প্রত্যাখ্যান করল হোয়াইট হাউস

ডাকা প্রকল্পের আওতায় বসবাসরত অভিবাসীরা ১৩ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এএফপি
ডাকা প্রকল্পের আওতায় বসবাসরত অভিবাসীরা ১৩ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এএফপি

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত একটি দ্বিপক্ষীয় কমিটির প্রস্তাবিত অভিবাসন পরিকল্পনা সিনেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপনের কয়েক ঘণ্টা আগে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অ্যারিজোনার রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাক কেইন এবং ডেলাওয়ারের ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস কুনসের ৫ ফেব্রুয়ারি সিনেটে এই বিল উত্থাপনের কথা ছিল।
দ্বিপক্ষীয় কমিটির প্রস্তাবিত এই অভিবাসন পরিকল্পনায় ২০১৩ সাল থেকে আমেরিকায় বসবাসকারী তরুণ বয়সী অবৈধ অভিবাসীদের স্থায়ী বৈধতা দেওয়ার কথা বলা হলেও এতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পারিবারিক অভিবাসন বন্ধের কথা বলা হয়নি। এমনকি ট্রাম্পের চাওয়া সীমান্তের প্রাচীর নির্মাণের জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলারের ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিকল্পনার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শক্তিশালী সীমান্ত সুরক্ষা নীতি এবং সীমান্ত প্রাচীর স্থাপনের ব্যাপারে কোনো কথা নেই, “ডাকা”বিষয়ক এমন যেকোনো পরিকল্পনা সময়ের অপচয় মাত্র।’
এদিকে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যামিলি মাইগ্রেশন ও ডিভি লটারির মাধ্যমে আমেরিকায় এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। এমন ব্যক্তিদের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করে বলা হয়, এই দুটি অভিবাসন প্রক্রিয়া আক্ষরিক অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি স্পষ্ট হুমকি আর তাই এগুলো বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। তালিকায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের আকায়েদ উল্লাহ, মিসরের আহমেদ আমিন আল মুফতি, পাকিস্তানের জুবাইয়া শাহনাজ, সুদানের মাহমুদ আমিন মোহাম্মেদ আল হাশেম, ভারতের খলিল আহমেদ, সিরিয়ার মোহাম্মদ সাঈদ কোদাইমতি এবং উজবেকিস্তানের সাইফুল্লাহ সাইপভ। এরা সবাই ডিভি অথবা ফ্যামিলি মাইগ্রেশনের মাধ্যমে আমেরিকায় এসেছেন।
এ ছাড়া ওই বিবৃতিতে পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ফ্যামিলি মাইগ্রেশনের মাধ্যমে আমেরিকায় আসা ৯.৩ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি লোক কোনো না কোনো ওয়েলফেয়ার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভাতা নিচ্ছেন। আর সীমান্তে প্রাচীর না থাকার ফল হিসেবে দেখানো হয়েছে শুধু ২০১৭ সালে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীর সংখ্যা ৩ লাখের বেশি। এসব কারণে হোয়াইট হাউস তাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে বলছে ‘কমনসেন্স ইমিগ্রেশন রিফর্ম’।
এর আগে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে আরও এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসনের জন্য ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভিসা ওভারস্টে দায়ী। ভবিষ্যতে ভিসা ওভারস্টে কমিয়ে আনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য এবং বর্তমানে যারা ওভারস্টে করছে, অথবা ভিজিট ভিসায় এসে কাজ করাসহ অন্য কোনোভাবে তাদের ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করছে, তাদের রিমুভাল প্রসেস আরও কঠোর করার জন্য বিবিধ সুপারিশ করা হয়েছে। আর অ্যাসাইলাম আবেদনের ব্যাকলগ কমিয়ে আনার জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ করা হয়েছে।
১) ক্রেডিবল ফিয়ার ইন্টারভিউতে পারসিকিউশন প্রমাণের স্ট্যান্ডার্ড আরও কঠোর করা হোক।
২) অসার, ভিত্তিহীন ও প্রতারণামূলক তথ্য ও ঘটনা দিয়ে অ্যাসাইলাম আবেদন জমা দিলে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ গুরুতর অপরাধের (অ্যাগ্রিভেটেড ফেলোনি) অভিযোগ আরোপ করা হোক এবং এক্সপেডিয়েট রিমুভাল বা দ্রুত বিতাড়ন প্রয়োগ করা হোক।
৩) ডিফেন্সিভ অ্যাসাইলাম আবেদনকারীকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্ব করা হোক এবং ক্রেডিবল ফিয়ার ডিনাই হলে সুইফট রিমুভালে নিয়ে আসা হোক।
৪) অ্যাসাইলাম আবেদনকারীর নিজ দেশের পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এলে তার আবেদন ইতিমধ্যে গ্র্যান্ট করা হলেও গ্রিনকার্ড দেওয়ার আগে আবারও রিভিউ করা হোক।

লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্কপ্রবাসী
সেল: (৯২৯)৩৯১-৬০৪৭;
ই–মেইল: [email protected]