ফ্লোরিডায় বন্দুক হামলা

‘কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে/বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে।’ কবির সুমনের গান, যার উৎসভূমি বব ডিলানের ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’। কবির সুমন ডিলানের গানটিকে হুবহু রাখেননি। কিছুটা সংক্ষেপিত করেছেন। বাংলায় শ্রুতিমধুর করতে করেছেন কিছুটা রূপান্তরও। তারপরও সুমনের গানে ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নগুলো যথেষ্টই তীক্ষ্ণ। তবে তা বব ডিলানের ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’-এ করা প্রশ্নগুলোর মতো চাঁছাছোলা নয়। ডিলান অনেক বেশি সরাসরি। চোখে চোখ রেখে তিনি বলে দিচ্ছেন, ‘রাষ্ট্র তুমি ভান করছ’।
কথা হচ্ছে, কেন কবির সুমন, কেনইবা বব ডিলান প্রসঙ্গ? উত্তর বুঝে নিতে একবার ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে ঘুরে আসতে হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে নিকোলাস ক্রুজ নামের ১৯ বছরের এক তরুণের বন্দুক হামলায় ১৭ জনের মৃত্যুর খবর এখন সবার জানা। এ ঘটনায় আহত হন আরও ১৪ জন। মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এসেছিল বিভীষিকা হয়ে।
আমেরিকায় বন্দুক হামলা অবশ্য নতুন কিছু নয়। বিষয়টা অনেকটা এমন যে ইচ্ছা হলেই যে কেউ বন্দুক হাতে জনসমাগমস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলা চালাচ্ছেন। এ জন্য এমনকি কোনো পূর্বশত্রুতারও প্রয়োজন নেই। এতটাই সহজ বন্দুক হামলা। শুধু ফেব্রুয়ারিতেই আমেরিকায় সাতটি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। বড় বন্দুক হামলার ঘটনা দিনে দিনে বাড়ছে আমেরিকায়। নিউইয়র্ক টাইমস-এর তথ্যমতে, আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১০ বন্দুক হামলার তিনটিই ঘটেছে গত পাঁচ মাসের মধ্যে। এই তিন হামলায় মারা গেছে ১০১ জন। দিনে দিনে মহামারির রূপ নিলেও এই বন্দুক হামলা রোধে তেমন কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়নি মার্কিন প্রশাসন।
অন্যবারের মতো এবারও হামলার পর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। নিয়ম মেনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটার পোস্টে হামলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি ‘গভীর’ সমবেদনা জানিয়েছেন। হামলার দুই দিন পর এফবিআইয়ের গড়িমসিকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বন্দুক নিয়ন্ত্রণ বা এ ধরনের হামলার স্থায়ী সমাধানে কোনো উদ্যোগ বা তেমন কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা চটতে পারেন এমন কোনো বক্তব্য তাঁর কাছ থেকে এবারও আসেনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসনের ধারাটি অব্যাহত রেখেছেন। তিনি শুনেও শুনছেন না। দেখেও দেখছেন না। তাই ডিলানের প্রশ্নটিই ফিরে আসছে। কোনো সাহিত্যিক আড়াল না খুঁজেই ডিলান বলছেন, ‘চিরতরে নিষিদ্ধের আগে, ঠিক কতবার কামান দাগা প্রয়োজন?’ ডিলান জানতেন এই প্রশ্ন; এই কামানের গোলায় সৃষ্ট কান্না; সহজে কানে ঢোকে না রাষ্ট্রের। তাঁর ভাষায়, ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তর তো জানা’। কিন্তু এই চেনা প্রশ্নের জানা উত্তরটিই বারবার এড়িয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। আর তা হলো, আরও কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন; সাধারণের নিরাপত্তার প্রশ্নে যা এখনই করা প্রয়োজন।