সহায়তায় এগিয়ে আসছে টিএলসি

আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক নগরীর ট্যাক্সি চালকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে পেশাদার ট্যাক্সি চালক ও ভাড়া গাড়ির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিএলসি। ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশন কর্মকর্তারা ১২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ব্ল্যাক কার এবং ট্যাক্সির সঙ্গে সম্পৃক্তদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সম্প্রতি পেশাগত দুর্দশার কারণে দুজন টিএলসি ড্রাইভারে আত্মহত্যা করেছেন। এর জের ধরেই আন্দোলনে নামেন চালকেরা। ট্যাক্সি ও লিমোজিন

কমিশনের সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কারণে হাজারো গাড়ি চালক অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন। তবে কীভাবে এই সহযোগিতা পাওয়া যাবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। উবার ও লিফটসহ প্রযুক্তি নির্ভর ট্যাক্সি ক্যাব চালকদের ন্যূনতম মজুরি প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
টিএলসি কমিশনার মীরা জোসী ‘ফর-হায়ার’এর নব গঠিত শপথ অনুষ্ঠানে বলেন, তাঁর সংস্থা উবার, লিফট ও অন্যান্য কোম্পানির বেস-ভিত্তিক চালকদের মজুরির জন্য কাজ করছে। সড়কে গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর প্রবণতা বন্ধ না হলে উদ্বেগজনক অশান্ত পরিবেশ অব্যাহত থাকবে। নগরীর ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
মীরা জোসী বলেন, চালক ও গাড়ির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চালকেরা কয়েক বছর আগে যে অর্থ আয় করতেন, তা এখন অনেক দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ খাতের পরিধি আরও বাড়তে থাকলে চালকেরা আরও বেশি মানসিক চাপে ভুগবেন।
টিএলসির লাইসেন্সপ্রাপ্ত উবার, লিফট এবং শ্রেণিবদ্ধ ব্ল্যাক কার ও চালকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৪ সালের এক লাখ ৩০ হাজার চালক এবং ৭৪ হাজার গাড়ি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে যথাক্রমে এক লাখ ৮০ হাজার এ এক লাখ ৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ চালকের সংখ্যা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। মেয়র ব্ল্যাজিও এ ধরনের বৃদ্ধিকে সীমিত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
গত সপ্তাহে গাড়ি চালক ডাউগ সিক্টার সিটি হলের সামনে আত্মহত্যা করেছেন। ৬১ বছর বয়সী ওই চালক আত্মহত্যার আগে তাঁর ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এ পেশায় ক্রমাগত আর্থিক দুর্গতি ও সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নির্বাচিত প্রতিনিধির ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন।
এর কয়েক সপ্তাহ আগে লিবারি চালক ড্যানিলো কোরপোরান ক্যাসিলো (৫৭) এলটিসি লাইসেন্স হারানোর হুমকি পেয়ে আত্মহত্যা করেন।
টিএলসি গত বছর ১৭ হাজার ২৪০ জন চালকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সড়কে গাড়ি রাখায় সমন পাঠায়। অন্যদিকে লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানো ও অন্যান্য কারণে ৪৭ হাজার ৫৯৬ জনের ওপর সমন জারি করা হয়।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে ট্যাক্সি চালকদের ওপর টিকিট ইস্যুর হার মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে বলে চালকেরা অভিযোগ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এস্টোরিয়ায় বসবাসরত একজন ক্যাব চালক প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে বলেন, তাঁর নামে এক ডজনের বেশি সমন ও ট্রাফিক টিকিট ঝুলছে। এর মধ্যে পার্কিং টিকিট থেকে যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ ও থুতু ফেলার টিকিটও আছে।
নগরীতে পর্যাপ্ত গণ শৌচাগার না থাকায় ক্যাবিদের শৌচকর্মের ব্যাপক সমস্যা। এস্টোরিয়ার ওই ক্যাবি বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে আচার-ব্যবহার ঠিক করার জন্য কলেজে গিয়ে ব্যবহার বিদ্যার কোর্স করার জন্য আদালত তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যাত্রীদের অমূলক অভিযোগের যাচাই না করেই জরিমানা করা হয়। এসব খাত থেকে নগরীর রাজস্ব বৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু ক্যাব চালকের পেশায় জড়িতদের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। জরিমানা, আইনজীবীর পেছনে ব্যয়, কাজ রেখে আদালত আর টিএলসি অফিসে ধরনা দিয়ে দিন কাটছে মন্দা ব্যবসার ফাঁদে পড়া নিউইয়র্কের ক্যাব চালকদের।
এ নিয়ে গত সপ্তাহে ক্যাবিরা সিটি হলের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। পেশাগত উৎকণ্ঠা থেকে ক্যাবিদের আত্মহত্যার ঘটনায় কিছুটা হলেও টনক নড়েছে বলে মনে করছেন দাবি দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ভুক্তভোগী ক্যাব চালকেরা।