মুহূর্তে ভাইরাল যে ছবি!

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রদর্শিত সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার নতুন প্রতিকৃতির সামনে এমন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে শিশুটি। বেন হাইনস নামের এক ব্যক্তি ছবিটি তোলেন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রদর্শিত সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার নতুন প্রতিকৃতির সামনে এমন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে শিশুটি। বেন হাইনস নামের এক ব্যক্তি ছবিটি তোলেন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

দুই বছর বয়সী পার্কার কারিকে কিছুতেই বাগে আনতে পারছিলেন না মা। ছবি প্রদর্শনের গ্যালারিতে ছুটে বেড়াতে চাইছিল সে। হঠাৎ এক নারীর বিশালকায় প্রতিকৃতির সামনে থমকে দাঁড়াল সে। একেবারে নট নড়নচড়ন। মা তার হাত ধরে টেনেও সরাতে পারছিলেন না। সে মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। মোহাবিষ্টের মতো তাকিয়ে রইল সেই ছবির দিকে। অভিব্যক্তিতে ফুটে ছিল বিস্ময়, শ্রদ্ধা, ভয়।

কাল রোববার ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়, এমন এক দৃশ্য দেখে মুঠোফোনে তা বন্দী না করে পারলেন না গ্যালারিতে আগত এক দর্শক। সেই ছবিই এখন ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

যে নারী প্রতিকৃতির সামনে দুই বছরের শিশুটি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল, তিনি আর কেউ নন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।

পার্কারের মা জেসিকা কারি বলেন, ‘সে এমনভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিল যে আমি টেনেও সরাতে পারছিলাম না।’

পার্কার ছবির সামনে এমন মোহাবিষ্টের মতো দাঁড়িয়ে ছিল যে ওই সময় পাশ থেকে এক ব্যক্তি ছবি তুলে নিলেও সে টের পায়নি। আলেকজান্দ্রিয়ার বাসিন্দা বেন হাইনস (৩৭) নামের ওই ব্যক্তি পরে ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেন এবং তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে তিনি ছবিটি মুঠোফোনে তোলেন।

ছবিটি পরে বিশ্বজুড়ে অজস্রবার শেয়ার, লাইক, টুইট ও রিটুইট হয়। এমনকি মিশেল ওবামাও ছবিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে ভুল করেননি। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি চোখে হৃদয়ের ছবি আঁকা ইমোজি একটি নয়, তিনটি ব্যবহার করেন। অনেকেই লেখেন, তাঁরা পার্কারের প্রতিক্রিয়া দেখে মিশেল ওবামার ওই প্রতিকৃতি দেখতে আগ্রহী হচ্ছেন।

এক ব্যক্তি টুইট করেন, ‘এটাই আমেরিকা। এই ছোট্ট মেয়েটি এখন মিশেল ওবামার মতো কারও মতো হতে স্বপ্ন দেখতে পারে।’

আরেকজন টুইট করেন, ‘হতাশার খবরের চেয়ে এমন সুন্দর কিছু দেখেই আমি কাঁদতে চাই।’

মিশেল ওবামা তাঁর এই ছবি আঁকানোর জন্য পছন্দ করে নেন বাল্টিমোরের শিল্পী অ্যামি শেরাল্ডকে। এই প্রতিকৃতি প্রকাশের সময় মিশেল ওবামা বলেন, শিল্পী যখন ছবিটি আঁকছিলেন, তখন তিনি ছোট ছোট মেয়ের কথা ভাবছিলেন, মেয়েদের রঙিন জীবনের কথা ভাবছিলেন।

এদিকে শিশুপার্কারের মা তাঁর মেয়ের ছবি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অভিভূত। তিনি জানান, তিনি ভাবতেই পারেননি ছবিটি লোকজন এত পছন্দ করবে। তিনি বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য!’

বারাক ওবামা বা মিশেল ওবামার বিষয়ে পার্কার কিছু জানে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন তার মা। প্রতিকৃতিটা দেখার সময় পার্কার ভেবেছিল, এটা গল্পের কোনো রানি।

এমন একটি ছবি তুলতে পেরে দারুণ খুশি হাইনস। তিনি বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান যে ওই সময় সেখানে ছিলাম।’ তবে ছবিটি তোলার পর লোকের ভিড়ে পরে পার্কার ও তার মাকে আর খুঁজে পাননি তিনি। পরে ছবিটি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন এই আশায়—হয়তো শিশুটির মা ছবিটি এক সময় দেখতে পাবে।

ছবিটি বিশ্বজুড়ে এত দ্রুত ‘ভ্রমণ’ শুরু করে যে তা ঠিকই পৌঁছে যায় পার্কারের মায়ের কাছে।

পার্কারের মা খুব কমই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। বন্ধুদের মাধ্যমে ছবির খবর পেয়ে বেন হাইনসের সঙ্গে পরে যোগাযোগ হয় পার্কারের মায়ের।

রাতারাতি খ্যাতি পাওয়া পার্কারের মনোভাব কী? তা জানলে যে-কেউ হতাশ হবেন!

তার নানি তাঁকে এখন আদর করে ‘স্টার (তারকা)’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন এবং এতে প্রবল আপত্তি জানাচ্ছে পার্কার। তার ধারণা, তার আকৃতি নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে। তাই যতবার স্টার নামে ডাকা হয়, ততবার সে বলে ওঠে, ‘আমি স্টার নই, আমি বড় মেয়ে।’