চাকরি হারিয়েও লক্ষে্য অটল ছিলেন নজরুল

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম

আমেরিকার আর্থিক সেবা খাতে প্রবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। বাণিজ্য-দর্শনের সেরা দেশ আমেরিকায় দাপটের সঙ্গে নিজের পেশায় সুনাম ও খ্যাতই অর্জন করেছেন এই প্রবাসী। তিনি ১৯৮৬ সালে পর্যটক ভিসায় আমেরিকায় আসেন।
কার্ড কানেক্টের (ফার্স্ট ডেটা কোম্পানি) বিক্রয় নির্বাহী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তাঁর কোম্পানির অংশীদারমূলক প্রতিনিধি। আমেরিকায় নিজের জীবন সংগ্রাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিন সন্তানের জনক মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিসকে বলেন, ‘আমি পর্যটক ভিসায় আমেরিকায় এসে প্রথমেই একটি পিৎজার দোকানে চাকরি। কিন্তু কাজে ভালো করছিলাম না বলে দোকানের মালিক আমাকে প্রথম দিনই চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। আমি ভাবলাম আমাকে দিয়ে এই কাজ হবে না।’
নজরুল বলেন, ‘এরপর ব্রঙ্কসে ব্রঙ্কস মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টালে তিনি আট বছর কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক জেরার্ল্ড বার্নার্ড বেশ উদার মানুষ ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠান আমাকে স্পনসর করে। আমেরিকার লেবার ডিপার্টমেন্ট থেকে লেবার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বৈধ
অভিবাসীর মর্যাদা না পাওয়া পর্যন্ত ব্রঙ্কসের এই
প্রতিষ্ঠানে কাজ করি।’
নজরুল জানান, তিনি ফাইন্যান্সের ছাত্র ছিলেন। তাই বৈধতা পেয়েই তিনি এ সংক্রান্ত কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। প্রশিক্ষণ শেষে নেমে পড়েন কাজে।
নজরুল বা তাঁর কোম্পানি কী ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্টোরে মার্চেন্ট সার্ভিস দেওয়াই তাঁর কাজ। তাঁর মূল কাজ হল ক্রেডিট কার্ড টার্মিনালে প্রসেসিং সার্ভিস দেওয়া। টার্মিনাল সার্ভিস কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনে সংযোগ করা যায়। ভিসা, মাস্টারকার্ড, ইবিটি, ক্রেডিট কার্ডসহ সব ধরনের গ্রহণযোগ্য কার্ড টার্মিনাল সার্ভিস প্রসেসিংয়ে ঢোকানো হয়, যেখানে কার্ডের ব্যবসায়িক তথ্য থাকে।
এই বাংলাদেশি বলেন, এ ক্ষেত্রে তাঁকে মেট্রো কার্ড, ভিসা মাস্টারকার্ড প্রসেসিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তিনি ব্যাংক আমেরিকা থেকে প্রসেসিং সার্ভিসের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। তিনি সিটি ব্যাংক, ফার্স্ট ডেটা, চেইজ ব্যাংক, ব্যাংক আমেরিকা, হার্টল্যান্ড পেমেন্ট সিস্টেম, ওয়ার্ল্ডপে ইত্যাদিতে অ্যাকাউন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। তিনি ভেল ভিউ হাসপাতালে, নিউইয়র্ক কেয়ার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৫ সালে এই পেশায় এসে কী ধরনের সাফল্য পেয়েছেন এমন প্রশ্নে নজরুল বলেন, ‘এখানে আমি স্বাধীন। আমিই আমার বস। এ পেশায় আমি আশাতীত সাফল্য পেয়েছি।’
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার স্ত্রী নিউইয়র্ক বোর্ড এডুকেশনে কর্মরত। তাদের প্রথম সন্তান কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল সাইকোলজি (পিএইচডি), দ্বিতীয় সন্তান সুনি আপস্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবং তৃতীয় সন্তান স্টাভাস্যান্ট হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন।
নতুন প্রজন্ম তথা বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য নজরুলের পরামর্শ কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু ব্যাংকিং সার্ভিস ভিসা-মাস্টার কার্ড প্রসেসিং কোম্পানি এবং বিক্রয় প্রতিনিধি জড়িত। সবাই মার্চেন্ট সার্ভিস প্রসেসিংয়ের লাভের অংশীদার। যদি কেউ এই পেশায় আসতে চান, তবে তাদের লম্বা সময় দিতে হবে এবং বিভিন্ন কোম্পানির জন্য পৃথক পৃথক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যেমন ভিসা, মাস্টার কার্ড কোম্পানির ডিসকাউন্ট রেট অনলাইনে দীর্ঘ তথ্য পাওয়া যায়, যাকে ইন্টারচেঞ্জ বলা হয়।
যে কেউ আসতে চাইলে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিতে হবে
এবং এ ধরনের জটিল কাজ করার মানসিকতা ও ধৈর্য থাকতে হবে।
অভিবাসী এই বাংলাদেশি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন এ পেশায় আছি, কিন্তু এখনো শিখছি। তবে ভালো করলে এই পেশা বেশ লাভজনক এবং সম্মানজনক।