ট্রাম্পের অভিবাসী তাড়াও নীতি

মানুষ পৃথিবীর বাসিন্দা। তাদের আবাস বিশ্বের আনাচে-কানাচে। যাতায়াত যত্রতত্র। এক সময় সভ্যতা এমনই ছিল। সভ্যতার সেই সময়ে যখন-তখন যত্রতত্র যাতায়াতের সুযোগ নিয়ে রেড ইন্ডিয়ানদের কাবু করে আমেরিকা দখল করেছিল ইউরোপীয়রা। কিন্তু আজকের আধুনিক সভ্যতা নামের রাজনীতি, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সীমানা মানুষের পরমানন্দে ঘুরে বেড়ানোর সেই সুযোগকে রুদ্ধ করে দিয়েছে।
শুধু কি ঘোরাঘুরির পথই রুদ্ধ হলো? ঘুরতে ঘুরতে নিকট অতীতে যারা আমেরিকায় থিতু হয়েছেন, এখন নাকি তাদেরও বের করে দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন এখন তাই বলছে। যাদের বের করে দেওয়া হবে তারা নাকি অবৈধ। সুদূর অতীতে যারা আমেরিকাতে পত্তনি গড়েছিলেন কিংবা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যারা আছেন, আমেরিকাতে শুধু তারাই থাকবেন। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে গৃহযুদ্ধের পর আমেরিকা পুরো বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানানোর যে নীতি গ্রহণ করেছিল, ট্রাম্পের আজকের হুংকার সেই নীতির একেবারেই পরিপন্থী।
ইতিমধ্যে গত এক বছরে বহু মানুষকে দেশ ছাড়া করা হয়েছে। স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে, মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে আরও বহু মানুষ মা-বাবা ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বোধশক্তিতে সংকট থাকলেও আমেরিকার সাধারণ মানুষের বোধশক্তি ততটা ভোঁতা নয়। তাঁরা ভালো করেই জানেন, সরকারের অভিবাসী তাড়াও নীতি পুরো আমেরিকাতে তীব্র সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে এসেছে, গণহারে অভিবাসীদের তাড়ানো হলে আমেরিকার নিঃসঙ্গ প্রবীণদের দেখভাল করার লোকের অভাব দেখা দেবে। সংবাদটিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমেরিকার আদমশুমারি ব্যুরোর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক নয় শতাংশের (৪৭ দশমিক আট মিলিয়ন) বয়স ৬৫ টির ঊর্ধ্বে। শুধু কি তাই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০৬০ সালে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯৮ দশমিক দুই মিলিয়নে, যার মধ্যে ১৯ দশমিক সাত মিলিয়নের বয়স হবে ৮৫ বা তার ঊর্ধ্বে। এর অন্যতম কারণ, আমেরিকানদের গড় আয়ু বাড়ছে।
এ অবস্থায় আমেরিকার সাধারণ নাগরিকদের অনেকে যথার্থভাবেই ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা শুরু করেছেন। এ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ গিয়ে হামলা করতে পারে, এই আশঙ্কায় পত্রিকাটি ডালাসের ৯৩ বছর বয়সী এক নারী ও তাঁকে দেখভাল করা নারীর পরিচয় প্রকাশ করেনি। বৃদ্ধার আশঙ্কা, তাঁকে দেখভাল করা ম্যাক্সিকান অনিবন্ধিত নারীকে বহিষ্কার করা হলে তিনি সমূহ বিপদে পড়বেন। একই রকম প্রশ্ন তুলেছেন আরও অনেকে। অনিবন্ধিত অভিবাসীদের তাড়ানো হলে বয়স্কদের দেখভাল করবে কে?
প্রশ্নটি খুবই সংগত। কারণ আমেরিকার স্বাস্থ্যখাত ও বয়স্কদের সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকাংশেই অভিবাসীকর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। নিউইয়র্কের গবেষণা সংস্থা পিএইচআইয়ের (পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট) শুমারি বলছে, আমেরিকায় নার্সিং হোমগুলোতে সেবাদানকারী কর্মীদের প্রতি চারজনের একজনই অভিবাসী।
সুতরাং ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসী তাড়াও নীতিতে অটল থাকলে আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে অচিরেই বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে। আর এই সংকট শুধু ব্যক্তির জীবনকেই প্রভাবিত করবে না; বরং সংক্রমিত হয়ে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও অনাকাঙ্ক্ষিত সংকটের সৃষ্টি করবে।