জেবিবিএ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র জড়িতদের কঠোর শাস্তি হবে

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনকে (জেবিবিএ) ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের করপোরেশন নিয়মকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করবেন।
বক্তারা বলেন, যারা সংগঠনকে ধ্বংস করতে নানা অপচেষ্টায় জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘প্রকৃত’ ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কেউ যাতে আর এই সংগঠনের সদস্যপদ না পায়, সে জন্য গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে কাজ করবেন উপদেষ্টা ও অ্যাডহক কমিটির সদস্যরা।
১৫ ফেব্রুয়ারি জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আয়োজিত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে এসব কথা বলেন জেবিবিএর অ্যাডহক কমিটি ও করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান মহসীন ননী, সদস্য মোহাম্মদ পিয়ার, মোহসীন মিয়া, রহমান ফরিদ ও কাজী মন্টু এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ পিয়ার, মোহসীন মিয়া ও আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম। তাঁদের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন খামারবাড়ী গ্রুপের অন্যতম সদস্য হারুন ভূঁইয়া।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফাহাদ সোলেমান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ সেলিম হারুন, ব্যবসায়ী হোসেন সোহেল রানা, জাহাঙ্গীর মোল্লা সানি, মোহাম্মদ নমী, কামরুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মহসীন ননী বলেন, বিগত কমিটির গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপে কেবল সংগঠনের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন হয়নি, সংগঠন পরিচালনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সংগঠনকে গতিশীল রাখতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাডহক কমিটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনকে তাঁরা সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নির্বাচন কমিশনের কিছু সদস্যের অতি দ্রুত নির্বাচন করার মনোভাবই সব ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হন।
কাজী মন্টু অভিযোগ করেন, সংগঠনের সাবেক কমিটি গঠনতন্ত্রের কোনো তোয়াক্কা না করেই তড়িঘড়ি একটি নির্বাচন করার জন্য বিশেষভাবে তৎপর হয়ে উঠেছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সাবেক কার্যকরী কমিটির ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করে নির্বাচন কমিশন। গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী অ্যাডহক কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক দিন পূর্বে মনগড়া অজুহাতে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় বিগত কমিটি। এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেই লক্ষ্যে কোম্পানি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রহমান ফরিদ অভিযোগ করেন, বিগত কমিটি শুধু অনিয়ম করেই ক্ষান্ত হয়নি, সংগঠনের তহবিল পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। এ জন্য তারা ব্যাংক হিসাবও পরিবর্তন করেছে। অবশ্য আইনি কারণে সে ব্যাংক হিসাব এখন জব্দ আছে। যারা সংগঠনকে ধ্বংস করার সব ধরনের অপচেষ্টায় জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন ফরিদ।
আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম বলেন, কোম্পানি আইন না জানলে যা হয়, জেবিবিএর বিগত কমিটির সেই দশাই হয়েছে। জেবিবিএ থেকে জেবিবিএ এনওয়াই গঠনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে দিদার বলেন, জেবিবিএর অতীত কার্যক্রমের কোনো হদিস না পাওয়ায় আইনি জটিলতা এড়াতেই সংগঠনের সদস্যদের সম্মতিতে জেবিবিএ এনওয়াই নামে নতুন করপোরেশন গঠন করা হয়। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাই ‘এ’ করপোরেশনের মূল চালিকাশক্তি। গত চার বছরে পরিচালনা পর্ষদে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে পরবর্তী পরিবর্তন ছাড়া বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সদস্যরাই সংগঠনের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। প্রকৃত সদস্যের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন একটি কার্যকরী কমিটি গঠনের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন বারবার নাকচ করে দেওয়ায় সংগঠনের বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সদস্যপদ বাছাই কমিটির ৫ সদস্যের মধ্যে মাত্র একজনের স্বাক্ষরেই সদস্যপদ চূড়ান্ত করার তথাকথিত প্রক্রিয়া থেকেই তা টের পাওয়া যায়।
জেবিবিএর সাবেক কর্মকর্তা হারুন ভূঁইয়া বলেন, কিছু ‘উড়ন্ত’ ব্যবসায়ীর লোভের শিকার হয়েছে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি-আমেরিকান ব্যবসায়ীদের প্রাণের সংগঠন জেবিবিএ এনওয়াই। তিনি বলেন, অর্থের জোরে সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ দখলের অপচেষ্টা রুখতে হবে। যাঁরা সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন তাঁদের জন্য কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে। ফাহাদ সোলেমান জেবিবিএ এনওয়াইকে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।