেজ চলে যাচ্ছে এনওয়াইপিডির সব পুলিশের কাছে। ফলে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি কাজেও নামতে পারছেন তাঁরা। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান চালানোর আগেই পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকায় ঘটা অপরাধের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছেন। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান চালানো অনেক সহজ হচ্ছে।