বসন্ত এখানেও মুগ্ধতা ছড়ায়

সীমানা কিংবা মানচিত্র বদলালেও অক্ষুণ্ন থাকে বসন্তের রং
সীমানা কিংবা মানচিত্র বদলালেও অক্ষুণ্ন থাকে বসন্তের রং

পৃথিবীর নানান দেশে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে। কিন্তু সেটা দেখার চোখ আর মন কি সবার থাকে? ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত! ছয় মৌসুমে ছয়বার রূপ পাল্টায় প্রকৃতি। আহা! কি তার সৌন্দর্য! আহা মরি মরি! সবুজের দেশ, ফুলের দেশ, ফলের দেশ, গান-কবিতার দেশ বাংলাদেশ। আমরা অনুভব করি, বাংলাদেশের মতো প্রকৃতির লীলা বৈচিত্র্যের এমন সমারোহ পৃথিবীর আর কোথায় আছে?
সেই বাংলাদেশ থেকে আমরা অভিবাসী হয়ে এসেছি নিউইয়র্কে। এখন আমাদের দেশ আমেরিকা। বিশাল এক দেশ। ৫০টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে এই দেশ, যার কোন কোন স্টেট বাংলাদেশের চেয়েও বড়। বিশাল হলে কী হবে, ঋতু বৈচিত্র্যে দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে যে পিছিয়ে! আমেরিকায় মোট চারটি ঋতু। গ্রীষ্ম, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। এই দেশে কাঙ্ক্ষিত সময় হলো গ্রীষ্মকাল। বিশেষ করে গরমের দেশের মানুষ আমরা তুষারপাত আর কনকনে ঠান্ডায় মোটেও অভ্যস্ত নই।
দীর্ঘ শীত মৌসুম আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। তবে রাত না থাকলে দিনের আলো যেমন আকাঙ্ক্ষিত মনে হতো না, তেমনি শীতের তীব্রতার কারণে গ্রীষ্ম এমন আদরণীয় এই দেশে। নিউইয়র্কের সামার অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল যেন সবুজের সমারোহ। এমন সবুজ আলোভরা দিনে কেউ ঘরে থাকতে চায় না। গ্রীষ্মের ঠিক বিপরীত চেহারা নিয়ে শীত আসে প্রকৃতিতে।

শীত মৌসুমে এখানে পাখির ডাক নেই। গাছে পাতা নেই, ফুল নেই, রোদ নেই, মাঠে ঘাস নেই। তাপমাত্রা বাড়তেই চায় না। হু হু ঠান্ডা বাতাস বয়। কখনো তুষার পাত। এ দেশের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েরা শীত ঋতুকে পছন্দ করে। তুষারপাত হলে আনন্দে ভেসে যায়। আমরা যেমন শৈশবে শিলাবৃষ্টি হলে আনন্দে ভেসে যেতাম। সবাই মিলে ছুটতাম উঠানে, বাড়ির কাছে মাঠে। শিলা সংগ্রহ করতাম মনের আনন্দে। এই দেশের শিশুদের সেই আনন্দের অভিজ্ঞতা কখনো হবে না।

আমেরিকায় গ্রীষ্মে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত হতে হয় শুধু। চোখ ফেরানো দায়। প্রকৃতিতে রং তুলি দিয়ে কোন এক অদৃশ্য শিল্পী যেন ছবি এঁকে দিয়ে যায়, যা স্পর্শ করা যায় না, শুধু উপভোগ করতে হয়। নিউইয়র্কের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে খুব বেশি দূরে যেতে হয় না। শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পার্ক, আর সেখানে মনোলোভা ফুলের সমাহার। গাছে গাছে সবুজ পাতা, চোখে আরাম দেয়।

শীতের পর ধীরে ধীরে বসন্ত আসে প্রকৃতিতে। ঝরে যাওয়া গাছের পাতায় আবার কুঁড়ি গজাতে থাকে। ফুল ফুটে, পাখিরা ফেরে। ছোট দিনগুলো আবার লম্বা হয়। চারদিক ভরে যায় ফুলে ফুলে। কি যে আনন্দ চারদিকে! বাড়ির বাগানে শাক-সবজি ফলানোর ধুম পড়ে যায়। আলস্যের আবরণ ছিঁড়ে মানুষ আবার কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হয়। সমুদ্রতীরে ছোটে স্বাস্থ্যসচেতনরা। নারীদের পোশাক ছোট হতে থাকে। প্রকৃতি যেমন খোলস বদলে নতুন রূপে বেড়িয়ে আসে তেমনি সৌন্দর্যের পেখম তোলে নারীও। 

প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে কত মিল। কারণ মানুষ তো প্রকৃতির অংশ। সবুজ বন-বনানী যেন নতুন আভায় উদ্ভাসিত হয়। পাতার রং পাল্টায়, দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে। নিউইয়র্কে শুধু ফুল নয়, পাতা যেন দ্রষ্টব্য অনেকের কাছে। একেক মৌসুমে পাতার একেক রং। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কে এই সময় গেলে হৃদয়-প্রাণ-মন বিমোহিত হয়ে ওঠে।
নিজের বাড়ির উঠানে ফুলের-ফলের-সবজির বাগানও কি কম মুগ্ধতা ছড়ায়? মনে হয় যেন বাংলাদেশের কোন মফস্বল বাড়ির উঠানে আছি। মনটা ভরিয়ে দেয়। মাটির সঙ্গে মানুষের সেকি নিবিড় মায়ার সম্পর্ক। আমেরিকায় বাঙালিরা নিজের বাড়িতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাটির সঙ্গে মিতালি পেতে কি সুন্দর বাগান করে। অন্যরা তাদের বাগান পরিদর্শন করতে এসে মুগ্ধ হয়।
শুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করতে হলে গাছপালা চাই। সুস্থ জীবনের জন্য নির্মল বাতাস চাই। নিউইয়র্কের মতো গাছপালা নেই বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে। গাছ কেটে সেখানে উঁচু ভবন হচ্ছে। সেই ভবনের বাসিন্দারা বাড়ির ছাদে বাগান করছে। বারান্দায় টবে গাছ লাগাচ্ছে। পৃথিবীর সব মাটি সুফলা। তাইতো পৃথিবী এত সুন্দর আর সবুজ।