বৃদ্ধদের যত্নে আছে বয়স্ককেন্দ্র

জ্যামাইকার একটি বয়স্ককেন্দ্রে যত্নে আছেন বৃদ্ধরা
জ্যামাইকার একটি বয়স্ককেন্দ্রে যত্নে আছেন বৃদ্ধরা

আমেরিকার নাগরিকদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি, তাঁদের অনেকেই এ দেশে বসে বসে অলস দিন কাটান। বিশেষ করে যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছেন, কিছুদিন কাজ করার পর তাঁরা আর কোনো কাজ-কর্ম করেন না। তাঁরা পরিবারের কোনো কাজ বিশেষ করে গৃহস্থালি কাজ করতে পারেন না, তাঁরা ছেলে/মেয়ের ওপর নির্ভরশীল থেকে একরকম অকেজো হয়ে পড়েন, মানসিকভাবেও তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকেই কাজ-কর্ম না করার কারণে তাঁদের পকেটে কোনো অর্থকড়ি থাকে না, ফলে তাদের ক্রয় ক্ষমতাও থাকে না, নিজের ইচ্ছেমতো কোনো কিছু করতে পারেন না, নির্ভর করতে হয় সন্তান বা স্বজনদের ওপর। 

সন্তানদের বিয়ে হলে পরিবারের চিত্র বদলে যায়। ছেলেরা আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়, পরিবারের খরচও বেড়ে যায়। তাই বয়স্ক কর্মহীন মানুষ যখন কোনো কাজ না করে বসে থাকে, তখন তিনি পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে যান। মুখে কেউ কিছু না বললেও, মনে মনে বিরক্ত হন। সারা জীবন যে লোকটি একটি পরিবারের ঘানি টানল কলুর বলদের মতো, সন্তানদের লালন-পালন করল, সেই ব্যক্তিটি বয়স হলে সবার বোঝা হয়ে যান, অবহেলার পাত্র হয়ে ওঠেন, কেউ যত্ন করে না, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য দেয় না, তার সময়মতো চিকিৎসা হয় না, সময়মতো খাবার দেওয়া হয় না, সবার মর্জির ওপর তাঁকে চলতে হয়।
এসব বিষয় চিন্তা করে বয়স্ক মানুষের স্বনির্ভর জীবনযাপনের একটি ভালো সুযোগ আছে। সেটি হচ্ছে সিনিয়র সেন্টার বা বয়স্ক সেন্টার। প্রতিদিন সকালে বয়স্ক সেন্টারে গেলে সেখানে বিনা মূল্যে নাশতা, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা, ব্যায়াম, নাচ, গান এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রম থাকে। সারা দিন সেখানে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। ওই কেন্দ্রে গেলে অনেক কিছু শিখতে ও বুঝতে পারবেন।
নিউইয়র্ক শহরে ৪৫০টির বেশি বয়স্ক সেবার কেন্দ্র আছে। পুরো আমেরিকায় এ ধরনের ১৫ হাজার বয়স্ক কেন্দ্র আছে। কারও ৬০ বছরের বেশি বয়স হলে এবং যদি কোনো চাকরি করে থাকেন তাহলেও নিকটস্থ যেকোনো বয়স্ক কেন্দ্রে গিয়ে নাম নিবন্ধন করতে পারেন। এখানে যে কোনো ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি সুবিধা পান, জীবনকে উপলব্ধি করতে পারেন, পুষ্টিকর খাওয়া খেতে পারেন, স্বাস্থ্য সুন্দর রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।
সুতরাং কারও বয়স যদি ৬০ পেরিয়ে যায় চিন্তার কিছু নেই। তাঁর জীবনের মূল্য কারও চেয়ে কম নয়। এ বয়সেও মানুষ সবকিছু করতে পারে। পরিবারে কোনো কিছু না করে অযথা বসে থাকার অর্থ হয় না। বয়স্ক কেন্দ্রে যাওয়ার সময় কারও অনুমতি নেওয়ার দরকার নাই। নিজের জীবনকে সীমিত করার অর্থ হয় না। এতে পারিবারিক বন্ধন আরও শক্ত হবে, পরিবারে কদর অনেক বেড়ে যাবে। বয়স্ক সেন্টারে গেলে বয়স্কদের জন্য কাজের সুযোগও মিলতে পারে। নিউইয়র্ক নগরের ডিপার্টমেন্ট ফর দ্য এজিং বয়স্কদের অর্থাৎ যাদের বয়স ৫৫-এর ঊর্ধ্বে, তাঁদের চাকরি পেতে সহায়তা করে থাকে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
বিভিন্ন সেন্টারের ঠিকানা হচ্ছে: নিউইয়র্কের কমিউনিটি সার্ভিস সোসাইটি, ৬৩৩ তৃতীয় অ্যাভিনিউ দশম তলা, নিউইয়র্ক, অ্যালমহার্স্ট জ্যাকসন হাইটস নেটিভুড এসসি, ৭৫-০১ ব্রডওয়ে ৩ডিডি ফ্লোর, ফ্লাশিং তরুণ নারী ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, ৪২-০৭ পারসনস বুলেভার্ড।
এসব সেন্টার পরিদর্শন করে তাদের নিয়মকানুন, কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় ইত্যাদি জেনে নেওয়া যায়। যে কেউ চাইলে ভর্তি হওয়া যেতে পারে। কোনো ক্ষতি নাই, লাভই বেশি।