শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে একুশের অনুষ্ঠান শুরু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতার সদন হাতে শিশু–কিশোরেরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতার সদন হাতে শিশু–কিশোরেরা

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সেদিন সবুজের সমারোহ ছিল না। ছিল না রক্তিম পলাশের কোনো অনুষঙ্গ। তবুও জ্যাকসন হাইটসের সমাগত শিশু-কিশোরদের তুলির আঁচড়ে উঠে এসেছে বাংলার চিরচেনা সবুজ ও লালের মেলবন্ধনেই। কে বলবে এটা নিউইয়র্ক। প্রচণ্ড শৈত্য চারপাশে। বলা হচ্ছে ১১ ফেব্রুয়ারির কথা। শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ওই দিন নিউইয়র্ক নগরে মহান একুশে উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯-এ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গত ১৩ বছর ধরে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এবারের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও সংগঠক, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতা। এই দিন বেলা ১২টায় শুরু হয়ে এই প্রতিযোগিতা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। মোট চারটি গ্রুপে নিউইয়র্ক নগরের বিভিন্ন স্কুলের কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এর মধ্যে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও কবিতা আবৃত্তি উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের বাংলা স্বর ও ব্যঞ্জন বর্ণের লেখা, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ ও বাংলা অনুলিখনও সবাইকে মুগ্ধ করে। নবম থেকে দ্বাদশ গ্রেডের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় ‘হিস্টরি অব বাংলাদেশ মুভমেন্ট ১৯৪৭-১৯৭১’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায়।
১১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ছিল প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঠান্ডা। এই বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকেরা পিএস-সিক্সটি নাইনের বিশাল ক্যাফেটেরিয়ায় সমবেত হন নির্ধারিত সময়ে।
কবিতা আবৃত্তির অংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আবৃত্তি সবাইকে মুগ্ধ করে। সুকুমার রায়ের ছড়া এনে দিয়েছিল শৈশবের দ্যোতনা। আবৃত্তি করা হয়েছিল আল মাহমুদ ও আসাদ চৌধুরীর একাধিক কবিতা। প্রতিযোগিতার এই অংশটি এতটাই প্রাণবন্ত ছিল যে, তা অনেককেই আবেগাপ্লুত করে তোলে।
বিকেলে মেধা প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন বড়ুয়া। এ সময় বক্তব্য রাখেন সাঈদা আক্তার লিলি, এমদাদুল হক ও এ্যানি ফেরদৌস। এ সময় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত এবং একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তাফা। কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা সঞ্চালন করেন সাবিনা শারমিন নিহার ও রুহুল আমিন। প্রতিযোগিতার সমন্বয় ও সহযোগিতায় ছিলেন মোহাম্মদ হোসেন খান, তাজুল ইসলাম, মোল্লা মনিরুজ্জামান, গাজী সামসুদ্দিন ও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন আনোয়ারুল হক লাভলু, শাহরিয়ার তৈয়বুর ও ড. নজরুল ইসলাম। বাংলা লিখন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন হোসনে আরা, কৌশিক আহমেদ ও ফজলুল রহমান। অঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন টিপু আলম ও আজিজুর রহমান। পরে অনুষ্ঠানে আগত শিশু-কিশোর, অভিভাবক ও আগত অতিথিদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করা হয়।
আয়োজকেরা জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় একুশ উদ্‌যাপনের পরবর্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ওই দিন কুইন্স প্যালেসে দিবাগত রাতে, একুশের প্রথম প্রহরে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলনের মহান শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।
এবারের প্রতিযোগিতায় আগত বেশ কয়েকজন অভিভাবক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না রাখায় উষ্মা প্রকাশ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছর থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রতিযোগিতার একটি আলাদা শাখা চালুর আশ্বাস দেন অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা এ্যানি ফেরদৌস।