কঠোর অস্ত্র আইন নয় 'সশস্ত্র শিক্ষক'-এ সমাধান!

ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের হাইস্কুলে বন্দুক হামলায় ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গোটা আমেরিকার শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। আরও কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবি তাদের। এ নিয়ে স্কুলে ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে তারা। তাদের এই দাবি শুনেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। কিন্তু তিনি এই দাবির বিষয়ে কিছু না বললেও, স্কুলগুলোর শিক্ষকদের সশস্ত্র করে একটি সমাধান হিসেবে হাজির করেছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্কুলশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সশস্ত্র করার কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর অস্ত্র আইনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ট্রাম্প এ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। তিনি বরং ‘সশস্ত্র শিক্ষক ও কর্মকর্তা’র তত্ত্ব হাজির করে নিরাপত্তার একটি সম্ভাব্য সমাধান তুলে ধরেন, যা ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনকেই (এনআরএ) পৃষ্ঠপোষকতার শামিল।

অথচ ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতার অতীত পরীক্ষাকে আরও জোরদার করার পাশাপাশি বয়সসীমাকেও আরও কঠোর করা হবে। কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষমতায় যাওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এর কিছুই করা হয়নি।
সর্বশেষ ফ্লোরিডার স্কুলে হামলাটি করেছিলেন নিকোলাস ক্রুজ নামের ১৯ বছরের এক তরুণ। হামলায় তিনি এআর-১৫ রাইফেল ব্যবহার করেন, যা তিনি কিনেছিলেন এক বছর আগে। অর্থাৎ বিয়ার কেনার বয়স হওয়ার আগেই ক্রুজ একটি প্রাণঘাতী রাইফেল কিনতে পেরেছিলেন। এই বিষয়টিই এখন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আইনপ্রণেতারা বলছেন, প্রাণঘাতী রাইফেল ক্রয়ের ক্ষেত্রেও বয়সসীমা ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ করা হবে, যেমনটা রয়েছে হ্যান্ডগান ও অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে। তবে সিনেট এমন কোনো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন তৈরিতে আগ্রহী নয় বলে ২১ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছে।
এদিকে এনআরএ-র মুখপাত্র ডানা লোয়েশ বলেছেন, অস্ত্র খাতও চায় হুমকি হতে পারে এমন মানসিক সংকটগ্রস্তদের অস্ত্র থেকে দূরে রাখতে। কর্তৃপক্ষেরও উচিত সতর্কচিহ্নগুলো শনাক্ত করে নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া।
ফ্লোরিডা হামলার পর থেকেই ব্যাপক চাপে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতে শুধু সমবেদনামূলক বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরে মর্মান্তিক এই ঘটনায় নিহতদের শেষকৃত্যের সময় তাঁর গলফ খেলার খবর বেরোলে এই সমালোচনা আরও তীব্র হয়। একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে পড়েন শিক্ষার্থীদের তোপের মুখেও। পুরো আমেরিকা এখন এ নিয়েই উত্তাল রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত হয় ‘লিসেনিং সেশন’। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ৪০ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে ফ্লোরিডা হামলায় বেঁচে যাওয়া ছয় শিক্ষার্থীও ছিল। ছিলেন ২০১২ সালে স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে হওয়া বন্দুক হামলায় নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মার্ক বার্ডেনও। ট্রাম্প তাঁদের সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তাঁর হাতে এ সময় একটি কার্ড ছিল, যেখানে লেখা ছিল, ‘তোমরা তোমাদের কোন অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে শোনাতে চাও? আমি শুনছি।’
বৈঠকে অস্ত্র ক্রয়ে বয়সসীমা বাড়ানো, বন্ধ হওয়া মানসিক হাসপাতালগুলো আবার চালু করাসহ প্রয়োজনীয় যেকোনো উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত বলেও জানান ট্রাম্প। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি সাধারণ রাইফেলকে প্রাণঘাতী করে তুলতে সক্ষম ‘বাম্প স্টক’ নিষিদ্ধ করতে বিচার বিভাগকে নির্দেশনা দেন ট্রাম্প। রূপান্তরিত আগ্নেয়াস্ত্র নিষিদ্ধের পথে বাম্প-স্টক ডিভাইসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি আদেশে সই করেন তিনি।
ফ্লোরিডার এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান বিতর্ক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাম্প-স্টক বিক্রি বেআইনি করার দাবির সঙ্গে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় পক্ষ একমত পোষণ করে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি বাম্প-স্টকের মতো যন্ত্র অবৈধ ঘোষণা করে একটি আইন প্রণয়ন করতে বিচার বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহসের স্বীকৃতি দিতে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘খুব শিগগির’ বাম্প-স্টক নিষিদ্ধের ঘোষণার নতুন নির্দেশিকা চূড়ান্ত করতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।