বেসরকারি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন?

আমেরিকা আগে, মহাকাশ পরে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায় এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। হচ্ছেও সম্ভবত তাই। ২০২৪ সালের পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জন্য (আইএসএস) বরাদ্দ কমাতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। আর এ জন্য আইএসএসের পরীক্ষাগারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পাঠাতে চাইছে প্রশাসন।

নাসার অভ্যন্তরীণ একটি নথি উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ‘২০২৫ সালে আইএসএসে ফেডারেল তহবিল থেকে সরাসরি অর্থায়ন বন্ধের অর্থ এই নয় যে এই প্ল্যাটফর্ম নিজেই কক্ষচ্যুত হবে। এটা হতে পারে যে বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আইএসএসের কার্যক্রম চালাবে। মহাকাশ স্টেশনটিকে কক্ষপথে রাখতে এবং এতে মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিতে নাসা আগামী সাত বছরে আন্তর্জাতিক ও বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব বাড়াবে।’
আগামী অর্থবছরের জন্য হোয়াইট হাউসের করা প্রস্তাবে ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দের অনুরোধ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বেসরকারীকরণের জন্য আইএসএসকে প্রস্তুত করা হবে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পরিকল্পনা নিয়ে গুঞ্জন ছিল। হোয়াইট হাউসের এমন প্রস্তাব উত্থাপনের সম্ভাবনা এই গুঞ্জনকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আইএসএসের পরীক্ষাগারের পেছনে ফেডারেল সরকারের বছরে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার খরচ হয়। এই ব্যয় কমিয়ে আনতেই এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে আইএসএস উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল আজ থেকে ২০ বছর আগে। নাসার তত্ত্বাবধানে থাকা এই মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীর কাছাকাছি থেকে এর চারপাশ প্রদক্ষিণ করে। উৎক্ষেপণের সময় এর যে আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল, তা ২০২৮ সালে শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় মহাকাশ স্টেশনটি নির্ধারিত এই সময়ের পরও টিকবে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংশয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া উচ্চ ব্যয়ের বিষয়টি তো রয়েছেই। এই অবস্থায় স্টেশনটি বেসরকারি খাতে ছাড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এদিকে নাসার হয়ে ৪৬২ দশমিক ৫ টন ভরের স্টেশনটি পরিচালনা করা বোয়িং বারবার সতর্ক করছে, এই গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ স্টেশন বেসরকারি খাতে ছাড়া হলে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি বিবেচনায়ও নিয়েছে হোয়াইট হাউস। এ জন্য হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাজার বিশ্লেষণ ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। তবে এ সম্পর্কিত পুরো পরিকল্পনা জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের দিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিষয়টিকে মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশচারী মার্ক কেলি। নিউইয়র্ক টাইমস–এ প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, ‘মহাকাশে বাণিজ্যিক তৎপরতা ইতিবাচক হতে পারে। এ ধরনের কার্যক্রম আমেরিকা থেকেই চালিয়েছে বোয়িং ও স্পেস এক্স। কিন্তু মহাকাশ সংস্থার জন্য ফেডারেল তহবিল কমিয়ে আনাটা সার্বিক কার্যক্রমকে পিছিয়ে দেবে। এটি দেশের জন্যও ভালো হবে না।’